সীসামুক্ত রং এবং পারদমুক্ত দন্ত চিকিৎসার দাবিতে শিশু কিশোরদের মানববন্ধন

জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোররা ২৭ শে সেপ্টেম্বর, শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে অংশ নেয়। ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (এসডো) এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে “সীসামুক্ত রং এবং পারদমুক্ত দন্ত চিকিৎসা”-এর ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি দাবি জানায় এই শিক্ষার্থীরা।

স্কুল, কলেজ, অফিস ও বাসাবাড়িতে শোভার্বধনকারী রং-এ ব্যবহৃত সীসা,শিশুদের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যার প্রভাবে তাদের বুদ্ধির বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হয়, মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায় এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। মানবস্বাস্থ্যের উপর ঝুঁকি জানা সত্ত্বেও সীসাযুক্ত রং বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষই রং-এ ব্যাবহৃত সীসার বিষাক্ততার ব্যাপারটিতে অবগত নয়। শুধু তাই নয়,এই রং আবার একইভাবে খেলনা, অলংকার, আসবাবপত্র এবং খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

শুকনো রং-এর একটি টুকরাও মারাত্মক ক্ষতিকর; বিশেষত শিশুদের জন্য এবং রং-এ উপস্থিত সীসা দ্বারা তারা সহজেই আক্রান্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরাও মতামত দিয়েছেন। এসডো মনে করে, সীসার বিষক্রিয়া বন্ধের একমাত্র উপায় হচ্ছে দূষণের উৎস নির্মূল করা র্অথাৎ, রং-এ সীসার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। উল্লখ্যে, রং-এ উপস্থিত সীসার প্রভাব মানবস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর অত্যন্ত মারাত্মক। সীসা মানুষের শ্বাসতন্ত্র, বৃক্ক,হজম প্রক্রিয়া, প্রজনন এবং শারীরিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে বাঁধার সৃষ্টি করে। সীসা রক্তে অক্সিজেন সরবরাহের মাত্রাকে কমিয়ে ফেলে। সদ্য-ভূমিষ্ট শিশুরা,অপেক্ষাকৃত কম মাত্রার সীসার দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া সীসা শিশুদের মানসিক বিকাশকেও বাঁধাগ্রস্থ করে। মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে পরিবেশে সীসার ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়,যার ফলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বৃদ্ধি ও প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে।


Youth Rally to Ban Lead Paint & Mercury in Dentistry-1b

‘দন্ত চিকিৎসায়,পারদকে না!’
সীসামুক্ত রং-এর পাশাপাশি মানববন্ধনে শিশু-কিশোররা মানুষের ক্ষয়ে যাওয়া দাঁতের চিকিৎসায় পারদ ব্যবহার বন্ধেরও দাবি জানায়। দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পারদ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে,যা থেকে  শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন: মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, শিশুদের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ  হওয়া, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, দাঁতের গঠন দুর্বল হয়ে যাওয়া, স্মায়ুতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেওয়া, গর্ভবতী মায়েদের বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মদান, প্রজনন প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্থ  হওয়া, দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি লোপ পাওয়া, মাথার চুল উঠে যাওয়া, ত্বকের ক্যান্সার ও বৃক্ক নষ্ট হওয়া, শরীরের টিস্যু নষ্ট হয়ে যাওয় ইত্যাদি। “মার্কারি ডেন্টাল অ্যামালগাম” আমাদের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। ডেন্টাল ক্লিনিক থেকে পরিত্যাক্ত অ্যামালগাম যত্রতত্র ফেলার কারণে এ থেকে নির্গত বিষাক্ত মার্কারি মাটি ও পার্শ্ববর্তী জলাধারে গিয়ে মিশছে। এছাড়া মার্কারি বাষ্পাকারে বায়ুতে মিশে সৃষ্টি করছে বায়ুদূষণ। বাষ্পীভূত মার্কারি বাতাসে মিথাইল মার্কারিতে রূপান্তরিত হয়, যা পরবর্তীতে বৃষ্টির মাধ্যমে পানি ও মাটির দূষণ ঘটায়। মাটির মিথাইল মার্কারি গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে, কীতপতঙ্গের বংশ বিস্তার রোধ করে। এমনকি খাদ্য চক্রে মিশে গিয়ে তা আবার মানুষসহ অন্যান্য পশুপাখির শরীরেও প্রবেশ করে। তাই মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কারি ডেন্টাল অ্যামালগাম। এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তেমন  জনসচেতনতা তৈরী না হলেও সারা বিশ্বে বর্তমানে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা ও প্রচারণা। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) এর জন্মলগ্ন থেকেই পরিবেশ ও সামাজিক কল্যাণের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে তাঁরা ডেন্টাল অ্যামালগাম সহ পরিবেশে পারদ নির্গমণ ও দূষণরোধে ২০১১ সাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। বিষ ও দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এসডো সর্বদা পথিকৃত হিসেবে অবদান রেখে আসছে।

মানববন্ধনের পাশাপাশি সীসামুক্ত রং এবং পারদমুক্ত দন্ত চিকিৎসা সম্পর্কিত জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন তথ্য সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়। আগত পথচারী ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা দন্ত চিকিৎসায় পারদ ও রং-এ সীসার ব্যাপক ব্যবহার প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসডোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। পারদ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থমুক্ত একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে এগিয়ে আসার জন্য সকলকে আহ্বান জানান তাঁরা। পরিবেশবান্ধব রং তৈরী এবং দন্ত চিকিৎসাকে পারদমুক্ত করার জন্য দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। তাঁরা সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠতে চায়, সীসা ও পারদের মত বিপদজনক পদার্থের ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে বেড়ে উঠতে চায় না এবং প্রত্যাশা করে বিষাক্ততামুক্ত বাংলাদেশ।
এছাড়া, বিকাল ৩:০০ টা থেকে ৬:০০ টা পর্যন্ত (ধানমণ্ডি ৬এ- ১২এ সড়কে) শিশু-কিশোররা পৃথক পৃথক র‌্যালির আয়োজন করে। এরপর ধানমন্ডির স্পেলবাউণ্ড সেন্টারের উদ্যোগে সীসামুক্ত রং এবং পারদমুক্ত দন্ত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক তথ্য চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে সারাদিনের এই সচতেনতা র্কাযক্রম শেষ হয়। দিনব্যাপী এই সচতেনতা র্কাযক্রমে শতাধিক শিশু-কিশোর ও তাদের  অভিভাবকগণ অংশগ্রহন করেন।

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics