পতঙ্গের জীবনধারা; সৃষ্টির বিস্ময়! – পর্ব-১

শাওন চৌধুরী

প্রাণীকুল যে কতোটা বৈচিত্রময় সেটা ভালো করে খেয়াল না করলে বোঝা যাবেনা। সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ৩০ লক্ষ প্রজাতির প্রাণি পাওয়া যায়, এর সিংভাগ, শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই হচ্ছে পতঙ্গ শ্রেণির। এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পতংগগুলো সম্পর্কে মজার কিছু তুলে ধরতে চেস্টা করবো আমরা। চলুন তবে শুরু করা যাক…

১. লাঠির মতোন এক ধরণের পতঙ্গ পাওয়া যায় যারা কিনা গাছের কান্ড বা পাতার সাথে এমনভাবে মিশে থাকে যে এদের আলাদা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। দেখতে লাঠির মতোন হবার কারণেই এদের নাম হয়েছে স্টিক ইনসেক্ট। পরিণত হবার পরে এরা এদের জীবনের বেশিরভাগ সময় গাছেই কাঁটায়।stick insect

এদের ডিম পাড়ার পদ্ধতি খুবই অদ্ভুত। গাছের কান্ডের সাথে আটকে থাকা অবস্থাতেই এরা ডিম পাড়ে এবং ঐ ডিম নীচের নরম মাটিতে এসে পড়ে। ডিমগুলো দেখতে অনেকটাই গাছের বীজের মতোন হয় আর এর মাথায় এক ধরণের মিষ্টি পদার্থ থাকে যার কারণে কিছু পিঁপড়া এদেরকে খাবার মনে করে নিজের বাসায় নিয়ে যায় এবং পরে দেখে এটা খাবার কোন কিছু নয়! তখন এরা হাল ছেড়ে দেয়।stick insect egg

আরেকদিকে ঐ গাছের নীচে থাকলে হয়তোবা এসব ডিম নানান শিকারী প্রাণির পেটে যেত কিন্তু পিঁপড়াগুলো নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার কারণে ডিমগুলো নস্ট হবার আর তেমন একটা ভয় থাকে না। ঐ আবরণের ভেতরেই ডিমের নানান দশার রুপান্তর হতে থাকে এবং একসময় আবরণ ভেদ করে বাচ্চাগুলো বের হয়। বের হবার কিছু সময় পরেই এরা আবার গাছের মাথায় উঠে যায়।

২. ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমিতে এক ধরণের বিটল (Blister Beetle) পাওয়া যায় যারা কিনা নিজেরাই গর্ত করে বাস করে। বিপরীত লিঙ্গের একই সদস্যের সাথে মিলনের পরে এরা নিজেদের গর্তে এসে ডিম পাড়ে। প্রায় ছয় সপ্তাহ পরে এসব ডিমগুলো লার্ভাতে পরিণত হয় এবং কিছুদিনের মধ্যেই ঐ বাসা ত্যাগ করে নিকটস্থ এক ছোট্ট ঘাসের ওপরে এসে আশ্রয় নেয়।blister beetle

মজার ব্যপার হচ্ছে এখানে একটা সদস্য না বরং গ্রুপের সবাই এসে একসাথে জমা হয় এবং একসাথে জমাট বেঁধে থাকে যা দেখতে অনেকটাই থলের মতোন মনেহয়। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে এদের এখানে অপেক্ষা করার সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। কোন কিছু এদের অবস্থানের কাছে আসলেই এরা ঐ বস্তুর সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে কিন্তু যেকোন কিছুর সাথে যুক্ত হওয়াই এদের মূল উদ্দেশ্য নয় বরং নির্দিষ্ট কিছুর সাথে যুক্ত হয়ে কোন নির্দিষ্ট স্থানে যাবার জন্যই এরা অপেক্ষারত থাকে।blister beetle egg

এসব মরুভূমিতে আবার এক ধরণের মৌমাছির দেখা মেলে। মিলনের সময় স্ত্রী সদস্য এক ধরণের গন্ধ নিসৃত করে যার ফলে পুরুষ সদস্য বুঝতে পারে যে স্ত্রী সদস্য মিলনে আগ্রহী। একারণে সে স্ত্রী সদস্য দ্বারা নিসৃত গন্ধের দিকে ধাবিত হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, ঐ লার্ভাগুলো এদের শরীর থেকে এমন এক ধরণের গন্ধ নিসৃত করে যা কিনা স্ত্রী মৌমাছি কতৃক নিসৃত সেক্স ফেরোমনের মতোন।

আর লার্ভাগুলো যেহেতু একসাথে থাকে আর সবাইই ঐ ফেরোমন নিসৃত করতে থাকে একারণে ঐ পুরুষ মৌমাছিটি লার্ভাগুলোর গায়ে এসে পড়ে। তখন লার্ভাগুলো মৌমাছিটির শরীরের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। কিছু সময় পরে মৌমাছিটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে উড়ে চলে যেতে চায় এবং তখনই বুঝতে পারে যে হঠাৎ করেই এদের শরীর ভারী হয়ে গেছে।

তখন এরা নীচে নেমে কিছু সময় স্থির হয়ে থেকে আবার উড়তে থাকে এবং স্ত্রী সদস্যটিকে খুঁজে বের করে। খুঁজে পাবার পরে স্ত্রী সদস্যটির সাথে মিলনে আবদ্ধ হয়। মিলনের সময়কালে পুরুষ সদস্যের গা থেকে লার্ভাগুলো স্ত্রী সদস্যের শরীরে যায়। মিলন শেষে স্ত্রী মৌমাছিটি পুরুষ সদস্য কতৃক শুক্রাণু গ্রহন করে এদের বাসায় ফিরে যায় এবং ডিম পাড়ে।

তখন ঐ লার্ভাগুলো ঐ বাসাতেই আশ্রয় নেই এবং এখানে তার খাবারের কোন অভাব হয় না। মজার বিষয় হচ্ছে, ঐসব মৌমাছিগুলো নানান ফুলে ঘুরে তাদের পেছনের পায়ে থাকা পোলেন বাস্কেটে করে যেই মধু সংগ্রহ করে সেগুলো খেয়েই ঐসব লার্ভাগুলো বড় হয়। মাঝে মাঝে এরা ঐসব মৌমাছির ডিমও খেয়ে থাকে। পরিণত হবার পরে এরা বাসা থেকে বের হয়ে যায়, এভাবেই এদের জীবনচক্র চলতে থাকে।

চলবে…

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics