গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটির প্রকৃতি ও পরিবেশের সান্নিধ্যে একদিন
শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ আরো সঠিক ভাবে বললে শ্রাবণের ২৮ তারিখ,ভরা বর্ষা মৌসুম। আকাশ ভয়ঙ্কর রকমের গুমোট,এর আগের রাত থেকেই বৃষ্টির দাপট সকালে সেই দাপট একটুও না কমে বরং বেড়েছে বহুগুণে। এমনই এক সকালে শাবিপ্রবির প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একমাত্র সংগঠন ‘গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি’র তত্ত্বাবধনে আমরা রওনা হই দেশের একমাত্র সাইট্রাস বা লেবু জাতীয় ফল গবেষণা কেন্দ্র সাইট্রাস রিসার্চ সেন্টার, শ্রীপুর পিকনিক স্পট ও প্রকৃতি কন্যা হিসেবে পরিচিত জাফলং এবং জাফলং এর অদূরেই অবস্থিত ‘সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণা’ দেখার উদ্দেশ্যে।
আমাদের প্রথম গন্তব্য জাফলং এর অদূরেই অবস্থিত জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র যেটি ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের একমাত্র সাইট্রাস (লেবু জাতীয় ফল)গবেষণা কেন্দ্র। এটি ১১৯ একরের ছোট-বড় পাহাড়-টি্লা বিশিষ্ট ভূমি যেখান থেকে হাত ছোয়া দূরত্বে রয়েছে ভারতে মেঘালয় রাজ্য। ঘন্টা দেড়েক মানে আনুমানিক ১০.৩০ মিনিটে আমরা সাইট্রাস গবেষনা কেন্দ্রে পৌছে যাই এবং ওখানকার একজন স্টাফের তত্ত্বাবধনে গবেষণা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক কাজ, বিভিন্ন নতুন জাতের ফল (বলে রাখা ভালো,নাম সাইট্রাস সেন্টার হলেও এরা অন্যান্য ফল নিয়ে গবেষণা করে থাকে) ও আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকি।
শুধু ভ্রমণ করলেই তো হবে না, ভ্রমণের জন্য তো শরীর ও মনে শক্তি থাকা চাই। আর সেই জন্যই সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র হতে ১২ টায় রওনা দেই শ্রীপুর পিকনিক স্পটের উদ্দেশ্য,দুপুরের খাবারের লক্ষ্যে। আধ ঘন্টার দূরত্বে এসে খাবার ব্যবস্থা হলে, এবার পালা চারপাশটা ঘুরে দেখার। চারপাশটা সুন্দর,গোছানো এবং বিশেষ সৌভাগ্য হরিণের দেখা পাওয়া।
শরীর ও মনে শক্তি আছে,আগের মতোই মেঘ ও বৃষ্টি আছে কিন্তু এখান থেকেই শুরু আসল দূর্ভোগের। রাস্তার অবস্থা যে বেহাল! এর উপর মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল যখন বাসে যেতে যেতে দেখলাম মাত্র দু-দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে গ্রামের পর গ্রাম,স্কুল,খেলার মাঠ তলিয়ে গিয়েছে।
যেতে যেতে ওপারের পাহাড়ের বুকে আটকে থাকা মেঘরাজি ও অসংখ্য ঝরণা মনকে কিছুটা সান্ত্বনা দেবার চেষ্টাটা বৃথা যায় নি। প্রত্যাশা মতো সময়েই প্রকৃতি কন্যা জাফলং পৌছালাম। কিন্তু কে জানতো এখানে নতুন দূর্ভোগ আসন্ন! সেখনকার ‘খেয়া সিন্ডিকেট’ নদী পাড় হতে প্রতি নৌকায় স্বাভাবিকের চেয়ে পাচ-ছয় গুণ ভাড়া চাচ্ছেন। অনেক দফা-রফার পর প্রায় আড়াই গুণ ভাড়ায় নদী পাড় হয়ে (নৌকা ভাড়া যদিও ৪০০ টাকা কিন্তু আমাদের থেকে (ঐ দিন সবার কাছ থেকেই এরকম নিয়েছে পাহাড়িঢলে নদীর পানি বাড়ায় ১০০০ টাকা নিয়েছে) আমরা পৌছাই আমাদের শেষ গন্তব্যে নাম যার ‘সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণা’।
ঝর্ণার অভিজ্ঞতা মিশ্র,যখন দেখবেন বিশাল পানির ধারা স্বমহিমায় উপর থেকে নিচে পড়ছে যে কারো মন এটাতে ভাল হতে বাধ্য বিপরিতক্রমে যখন দেখবেন ঝর্ণার একেবারে পাদদেশ হতে বিশাল গর্ত করে পাথর তুলে নেয়া হয় যেটা কিনা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং এর ফলশ্রুতিতে ঝর্ণার সুবিশাল পাথর খন্ডের স্থানচ্যুতি ঘটে যেটি কিনা পর্যটকদের জন্য মারাত্বক ঝুকিপুর্ণ। ঝর্ণায় ভাল কিছু সময় কাটিয়ে আমরা বিকাল ৫ টায় ফিরতি পথে রওনা দেই।
সর্বশেষ ‘গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি’র সাথে ‘ভ্রমনের পাশাপাশি শেখা’ তত্ত্বে অসাধারণ একটা দিন কাটিয়ে ঘরে ফেরা।