পরিবেশ রক্ষায় গ্রীন ব্যাংকিং!!
লিসান আসিব খান
পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের সুসমন্বিত রূপই হলো সুস্থ পরিবেশ।পরিবেশকে উপেক্ষা করে পৃথিবীতে কিছু করা সম্ভব নয়। প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত সমাজ ব্যবস্থার অংশ হতে পারে না। সমৃদ্ধ অর্থনীতির জন্য প্রকৃতির আনুকূল্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। জলবায়ু ও পরিবেশ যদি বিপন্ন হয় তাহলে অর্থনীতিও বিপন্ন হতে বাধ্য। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে বিশ্ব পরিবেশ যখন হুমকির মুখে পড়েছে, ঠিক তখনই অর্থনীতিতে গ্রীন ব্যাংকিং ধারণার প্রচলন হয়েছে।
মানুষ এখন ইকো বান্ধব এবং নৈতিক ব্যবসার বিনিয়োগ করে বিশ্বে ইকো-সবুজ স্টক মার্কেট আঁকার উপায় খুঁজছে।
গ্রীন ব্যাংকিং হল পরিবেশ সহায়ক একটি উপায় – একটি ইকো বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং পদ্ধতি ।এটি এক ধরনের নীতিগত ব্যাংক, যা সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ এবং টেকসই ।
পৃথিবীজুড়েই সবুজ আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে। এই আন্দোলন পরিবেশ বাঁচানোরআন্দোলন।এখন আমরা যে পদ্ধতিতে ব্যাংকিং করছি তা পুরোপুরিই কাগজনির্ভর। আমাদের উচিত কাগজের উপর নির্ভরশীলতার হার কমানো।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় , একটি কার্ডে গ্রাহকের স্বাক্ষর নেওয়া হলো,এরপর স্ক্যান করে ঐ কার্ডটি অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্মের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হলো। এটা হল হার্ড কপি। এর বাহিরে শুধুমাত্র চেক-এর জন্য কাগজ ব্যবহৃত হবে ।
মূলত অনলাইন আর আইটি সেক্টরের ওপর নির্ভর করে কাজ করাটাই হলো গ্রীন ব্যাংকিং,আর এভাবেই ধীরে ধীরে ব্যাংকিং সেক্টরে কাগজের ব্যবহার কমে আসবে। 2009 সালে একজন কর্মী ব্যাখ্যা করেন যে , কেবল কর্মদিবস শেষের দিন তাদের কম্পিউটার বন্ধ রাখা যায় তবে 7.3 মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুত এবং 3.1 মিলিয়ন কিলোগ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইডেরনির্গমন সংরক্ষণ করা যাবে ।
প্রথম সবুজ ব্যাংক পরিবেশগত দায়িত্ব উন্নয়নের লক্ষে নিম্ন সুদের হার প্রস্তাব করে বাণিজ্যিক প্রকল্পের জন্য, যেটা সবুজ বিল্ডিং সার্টিফিকেশন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় মার্কিন গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিলের নেতৃত্ব দ্বারা।
ব্যাংক গ্রাহক একটি কারেন্ট একাউন্ট অথবা গ্রীন টাকার বাজার অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে গ্রীন ব্যাংকিং মিশনে প্রবেশ করে ।
গ্রীন ব্যাংকিং এর মূল আদর্শ :
- মূলত সবুজ ব্যাংকিং যথাসম্ভব কাগজের অপচয় এড়াতে সাহায্য করে এবং অনলাইন বা ইলেক্ট্রনিক লেনদেন উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করে । যত কম কাগজের ব্যবহার হবে ততো কম গাছ নিধন হবে ।
- একটি পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা যা আমাদেরকে পরিবেশগত ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
- ব্যাংকসমূহের কাজ হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব কাজের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা ও তাদেরকে সম্পৃক্ত করে বিশ্বকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বসবাস উপযোগী করে তোলা ।
- বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, , নদী ভাঙন অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জন্য কম সুদে ঋণ ব্যবস্থা করা।
- ব্যাংকের পরিবহন কাজে পেট্রোল, ডিজেল, অকটেনচালিত গাড়ির বদলে প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি করা ।
- গ্রীন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমনসামগ্রী বর্জন করে পরিবেশ বান্ধব নতুন নতুন গ্রীন সামগ্রী ব্যবহার করে পরিবেশগত সমস্যা দূর করা ।
- পরিবেশের বিরোধী শিল্প ও ব্যবসায়ে ঋনের হার কমানো এবং ঋণের একটি নির্দিষ্ট অংশ পরিবেশ বান্ধব শিল্প ও ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা।
- পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব খাতে অর্থায়ন করা ।
- বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানির ব্যবহার কমানো ।
- সৌরশক্তি, বায়োগ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি করা ।
- শিল্প কল-কারখানায় বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা ।
গ্রীন ব্যাংকিং এর মধ্যে রয়েছে : টেকসই ব্যাংকিং , নৈতিক ব্যাংকিং , সবুজ বন্ধকী , সবুজ ঋণ, সবুজ ক্রেডিট কার্ড, সবুজ সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, সবুজ অ্যাকাউন্ট চেক, সবুজ সিডি, সবুজ অর্থ বাজারের অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং , দূরবর্তী আমানত (আরডিসি) ইত্যাদি।
পরিবেশবান্ধব অর্থাৎ গ্রিন ব্যাংকিং এর সেবার উপর করে সম্প্রতি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০টি ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করেছে।
সেরা ১০টি ব্যাংক হলো :
- শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক
- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক,
- ডাচ্-বাংলা ব্যাংক,
- ব্যাংক এশিয়া,
- ইস্টার্ন ব্যাংক,
- ইসলামী ব্যাংক,
- মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক,
- প্রাইম ব্যাংক,
- পূবালী ব্যাংক ও
- ট্রাস্ট ব্যাংক।
গ্রীন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিবেশের উন্নতির জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও গ্রাহক সবাইকে সমন্বিতভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয় গোটা সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্রীন ব্যাংকিং কর্মসূচিকে সফল করে তুলতে পারেন।