পতঙ্গের জীবনধারা; সৃষ্টির বিস্ময়! পর্ব – ২
শাওন চৌধুরী
গত পর্বের পর…
৩। আমরা অনেকেই আমাদের চোখের সামনে রঙ-বেরঙের হরেক রকমের প্রজাপতি দেখি। কেউ কেউ আবার এদের সম্পর্কে একটু বিস্তারিতও জানতে চেষ্টা করি। তবে, এদের মধ্যেই এমন কিছু প্রজাতির প্রজাপতি আছে যাদের জীবনচক্রের কিছু ঘটনা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
এটা প্রায় আমাদের সবারই জানা যে প্রজাপতির জীবনচক্রে ৪ টি দশা আছে- ডিম, শূককীট, মূককীট ও পূর্ণাংগ প্রজাপতি। ডিম থাকা অবস্থায় এরা এক স্থানে স্থির থাকে, শূককীটে রূপান্তরিত হবার পরে এদের অনেক খাবারের প্রয়োজন পড়ে, মূককীট অবস্থায় এরা একস্থানে স্থির থাকে এবং পরিণত অবস্থাতে এরা আবার উড়ে উড়ে বিভিন্ন ফুলে বসে মধু খেতে থাকে।
লাইক্যানিডি পরিবারের অধীনে অনেক প্রজাতির প্রজাপতি আছে যারা কিনা ‘নীল প্রজাপতি’ নামে পরিচিত। এদের মধ্যে কিছু প্রজাপতির জীবনচক্র খুবই অদ্ভুত। সাধারণত, প্রজাপতি তাদের জীবনচক্রের ৪ টি দশা একস্থানেই সম্পূর্ণ করে কিন্তু এদের ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম দেখা যায়। এরা শূককীট থাকা অবস্থায় কিছুদিন অতিক্রম করার পরে গাছের পাতা থেকে পড়ে যায়।
এই অবস্থাতে এরা এমন এক ধরণের ফেরোমন নিঃসৃত করে যা কিনা কিছু বিশেষ প্রজাতির পিঁপড়ার শূককীটের গন্ধের মতোন। একারণে গন্ধ পেয়ে ঐ পিঁপড়াগুলো শূককীটটির কাছে চলে আসে এবং সাথে করে
বাসায় নিয়ে যায়। এখানেই শূককীটটি পিঁপড়াগুলোর প্রতিরক্ষায় বড় হতে থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে হাজার হাজার পিঁপড়ার শূককীটের মধ্যে প্রজাপতির শূককীটের সংখ্যা মাত্র কয়েকটি যার কারণে হঠাৎ করে দেখলে বোঝার উপক্রম থাকেনা । যদিও আকারে এগুলো অনেক বড় হয়।
এভাবে কিছুদিন যাবার পরে ঐ পিঁপড়ার বাসাতে এক ধরণের স্ত্রী বোলতা ডিম পাড়ার জন্য প্রবেশ করে এবং উত্তম স্থান হিসেবে প্রজাপতির শূককীটগুলোকেই বেছে নেয়। হূল ফুটিয়ে এরা শরীরের ভেতরে ডিম ঢুকিয়ে দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। কিছু কিছু পিঁপড়া বাঁধা দিতে চেষ্টা করলেও আকারে অনেক ছোট হবার কারণে ব্যর্থ হয়।
এই অবস্থায় শূককীটটি একসময় মূককীটে পরিণত হয় এবং কিছু দিনের মধ্যেই কোকুনে্র মধ্যে পরিণত হয়ে যায়। কোকুন ছেড়ে বের হয়ে এরা বাসা থেকে বের হয়ে আবার গাছের ওপরে চলে যায়। তখন এদের পাখা ভেজা থাকার কারণে অনেক সময়ে বসে থাকতে হয়। কোকুনের মধ্যে এদের শরীরের তুলনায় পরিবেশ অনেক ছোট হবার কারণে এদের গুটিসুটি হয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। বের হয়ে পাখা শুকানোর পরে এরা আবার অন্যান্য প্রজাপতির মতোন উড়তে পারে।
প্রজাপতিতো বাসা থেকে বের হয়ে গেল তাহলে ঐ বোলতার ডিমের কী হলো? এরাও একইসাথে ঐ কোকুনের মধ্যেই বড় হতে থাকে এবং প্রজাপতির বের হয়ে যাবার কিছু সময়ের মধ্যে এরা কোকুন থেকে বের হয়ে যায় এবং পিঁপড়াগুলোর বাসা ত্যাগ করে। এভাবে এক বাসাতে তিন প্রজাতির (পিঁপড়া, বোলতা ও প্রজাপতি) প্রাণির জীবনচক্র চলে।
চলবে…