ন্যাশনাল আন্ডারওয়াটার ক্লিনআপ উইক ২০১৪

শুরু হলো সাগরতল পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

সামুদ্রিক পরিবেশ ও প্রাণসম্পদের সুরক্ষায় অপচনশীল বর্জ্য সরাতে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ ঘিরে সোমবার শুরু হয়েছে ন্যাশনাল আন্ডারওয়াটার ক্লিনআপ ২০১৪। সেভ আওয়ার সি’র (এসওএস) আয়োজনে এই স্বেচ্ছাসেবীমূলক উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেন দেশের স্কুবা ডাইভার ও নির্বাচিত স্বেচ্ছাসেবকরা। সাগরতলের বর্জ্য সাফ ও জরিপের এই আয়োজনে সহযোগী হিসেবে রয়েছে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রজেক্ট আওয়ার, ম্যানগ্রোভ ফর দি ফিউচার (এমএফএফ), ডাইভারদের সংস্থা- ওশেনিক স্কুবা ডাইভিং সেন্টার ও ঢাকা ডাইভারস ক্লাব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ডাইভাররা সাগরতলের নানা অংশের বর্জ্য জরিপ ও পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন। এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও জরিপ চলবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তুলে আনা বর্জ্যের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা প্রামাণ্য প্রতিবেদন তৈরি করবেন, এর থেকে বর্জ্যের উৎস অনুসন্ধান ও প্রতিকারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে। এছাড়া পর্যটকদের মাঝে পরিবেশ-বান্ধব অভ্যাস তৈরিতে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি করবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সোমবার দুপুরে সেন্ট মার্টিনসে এই কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমাদ। এসওএস প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আরজুর সঞ্চালনায় স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠক ও স্থানীয় সরকারের নেতারা স্কুবা ডাইভার ও সারা দেশ নির্বাচিত স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মতবিনিময় করেন। দ্বীপের স্থানীয় জনসাধারণ ও নানা পেশার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।NUCW-14-4
অনুষ্ঠানে এসওএসের ডাইভিং-অভিযাত্রা পরিচালক এসএম আতিকুর রহমান, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজের মো. ফরিদ আহমদ,  মেরিন লাইফ এলায়েন্সের মোহাম্মদ আয়াজ, সেন্ট মার্টিনস ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মৌলভী ফিরোজ আহমদ, এবং বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল হক সামুদ্রিক বর্জ্য বিষয়ে মতামত জানান।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, সেন্ট মার্টিনসে এ যাবৎ পরিবেশ সুরক্ষায় যত সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার কোনোটিতেই স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যাপারে মনযোগ দেয়া হয় নি, এতে করে স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠির জীবন-জীবিকার সমৃদ্ধির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের ব্যাপারে পরামর্শ দেন তারা।
সেভ আওয়ার সি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকতা মোহাম্মদ আরজু গত বছরের ‘ডাইভ এগেইনস্ট ডেবরিস’ জরিপের ফলাফল জানিয়ে বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনস ঘিরে সমুদ্রে অপচনশীল বর্জ্যের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ফেলা হয় স্থানীয় নানা উৎস থেকে। বাদবাকী বর্জ্যের উৎস অনুসন্ধান করলে তা চট্টগ্রাম উপকূল থেকে শুরু করে উপকূলের থেকে অনেক উত্তরের বড় শহরগুলো শনাক্ত হবে। বঙ্গোপসাগরের প্রবাল বসতিগুলোতে প্রাণ ও পরিবেশের প্রতি অন্যতম প্রধান হুমকি হচ্ছে এই প্লাস্টিকসহ অন্যান্য অপচনশীল বর্জ্য।’ দেশের ভোক্তাপণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত উদ্যোগে সেন্ট মার্টিনসে রিসাইক্লিং প্লান্ট বসানোর পরিকল্পনা জানান তিনি।NUCW-14-1
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইইউসিএন কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমাদ বলেন, ‘অপচনশীল বর্জ্যের পাশাপাশি জাহাজ ও অন্যান্য নৌযান থেকে ব্যবহৃত পেট্রোলিয়ামজাত তরল সাগরে ফেলা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের সমুদ্রের প্রাণসম্পদকে অপচনশীল বর্জ্যের হুমকি থেকে সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের জন্য বসে থাকলে চলবে না, সমুদ্র নির্ভর জীবিকার লোকেদেরই সচেতনতা ও সক্রিয়তা শুরু করা দরকার। প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকাগুলোতে প্রতিবেশী দেশ যেমন মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথভাবে প্রাণসম্পদের ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তা করতে হবে। সামুদ্রিক প্রতিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগগুলোতে স্থানীয় জনগোষ্ঠির অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগানোর ওপর জোর দেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরে বাস্তুসংস্থান ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা চালুতে নিয়োজিত সামাজিক উদ্যোক্তা ‘সেভ আওয়ার সি’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘ডাইভ এগেইনস্ট ডেবরিস’ কর্মসূচির আওতায় আন্ডারওয়াটার ক্লিনআপ উইক আয়োজন করছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics