পরিযায়ী পাখি নিয়ে কয়েকটি মজার তথ্য!

মোঃ সাইফুল ইসলাম

প্রত্যেকটি পাখিই পরিযায়ী পাখি হিসেবে পরিচিত। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন পাখির দেখা মিলে যায়। আমাদের দেশে পরিযায়ী পাখিকে অতিথি পাখি বলা হয়ে থাকে। যদিও অতিথি পাখি ও পরিযায়ী পাখি একই কথা নয়। পৃথিবীর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১৮৫৫টি প্রজাতি অর্থাৎ শতকরা প্রায় ১৯ ভাগ পাখিই পরিযায়ী। আজ পাখি পরিযান সম্পর্কে বেশকিছু মজার তথ্য দেয়ার চেষ্টা করব।

১। Migratory শব্দটি ল্যাটিন Migratus থেকে এসেছে। এর অর্থ হল ‘পরিবর্তন’ এবং এটি নির্দেশ করে পাখিরা কিভাবে বিভিন্ন মৌসুমে তাদের ভৌগলিক অবস্থান পরিবর্তন করে।

২। পাখি পরিযান সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছায় বসন্ত ও শরৎকালে। তবে আমাদের দেশে শীতের শুরুতেই নতুন নতুন পাখি আসতে দেখা যায়। তবে বাস্তবতা হল বছরে ৩৬৫ দিনই পরিযাণ ঘটে। পাখি কখন পরিযান করে তা পাখির প্রজাতি, আবহাওয়া, খাদ্যপ্রাপ্তি, প্রজনন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে।

৩। পরিযায়নকাল খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় (Hyperphagia)। ফলে তাদের শরীরের চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। এই চর্বি পরবর্তীতে ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়। কিছু পাখির ওজন সপ্তাহান্তেই দ্বিগুণ বাড়তে পারে!

৪। একটানা পরিযায়ন কয়েক সপ্তাহ থেকে চার মাস পর্যন্ত হতে পারে।

৫। বাজপাখি, সুইফট বার্ড, হাঁস কিংবা বিভিন্ন জলজ পাখি সকালের দিকে পরিযান করে। অপরদিকে গায়ক পাখিরা রাতে করে থাকে। মূলত শিকারের কবল থেকে বাঁচতেই তারা এ্মন সময়কে পছন্দ করে। এছাড়া এই সময়ে সূর্যের তাপমাত্রাও কম থাকে।

৬। পাখিরা উড্ডয়নের সময় তারা, সূর্য, বাতাসের গতিপথ, ভূমিরূপ ব্যবহার করে নির্দিষ্টস্থানে গমন করে। এছাড়াও পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Migratory Birds at Tanguar Haor

৭। এরা প্রায় দৈনিক প্রায় ১৫ – ৬০০ মাইল বা তার থেকেও বেশি দূরত্ব পরিযায়ণ করতে পারে।

৮। সাগর, মহাসাগরের উপর দিয়ে পরিযানকালে একবার উড়ে প্রায় ১০০ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় বাতাসে ভেসে থাকতে পারে।

৯। পরিযায়ী পাখিদের পাখা লম্বা হয়ে থাকে।

১০। এরা ১৫ – ৫০ মাইল/ঘন্টা বেগে উড়তে পারে। তবে এটি প্রজাতি, বাতাস ইত্যাদির উপর নির্ভর করে কম বেশি হতে পারে।

১১। সাধারণত পাখিরা ২০০০ ফুট উচ্চতা দিয়ে পরিযান করে। তবে বাধা, ভূমিরূপ কিংবা বাতাসের ধরনের জন্য ২৯০০০ ফুট উচ্চতা দিয়ে উড়ার কথাও জানা যায়।

১২। হামিংবার্ড প্রজাতির মধ্যে রুফস (Rufous) প্রজাতির হামিংবার্ড সবচেয়ে বেশি দূরত্ব পর্যন্ত পরিযান করতে পারে, প্রায় ৩০০০ মাইল পর্যন্ত।

১৩। Sterna paradisaea বা আর্কটিক টার্ন নামক পাখিরা সবচেয়ে লম্বা দূরত্ব পর্যন্ত পরিযান করতে পারে। যা মোটামুটি প্রায় ২২০০০ মাইল।

পরিযায়ী পাখি অথবা আমাদের বলা ও জানা অতিথি পাখি তাদের ভ্রমণকালে নানা ধরনের বিপদের সম্মুখীনও হয়ে থাকে। স্বচ্ছ কাঁচের জানালার সাথে ধাক্কা, বিভ্রান্তিকর আলো (রাতের আঁধারে আপনার বাসার বাইরের কিংবা ছাদের পাশের বৈদ্যুতিক বাতি জ্বললে পাখিরা তারার আলো ভেবে পথ ভুল করতে পারে), উড্ডয়নে বাঁধা, শিকার, আবাস্থল হারানো এবং শিকারে পরিণত হওয়া ইত্যাদি।

সাধারণত আমরা জানি শীতকালে ঠান্ডার প্রকোপে কিছুটা উত্তাপ পাওয়ার আশায় আমাদের দেশে অনেক পাখি আসে। জলের বুকে কিংবা গাছের ডালে উড়ে বেড়ায়। শীত শেষে আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে যায়। একটু ভাবুনতো আপনি কোথাও বাঁচার জন্য আশ্রয় নিয়ে দেখলেন আশ্রয়দাতাই আপনার মৃত্যুর কারণ তবে কেমন লাগবে আপনার? আবার ভেবে দেখুন এসব পাখি শিকার ছাড়াই কিন্তু আপনার ৯ – ১০ মাস কেটে গেছে। সুতরাং শীতের এই সব পাখিকে শিকার না করলেও আপনার চলবে।

শিক্ষার্থী – চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics