
হাইব্রিড ধান চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে
হাইব্রিড জাতীয় ধানের মাধ্যমে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ধান বেশি পাওয়া যায়। যে কারণে দীর্ঘ ৪ বছর পর হাইব্রিড ধান চাষ তার জনপ্রিয়তা ফিরে পাচ্ছে। মূলত ধানের উচ্চমূল্যের কারণে হাইব্রিড ধানের চাষ কমে গিয়েছিল। বীজ ব্যবসায়ীদের মতে, চাহিদা না থাকার কারণে এ জাতের ধানের চাষ কম হয় এবং কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়, চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি বছর ৩.৫% করে ৬.৩৫ লাখ মেট্রিক টন হাইব্রিড ধান উৎপন্ন হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ রাজস্ব অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৮.১৩ লাখ মেট্রিক টন। এরপর সর্বোচ্চ ফলন হয় ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ৬.৮৫ লাখ মেট্রিক টন।
একটি শীর্ষস্থানীয় বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সুপ্রীম সীড কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং বিক্রেতা মোহাম্মদ মাসুম জানান, ‘কৃষকরা সাধারণত সেইসব ক্ষেতে বেশি জায়গা বরাদ্দ করে যেখানে শস্য উৎপাদনে লাভ বেশি। যখনই ধানের দাম বাড়তির দিকে দেখা যায়, তখন তারা হাইব্রিড ধানের দিকে আগ্রহী হন। হাইব্রিড এবং প্রকৃতিগত উদ্ভাবিত ধানের দামের তারতম্যের কারণই মূলত হাইব্রিড ধান চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে’। তিনি আরো বলেন, বিগত দশকে হাইব্রিড ধানের বীজের দাম বাড়েনি, যা কৃষকের আগ্রহের আরেকটি অন্যতম কারণ।
হাইব্রিড ধান চাষের এ পুনর্জাগরণে বীজ বিক্রয় খাত প্রায় ১০০০ কোটি টাকার লাভের মুখ দেখবে। বর্তমানে প্রায় ১০০ সরকারী এবং ব্যক্তিগত অংশীদার, কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৮,০০০ ডিলারের মাধ্যমে হাইব্রিড ধান, গম, সবজি, মশলা ইত্যাদির বীজ বিক্রয় করে থাকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সীড আসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক আসাদুল আমিন দাদন বলেছেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, ‘খবরটি অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু শুধুমাত্র একটি বছরের পরিসংখ্যানেই কৃষকরা পুরোপুরি হাইব্রিড ধান চাষে ঝুঁকে পড়বেন এমন উপসংহারে যাওয়া সঠিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কৃষকরা সময়মত প্রকৃতিগত ধান চাষে ব্যর্থ হয়ে হাইব্রিড ধান চাষ করছেন’।
বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (বীজ উইং) জনাব আনোয়ার ফারুক বলেন, ‘হাইব্রিড ধান সম্পর্কে দিন দিন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। সারাবছর হাইব্রিড সবজি চাষের ফলে সকলেই একে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। হাইব্রিড ধানের চাষ বৃদ্ধি পেলে চাষযোগ্য জমিগুলো অন্যান্য ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা যাবে’। সরকার এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সহায়তা দেবে বলে আশ্বাস ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে হাইব্রিড ধান চাষের বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে আশার ইঙ্গিত বহন করে। সেই সাথে সরকার এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি যাতে বীজ কেনা থেকে শুরু করে চাষাবাদ এবং সঠিক মূল্যপ্রাপ্তি পর্যন্ত কৃষক যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হন।
তথ্যসূত্রঃ দ্যা ডেইলী স্টার