
অব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত সংকট লাঙ্গলবন্দ দূর্ঘটনার মূল কারণ
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব স্নানউৎসবে পদদলিত হয়ে ২৭ মার্চ ২০১৫ তারিখে লাঙ্গলবন্দে ১০জন মানুষ মারা যায়। পবার একটি প্রতিনিধি দল লাঙ্গলবন্দের দুর্ঘটনাস্থলসহ সবগুলো ¯ স্নানঘাট ৩১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সরেজমিন পরিদর্শন এবং পরিবেশগত দিক পর্যবেক্ষণ করে। পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায় বিশাল সংখ্যক পূণ্যার্থীর ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলতা এবং পরিবেশগত সংকটাপন্ন অবস্থার জন্য লাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নানের দূর্ঘটনাটি ঘটেছে। এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে তার জন্য পরিবেশগত সংকট দূর করে ব্যবস্থাপনাগত অবস্থার উন্নতি করতে হবে। আজ ০২ এপ্রিল ২০১৫, বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩ টায়, পবা কার্যালয়ে “লাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নান এলাকার পরিবেশ ও দূর্ঘটনার দায় ও করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্রাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আইন কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. এম শাহ আলম, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পবার নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার তোফায়েল আহমেদ, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক।
ড. মিজানুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, লাঙ্গলবন্দের দূর্ঘটনা দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার ফল। অবকাঠামোগত দূর্বলতা, নদী দখল করে পূণ্যস্থানের জায়গা সীমিতকরণ, সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূর্বলতাসহ নানা কারণে লাঙ্গলবন্দের সংকট আরও ঘনীভ’ত করা হয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণে রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল ভ’মিকা রাখতে হবে।
পবার পর্যবেক্ষণ
নদী দখল ও ভরাট করে স্থাপনা / ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
বাজার এবং আশেপাশের এলাকার বাসা-বাড়ির কঠিন বর্জ্য নদীর পাড়ে ও পয়ঃ বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে নদীতে ফেলা হচ্ছে।
আশেপাশের এলাকার শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য বিভিন্ন খালের মাধ্যমে নদীতে ফেলা হচ্ছে।
নদীর অগভীর হওয়ায় এবং কচুরিপানা দ্বারা পরিপূর্ণ থাকায় নদী নৌ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পুণ্যার্থীদের নৌপথে লাঙ্গলবন্দ আসার কোন সুযোগ নেই। পুণ্যার্থীদের শুধুমাত্র সড়ক পথে লাঙ্গলবন্দ আসা সম্ভব। পুণ্যার্থীরা এক দিক থেকে আসার ফলে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের নিকটবর্তী ঘাটগুলোতে তাদের ভিড় অনেক বেশি। নৌপথে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হলে এ চাপ অনেকাংশে কমে যাবে।ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পুরানো ব্রিজের ভগ্নাংশ নদী থেকে সরিয়ে না নেয়ার ফলে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে।
সভা থেকে নিম্নোক্ত সুপারিশ সমূহ উপস্থাপন করা হয়।
পুণ্যার্থীদের চলাচল এবং ¯œানের সুষ্ঠু ও নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ঐতিহ্যবাহী ¯œানোৎসবকে নিরাপদ ও নির্বিঘœ করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া।
সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া।
নদী খনন করা এবং কচুরিপানা মুক্ত রাখা।
পূণ্য ¯œান করতে আসা পূণ্যার্থীদের খাবার পানি, চিকিৎসা ও টয়লেট সুব্যবস্থা করা, টয়লেটে প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা রাখা।
পুণ্য¯œানের সময় প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা।
প্রশাসন ও ¯œান উৎসব উদযাপন কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন করা।
প্রধান সড়ক এবং ঘাট অভিমুখী পথগুলো দখলমুক্ত করা, পাকা ব্রিজ না হওয়া পর্যন্ত বেইলি ব্রিজ প্রশস্ত করা।
ঘাটের নির্মাণ ত্রুটিগুলো সংশোধন করে ঘাটগুলো নিরাপদ করা।
কঠিন বর্জ্য নদীর পাড়ে ও পয়ঃ বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে নদীতে ফেলা বন্ধ করা।
সিএস রের্কড অনুযায়ী নদীর সিমানা নির্ধারণ করা, অবৈধ স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করা।
শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে খাল/ নদীতে ফেলতে শিল্প মালিকদের বাধ্য করা।
ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পুরানো ব্রিজের ভগ্নাংশ নদী থেকে সরিয়ে নেয়া এবং নদীর গতি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা।