
মানুষের স্বার্থই প্রাণী ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রধান কারণ
মোঃ সাইফুল ইসলাম সোহেল
মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর পর মানুষ যাতে টিকে থাকতে পারে সেজন্য আরও অনেক প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। দিয়েছেন সবুজ-শ্যামলে সুশোভিত গাছপালা, নয়নাভিরাম বনজঙ্গল, নদীভরা জল, গাছভরা ফল আরও কত কি! কিন্তু মানুষ স্বার্থে আঘাত লাগে এমন ক্ষেত্রে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়। তারা তখন ধ্বংসাত্বক কাজে লিপ্ত হয়।
প্রাণী ও পরিবেশ যখন ধ্বংস হয়, মানবতাবাদী কিংবা পরিবেশবাদী সংগঠন কোথায় যায় তখন? যেখানে মানুষের মূল্য নাই সেখানে মানুষ কিভাবে দিবে প্রাণীর মূল্য? কি করবে তখন এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার কিংবা পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো? বর্তমান সভ্য জগতে সভ্যরাই মেতেছেন ধ্বংসাত্বক কাজে। যুদ্ধ-বিগ্রহ করে নষ্ট করছেন শান্তি-শৃঙ্খলা। যুদ্ধ বাঁধলে আমরা হিসেব করি শুধু মানুষ কত মারা গেল। কিন্তু একবারও কি ভাবি সেখানকার মানুষবাদে অন্যান্য প্রাণী কিংবা গাছপালা তথা পরিবেশ ধ্বংসের কথা!
আগেই বলেছিলাম আমরা মানুষ নিজেদের স্বার্থে আঘাত লাগলেই কথা বলি অন্যথায় না। ছোটবেলায় নিজ হাতে অনেক কুকুর, বিড়াল মেরেছি, বনবিড়াল মেরেছি। এখনও মনে পড়ে একটা শেয়াল মারার জন্য আমাদের গ্রামের ছেলেরা প্রায় তিন কিলোমিটার দৌঁড়েছি। শেষে শেয়াল মেরে কয়েকজনে সেটা কাঁধে তুলে নিয়ে বীরের বেশে গ্রামে প্রবেশ করেছি। অনেক বাহ্ববা কুড়িয়েছিলাম সেবার! বাড়ি বাড়ি চাল, টাকা তুলে ভুড়িভোজও করেছিলাম!
কেন শেয়াল মেরেছি জানেন? আমাদের শেখানো হত এসব প্রাণী মুরগীর ডিম খায়, হাঁস-মুরগী ধরে খায়। ঘুমাতে না চাইলে ভয় দেখানো হত এইযে বাঘ এল, কুমীর এল। না ঘুমালে তোমাকে ধরে আস্ত গিলে ফেলবে।
এখনও আমাদের শেখানো হয়না এদের সুন্দর গুণের কথা। আমাদের বইপত্রে তুলে ধরে প্রাণিদের ক্ষতিকর দিক। এরা রোগ ছড়ায়, কর্কশ শব্দ করে কাক, সাপের বিষে মানুষ মরে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর বাঁদুড় তুমি একটু সচেতন হতে পারনা! যেভাবে নিপা, ইবোলা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য অপরাধী হচ্ছো দেখো তোমাকে ঠেকানোর জন্য আবার গাছের মূল পর্যন্ত তুলে ফেলার সমন জারি না হয়!
আমাদেরকে প্রাণিদের ভালোদিক শেখানো হয় খুবই কম। সম্প্রতি ভারতীয় পত্রিকা জাগরণে প্রকাশিত হয়েছে ফিলিপাইনের আলোগাপো শহরে ইঁদুর মারতে পারলে পুরষ্কার মিলবে! বড় ইঁদুরের জন্য ১০ পেসো যা ভারতীয় রুপিতে ১৪ এবং বাংলাদেশী মূল্যে ১৭.৭২টাকা। ছোটগুলোর জন্য দিবে ৫ পেসো। শহরটির স্বাস্থ্য প্রশাসক জেমি আলকানো বলেছেন তারা লেপ্টো¯পাইরোসিসকে প্রতিরোধের জন্য আগস্ট মাসব্যাপী এই কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। ইঁদুর লেপ্টো¯পাইরোসিসের বাহক। সুতরাং মারতেই হবে? আমাদের ছোটবেলায় ধান ক্ষেতে ইঁদুরের গর্ত দেখানো হত। ক্ষতির পরিমাণ পড়ানো হত বইপত্রে। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণী অতিবাহিত করে ভেটেরিনারিতে পড়তে এসে জানলাম হাজার হাজার বাদামী ইঁদুর ব্যবহার হচ্ছে নতুন কোন ঔষধের ট্রায়াল দেয়ার জন্য। এভাবেই আমাদের অজান্তে হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচিয়েও চলছে এই প্রাণিগুলো। আমার অনেক পাড়া-প্রতিবেশীদের বলতে শুনি বনবিড়াল দিয়ে কি হবে? সেটা কি খাওয়া যায়! খাওয়া আর সরাসরি টাকা উপার্জন করা যায় এমন প্রাণিগুলো ব্যতিত অন্যান্যদের মূল্য কিসে? কে শেখাবে তাদের? কে সচেতন করবে গ্রামে গ্রামে পাড়ায় মহল্লায় গিয়ে? শিক্ষিতদেরও যে শেখানো হয়নি পশু-পাখি ও পরিবেশ নিয়ে। জানেন তাদেরকেও বোঝাতে হয়!
আমাদের দেশে এখন গাছ পুড়িয়ে ইটভাটা চালিয়ে বড় বড় অট্টালিকা হচ্ছে। পাহাড় কেটে নিজেদের আবাস্থল গড়ছে মানুষ। আজ থেকে চার বছর আগেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে যে পাহাড়গুলো দেখতে যেতাম এখন আর সেগুলো নাই। অনেক মালিক জন্মেছে পাহাড়ের! এসেছে অনেক স্বনামধন্য বিল্ডার্স। সত্যিকারার্থে প্রাণি-পাখির বিলুপ্তিরোধে পরিবেশ রক্ষায় মানুষ তার স্বার্থকে ছাড়তে পারছেনা। তাই নিজেদের অস্তিত্বকে হুমকীর মুখে ফেলতে দ্বিধাবোধ করছেনা।
লেখক: চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)
Email: sohelsaiful13405@gmail.com