কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গিন পাখা?- প্রজাপতির রঙ্গিন পাখার অজানা রহস্য!
শাওন চৌধুরী
হঠাৎ করে যদি কেও প্রশ্ন করে রঙবেরঙের কোন প্রাণীর নাম বলতে তাহলে নিঃসন্দেহে সবার মনেই প্রজাপতির নাম ভেসে উঠবেত। এতো বেশি রঙের সমাহার আর কোন প্রাণীরই বা আছে! আকারে ক্ষুদ্র হলেও এদের পাখাতে রয়েছে একসাথে নানান রঙের সমাহার যে কারণে দেখলেই মুহূর্তের মধ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়, মনে হয় একবার ছুঁয়ে দিতে পারলে মন্দ হতো না! মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই প্রাণী আকারে ছোট হলেও এদের সম্পর্কে বেশিরভাগ ঘটনাই আমাদের অজানা।
মেলানিন বা এরকম নানান ধরণের পিগমেন্টের কারণে আমাদের বা অন্যান্য অনেক প্রাণীকে আমরা সাধারণত অনেক রঙ্গিন দেখে থাকি। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন যে প্রজাপতির শরীরে এমন ধরণের কোন বর্ণ-কণিকা নেই। অর্থাৎ প্রজাপতির নিজস্ব কোন রঙ নেই! ব্যাপারটি আসলেই অবাক করে দেয়ার মতন। এখন কথা হচ্ছে, তাহলে প্রজাপতির পাখাতে রঙে এতোটা ভিন্নতা আসলো কিভাবে!
সকল প্রজাপতি লেপিডপ্টেরা বর্গের অন্তর্গত। ‘লেপিডপ্টেরা’ হচ্ছে একটি ল্যাটিন শব্দ যা দু’টি গ্রীক শব্দ ‘লেপিস’ ও ‘টেরন’ এর সমণ্বয়ে গঠিত। ‘লেপিস’ অর্থ স্কেল বা আঁশ এবং ‘টেরন’ অর্থ উইং বা পাখা। অর্থাৎ শাব্দিক ভাবে লেপিডপ্টেরা মানে হচ্ছে, আঁশযুক্ত পাখা। এই বর্গের অধীনে আরও একধরণের পতঙ্গ আছে, সেটি হচ্ছে মথ। সুতরাং বলা যায়, মথেরা হচ্ছে প্রজাপতির জাতভাই।
আমরা অনেক সময়েই খেলার বশে কিংবা অন্য কোন কাজে প্রজাপতি ধরেছি বা পাখাতে হাত লেগেছে। সবাইই হয়তো একটা ব্যাপার লক্ষ করেছেন যে, ঐ সময়ে হাতে একধরণের রঙিন কিছু একটা লেগে গেছে! আসলে এগুলোই হচ্ছে প্রজাপতির শরীরের আঁশ। এদের আঁকার এতোটাই ক্ষুদ্র যে, একটা ছোট প্রজাপতির পাখাতে লক্ষ লক্ষ থেকে শুরু করে কোটি কোটি আঁশ থাকে। মূলত এদের কারণেই আমরা প্রজাপতিকে বিভিন্ন রঙে দেখে থাকি। না ভুল পড়েননি, প্রজাপতির রঙের উৎস হচ্ছে এসব আঁশ। প্রজাতিভেদে এসব আঁশের সজ্জাতে অনেক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় যেকারণে যখন আলো এসে পড়ে তা প্রতিসরণ ও বিচ্ছুরণের মাত্রার অনেক বেশি হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। এজন্যই আমরা একেক প্রজাতির প্রজাপতিকে একেক রঙে দেখে থাকি। আলোর এই ধর্মকে ইরিডিসেন্ট বলে।
প্রকৃতপক্ষে প্রজাপতির পাখা হচ্ছে স্বচ্ছ, বর্ণহীন পর্দা যাতে বিভিন্ন ধরণের আঁশ ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সজ্জিত হয়ে আলোর ইরিডিসেন্ট ধর্মের মাধ্যমে নানান রঙের সৃষ্টি করে। গড়ে এসব আঁশগুলো লম্বায় ১০০ মাইক্রোমিটার ও চওড়াতে ৫০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আলো যখন বিভিন্ন স্তরে সজ্জিত এসব আঁশের ওপর এসে পড়ে তখন বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বিচ্ছুরণ করে যেকারণে আমাদের চোখে বিভিন্ন রঙ এসে ধরা পড়ে।
অনেকসময় দেখা যায়, একই প্রজাতির প্রজাপতি মূককীট থেকে বের হবার পর এক রঙ আবার কিছুদিন যাবার পরে আরেকটু গাঢ় রঙের হয়ে থাকে! এটাও এসব আঁশের কারণেই হয়ে থাকে। বয়সের সাথে সাথে এদের পাখাতে আঁশের পরিমাণ কমতে থাকে। আবার সূর্যের আলোর তীব্রতার কারণে এদের বিচ্ছুরণ ক্ষমতার অনেক হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে।