প্লাস্টিক দূষণের কবলে সামুদ্রিক কাছিমেরা
রইসউদ্দিন রাকিব
পরিবেশের উপর প্লাস্টিক দ্রব্যের প্রভাব সম্পর্কে সকলেরই মোটামুটি ধারণা রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমরা সারা বিশ্বের সবাই মিলে প্রতি বছর শুধু সমুদ্রেই ৪ থেকে ১২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক আবর্জনা নিক্ষেপ করি। ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন অ্যাজেন্সী’র হিসাব অনুযায়ী শুধু আমেরিকাই ৩২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপন্ন করে যার মাত্র ৯% পুনর্ব্যবহৃত হয়। বাকি প্লাস্টিক দ্রব্য আবর্জনায় পরিণত হয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে সমুদ্রে ভাসমান প্লাস্টিকের পরিমাণ প্রায় ২,৭০,০০০ টনের মত! সুতরাং সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের জন্য কেবল প্লাস্টিক দূষণই যথেষ্ট। শুধুমাত্র প্লাস্টিক দূষণের কবলে হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ৭০০ সামুদ্রিক প্রজাতির প্রাণি। মূলত এইসব প্রাণিগুলোই ভুলবসত এসকল প্লাস্টিক আবর্জনা ভক্ষণ করছে।এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক কাছিম।
নতুন একটি আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিশ্বের প্রায় ৫২% সামুদ্রিক কাছিম প্লাস্টিক দূষণের কবলে। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ক্যামার স্কুইলার-এর গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য। তিনি তাঁর পরিচালিত গবেষণাটি ‘গ্লোবাল চেঞ্জ বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশ করেন। কাছিমেরা প্লাস্টিকজাত বর্জ্য খাচ্ছে আসলে ভুল বুঝে। যেমন, ভাসমান পলিথিন ব্যাগকে কাছিমেরা জেলি ফিস ভেবে বিভ্রান্ত হয়ে খেয়ে নিচ্ছে! এই সকল বর্জ্য তাদের পেটে গিয়ে পাকস্থলী, অন্ত্রের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে, আর বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করছে।
শুধু সামুদ্রিক কাছিম নয়, সামুদ্রিক পাখিরাও প্লাস্টিক বর্জ্য ভক্ষণ করছে! সামুদ্রিক কাছিমদের মধ্যে Lepidochelys olivacea প্রজাতিটি রয়েছে বিপদ তালিকার সবার উপরে। সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুব চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সেখানে দেখা গেছে গবেষকরা একটি কাছিম পেয়েছেন যার নাকের মধ্যে একটি স্ট্র (পাইপ) ঢুকে নাসারন্ধ্র পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনাটি খুবই হৃদয় বিদারক। ভিডিওটি দেখতে এখানে (https://www.youtube.com/watch?v=4wH878t78bw) ক্লিক করুন।
এভাবে চলতে থাকলে হয়তো ১০০ মিলিয়ন বছর পুরনো এই সামুদ্রিক সরিসৃপেরা একদিন পৃথিবীর বুক থেকে একেবারে হারিয়ে যাবে।