"পরিযায়ী পাখি দিবস কে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে"- দিলীপ কুমার দাশ
আগামী ৯ ও ১০ মে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস। ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ২০১৩ সাল থেকে যৌথভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে এই দিবস পালন করে আসছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক দিলীপ কুমার দাশ এই আয়োজনের উল্লেখযোগ্য একজন আয়োজক। তিনি বরাবরই তরুণদের এ ধরণের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত করে থাকেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি প্রাণ ও প্রকৃতি বিষয়ক বিভিন্ন কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। একেবারে মাঠ পর্যায়ে নেমে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। শিক্ষকতার মত গুরুদায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পাশাপাশি এখনো তিনি সুযোগ পেলেই ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে দূর-দূরান্তে ছুটে বেড়ান প্রাণের টানে। অনেক তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে তিনি একজন আদর্শ, যাঁকে তারা অনুসরণ করেন। স্যার দিলীপ কুমার দাস ‘বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস’ সম্পর্কে কথা বলতে মুখোমুখি হয়েছিলেন এনভায়রনমেন্টমুভ ডট কম এর। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন এনভায়রনমেন্টমুভ ডট কম-এর প্রধান সম্পাদক তাওহীদ হুসাইন।
এনভায়রনমেন্টমুভ : কেমন আছেন ?
দিলীপ কুমার দাশ : জ্বী, ভালো আছি ।
এনভায়রনমেন্টমুভ : বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস কবে থেকে এবং কী উদ্দেশ্যে পালন করা হয়?
দিলীপ কুমার দাশ : বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস শুরু হয় ২০০৬ সালে। এর মূল উদ্দেশ্য গণসচেতনতা তৈরি করা।
এনভায়রনমেন্টমুভ : শুধুমাত্র পরিযায়ী পাখিদের নিয়েই কেন আলাদা একটা দিবস করা হলো?
দিলীপ কুমার দাশ : পরিযায়ী পাখিরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে আসা-যাওয়া করে। এরা একটা দেশে প্রজনন করে আর শীতকালটা অন্য দেশে কাটায়। তাই পরিযায়ী পাখি অন্য পাখিদের থেকে ভিন্ন। এরা যেখানে বংশবৃদ্ধি করে এবং যেখানে এরা থাকে, এই দুইটি জায়গাই রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। সচরাচর দেখা যায় না আর অন্য জায়গা থেকে এরা আমাদের দেশে আসে বলে, কিছু অসাধু ব্যাক্তি এদের শিকারে নেমে পড়ে। পাখির আসা-যাওয়ার পথটা নিরাপদ রাখা প্রয়োজন। তাদের সংরক্ষণে, মানুষের মধ্যে পাখি শিকার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই মূলত এই দিবস।
এনভায়রনমেন্টমুভ : সর্বপ্রথম কারা প্রথম এই দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেন?
দিলীপ কুমার দাশ : ২০০৬ সালে জাতিসংঘ প্রথম এই দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেয়।
এনভায়রনমেন্টমুভ : আর বাংলাদেশে প্রথম কারা এবং কবে থেকে এই দিনটি নিয়ে কাজ করেন?
দিলীপ কুমার দাশ : বাংলাদেশেও এই দিনটি অনেক আগে থেকে পালন করা হচ্ছে, তবে বিচ্ছিন্নভাবে। যেমন-২০০৭ সাল থেকে কারিতাস, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, মৌলভীবাজার জেলা, বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলেও পালন করা হয়।
এনভায়রনমেন্টমুভ : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে থেকে পালন করা হয়?
দিলীপ কুমার দাশ : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সাল থেকে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তৃতীয়বারের মত এই দিবস পালন করা হচ্ছে।
এনভায়রনমেন্টমুভ : প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ছাড়াও অন্য বিভাগগুলোর অংশগ্রহন কেমন?
দিলীপ কুমার দাশ : আসলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না এই দিবসটি নিয়ে। এর কারণ হয়ত বা অনিচ্ছা অথবা অন্য যেকোন ধরনের ব্যস্ততা, যে কোনো কিছু হতে পারে। তবে মূলত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাই এর সাথে সম্পৃক্ত।
এনভায়রনমেন্টমুভ : বিশেষ এই দিবসটি পালনের উদ্যোগে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন কী?
দিলীপ কুমার দাশ : বাঁধা তো অবশ্যই ছিল। অর্থনৈতিক সমস্যা সহ আরো অনেক অসুবিধা কাটিয়ে অবশেষে আমরা এখন সফলভাবে দিবসটি পালন করতে পারছি।আমাদের মূল বাধা অর্থনৈতিক হলেও আমার মূল শক্তি হল আমার আগ্রহী এবং প্রাণ চাঞ্চল্য পরিপূর্ণ ছাত্র ছাত্রীরা যারা সব সমস্যা কে সহজেই সমাধান করে ফেলে।
এনভায়রনমেন্টমুভ : জাতীয় পর্যায়ে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস কে কীভাবে আরো জনপ্রিয় করা যেতে পারে?
দিলীপ কুমার দাশ : পরিযায়ী পাখি দিবস কে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে । ইচ্ছা আছে এই দিবস পালনের মাধ্যমে পরিবেশের জন্য একটা আন্দোলন গড়ে তোলা, সচেতনতা তৈরি করা। যেমন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই কি পাখি সম্পর্কে জানে? জানে না। দিবস পালনের মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে। এই জানানোর উদ্যোগটা যদি প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া হয়, তাহলে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। এভাবে জাতীয় পর্যায়ে যাবে।
এনভায়রনমেন্টমুভ : এবারের আয়োজনে কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করছে?
দিলীপ কুমার দাশ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নটরডেম কলেজ, ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল আন্ড কলেজ, বাংলাবাজার স্কুলসহ আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করছে। দিবসটি পালন মানে একটা উৎসবের মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জানার তাগিদেই আশেপাশের অনেক স্কুল-কলেজ, যেমন, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল, সেন্ট গ্রেগরী স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা আসে।
এনভায়রনমেন্টমুভ : এবার একটু অন্য প্রশ্নে আসি। জগন্নাথ ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব এর মূল উদ্দেশ্য কী এবং এর চর্চা কেমন হচ্ছে? মাঠ পর্যায়ের কাজ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
দিলীপ কুমার দাশ : ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের প্রতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরন, সংরক্ষনের চেষ্টা এবং সেই লক্ষ্যে গন সচেতনতা তৈরি যা ভবিষ্যতে প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনে রুপ নেবে। যতটা সম্ভব পারা যায়, ততটা গড়ে তোলার বিষয়। অনেক সময় পড়াশুনার চাপে শিক্ষার্থীদের সময় হয়ে ওঠে না। তবে একটা সংঘ বা ক্লাবের সাথে যুক্ত থাকাটা পরবর্তী সময়ে অনেক কাজে লাগে। ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব থেকে আমরা প্রতি মাসে একটা সেমিনারের আয়োজন করে থাকি। যেখানে বিভিন্ন বিষেশজ্ঞরা তাদের গবেষণা নিয়ে কথা বলেন। তাদের মধ্যে আছেন ডলফিন বিষেশজ্ঞ, পাখি বিষেশজ্ঞ , কেউ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেন। কয়েকজন বিদেশি গবেষকও আছেন। শিক্ষার্থীরাও সেমিনার এ কথা বলেন। এর ফলে তাদের দক্ষতা বাড়ে, কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। এছাড়া জনসাধারনের মাঝে ক্লাবের প্রচার বাড়ানোর উদ্দেশ্য আছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করারও ইচ্ছে আছে।
এনভায়রনমেন্টমুভ : জগন্নাথ ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব এর উল্লেখযোগ্য দিকগুলো কী কী?
দিলীপ কুমার দাশ : আসলে জগন্নাথ ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব যেভাবে অপ্রচলিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো পালন করে আসছে, সেভাবে এখন পর্যন্ত কেউ করে নি। তাই এই ক্লাবের বেশ কিছু উল্লেখ করার মত কাজ আছে। যেমন, বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস, বিশ্ব ব্যাঙ দিবস, গতবছর পালন করা হলো বিশ্ব পরিযায়ী মৎস দিবস।
এনভায়রনমেন্টমুভ : ভবিষ্যতে আর কী কী দিবস নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা আছে?
দিলীপ কুমার দাশ : আগামী ২৭ মে বিশ্ব ভোঁদড় দিবস। এই দিবসকে ঘিরে কিছু করার পরিকল্পনা আছে। দিন দিন এমন দিবস পালনের সংখ্যা বাড়ছে, শিক্ষার্থীরাও এসব ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে আরো নতুন কিছু দিবস পালনে কাজ করতে পারবো। পাখি নিয়ে আরও পরিকল্পনার মধ্যে; আমরা আগামী বছর ঢাকা বার্ড রেস করার চেষ্টায় আছি যেখানে মানুষ এক ছুটির দিনে পিকনিকের মত করে বের হয়ে সারাদিন ঢাকা শহরে পাখি দেখে সন্ধায় আমাদের ক্যাম্পাসে মিলিত হবে। এতে যে কোন পাখিপ্রেমী অংশগ্রহন করতে পারবেন।
এনভায়রনমেন্টমুভ : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
দিলীপ কুমার দাশ : আপনাকেও ধন্যবাদ ।