সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে “ আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস ” পালিত
কিটোপ্রোফেন নিষিদ্ধের দাবি “প্রাধিকার” এর
শকুনকে বলা হয় প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ পাখি। উপকারী এই প্রাণীটি বিলুপ্ত প্রায়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন এর মূল কারণ ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন গবাদিপশুতে বহুল ব্যবহার।বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ থেকে দিন দিন অস্বাভাবিক হারে শকুনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে এরা যে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শকুন কমে যাওয়ার কারণে অ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্ক, যক্ষ্মা, খুরা রোগসহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক সংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা ।
বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, এক সময় দেশে ৭ প্রজাতির শকুন থাকলেও রাজ ও সরুছুঁটি প্রজাতির শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলা শকুনও বিলুপ্তির পথে। উপমহাদেশে পাখি পরিবারের মধ্যে শকুনই একমাত্র প্রজাতি যা পৃথিবী থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। আপনিও নিশ্চয়ই শৈশবে-কৈশোরে শকুনের ওড়াউড়ি দেখেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর আগের মতো এই প্রজাতির পাখিটি দেখা যায় না। বলতে গেলে প্রায় উধাও হয়ে গেছে।
এক সময় এই অঞ্চলে পাঁচটির বেশি প্রজাতির শকুন দেখা যেত। এখন টিকে আছে মাত্র তিনটি প্রজাতি_ হোয়াইট ব্যাকড, লঙ-বিলড, স্লেন্ডার বিলড।
এমন যখন অবস্থা তখন শকুন বাঁচাতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রানী অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন প্রাধিকার এর উদ্যোগে “আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস -২০১৪” পালিত হয়ে গেলো আজ ৭ আগস্ট। এ উপলক্ষ্যে র্যালির আয়োজন করা হয়।এতে উপস্থিত ছিলেন সিকৃবি ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন, প্যারাসাইটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মোঃ জামাল উদ্দিন ভূঁইঞা, জেনেটিক্স এন্ড এনিম্যাল ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহন মিয়া , পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাহবুব, প্রাধিকারের সভাপতি আকাশ কাশনোবিশ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজিম হোসেন অভি, সহ-সভাপতি নুপুর ধর, অপুর্ব বর্মন, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাকিম ফেমাস, যুগ্মসাধারন সম্পাদক চামেলি আক্তার সহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ।
আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রাধিকারের সভাপতি আকাশ খাশনোবিশ বলেন , ” বিশ্বের উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন , অবাধে বন উজাড় , বৃক্ষ নিধন , পযাপ্ত খাদ্যের অভাবে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব থেকে এ প্রানী বিলুপ্ত হচ্ছে । এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে এ প্রানী প্রকৃতি থেকে চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে ।কৃষি ও প্রাণী বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে শকুন সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা আমাদের সকলের একান্ত কর্তব্য ” তিনি বলেন , “Diclofenac “ ও ” “cretopropen “প্রয়োগকৃ্ত অসুস্থ প্রানী মারা যাবার পর দেহে এর কার্যকারিতা জীবিত থাকে এবং ঐ মৃত পশুর মাংস খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় কিডনিতে পানি জমে এবং অল্পদিনেই মারা যায় শকুন মারা যায়। এভাবে চলতে থাকলে দেশের প্রাণীকুল থেকে শকুন নামক পাখি প্রজাতির অবস্থান অতীত ইতিহাস হিসাবে জাদু ঘরে শোভা পাবে।প্রাধিকারের পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারি মনজুর কাদের চৌধুরী বলেন “সরকার এ ঔষুধটি এখনই নিষিদ্ধ না করলে শকুন রক্ষার জন্য বড্ড দেরি হয়ে যাবে।পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে , মেলোক্সিক্যাম পশুকে একই ধরনের রোগের আরোগ্য দেয়।এতে শকুনের ও কোন ক্ষতি হয় না। এ ওষুধের প্যাটেন্ট ও হয়নি ফলে যেকোন কোম্পানি তৈরী করতে অসুবিধা নেই।”
উল্লেখ্য যে, www.vultureday.org রেজিস্ট্রেশনভূক্ত হয়ে “প্রাধিকার” এ দিবস পালন করে।