প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র; সুস্থ জীবনের সন্ধান!
লিসান আসিব খান
বসন্তের কোমল রোদের আলোয় ঝলমলে সকাল। দেয়ালে ঝুলছে লম্বা ব্যানার। তাতে লেখা “রাসায়নিক সার ও বিষ মুক্ত ফসল উৎপাদন”। সামনের প্রাঙ্গণ থেকে উপচে পড়া ভিড়। সমবেত জনতা দুই হাত উঁচিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করলেন নিজেকে বদলানোর। লালমাটিয়া মহিলা কলেজের পশ্চিম দিকে, লাইসিয়াম কলেজের গলিতে ‘প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র’ নামে ওই দোকানে প্রতি শুক্রবার সকাল ৯ টা থেকে বিপণন শুরু হয় রাসায়নিক সার ও বিষ মুক্ত ফসলের।
দেলোয়ার জাহানের মতে বদলানোর কাজটি একভাবে শুরু করলেই হয়। ফসলের ক্ষেতে যেমন আগাছা জন্মে, তাকে তুলে না ফেললে শ্রমে-ঘামে রোপণ করা ফসলের বিনাশ ঘটে; তেমনি জীবনের যাত্রাপথে আমাদেরও আচার-আচরণের সঙ্গে অনেক অদরকারি, অকল্যাণকর অনুষঙ্গও জড়িয়ে যায়। আগাছার মতো তাদেরও সরিয়ে ফেলতে হয়। নিজের জীবনাচরণের এসব নেতিবাচক অনুষঙ্গ সরিয়ে ফেললে জীবনটাও বদলে যায়। এভাবে সবাই বদলালে সমাজও বদলে যাবে ।
২৪ অক্টোবর ২০১৪ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকায় প্রাকৃতিক কৃষি ফসল বিপণন শুরু করেন দেলোয়ার জাহান ও তাঁর বন্ধুরা। তারপর থেকে আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সবার সহযোগিতায় মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে থাকেন রাসায়নিক সার ও বিষ মুক্ত ফসল ।
দেলোয়ার জাহান জানান,প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের ফসল এখন থেকে ৭ দিনই পাওয়া যাবে। তবে কাচা ফসল পাওয়া যাবে শুধুমাত্র শুক্রবারে ।
গত ৬ মার্চ শুক্রবার, প্রাকৃতিক কৃষি খামার ও কৃষকদের উৎপাদিত রাসায়নিক সার ও বিষ মুক্ত ফসল এর মধ্যে ছিল –
বড় বেল ( ঘাটাইলের ) ,বরই , চম্পা কলা, হনুমানজটা কলা, মিষ্টি ভুট্টা, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, তেতুল, চ্যালা শিম. পাকা টমেটো,শোলা বেগুন,হাঙ্গর বেগুন ,মান কচু, ডাটা শাক, মটরশুটি, লাউ ,কাচা কলা,ধনে পাতা, মিষ্টি কুমড়া (পাকা),কাঁচা মরিচ, কাচা পেপে, লালশাক,কচু শাক।
বিশেষভাবে সংগ্রহ করা হয় –
সরিষার তেল(ঘানি ভাঙ্গা), কুমড়া বড়ি, মধু (ধুনিয়া ও কালিজিরা্) ,খেজুরের গুড় পাটালী, মুড়ি(হাতে ভাজা),বাইঝুরি মরিচ গুড়া, সরিষার তেল(যান্ত্রিক), পাকনা পাহাড়ি হলুদ গুড়া, চাল (পালিশ ছাড়া লাল চাল,গভীর পানির )
বিলুপ্তপ্রায় বিক্রমপুরের সাদা বেগুনের জাত সংগ্রহ করেছে প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র । মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের একটি বাড়িতে গত ২৫ বছর ধরে বেগুনটি আঙ্গিনায় চাষ করে আসছিলেন সেই বাড়ির কর্তা। হঠাৎ-ই তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বেগুনটিও যেন তার পালন কর্তা হারায়। এরপর বেগুন জাতটি নিয়ে গত বছর কথা বলতে মানিকগঞ্জে যান দেলোয়ার জাহান, কথা বলেন এর চাষ নিয়ে । এর পরে আরও চার মাস চেষ্টার পর, একটি বেগুনের বীজ সংরক্ষণ করে ঢাকায় আনা হয়। সেই বীজ পাঠানো হয় প্রাকৃতিক কৃষির কালীঞ্জের আগমন্দিয়া খামারে (খামারটি হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের সিওএফ, কালীগঞ্জে অবস্থিত)। অবশেষে প্রাকৃতিক কৃষি খামারে পরিপুষ্টভাবে বেড়ে উঠে সেই বিলুপ্তপ্রায় বিক্রমপুরের সাদা বেগুন।
ঘাটাইল কৃষক সমাজের হরমোন মুক্ত এই আনারস আসবে বিপণন কেন্দ্রে ।
দেলোয়ার জাহান বলেন ,একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত বিপণন ব্যবস্থার অধীনে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করার মধ্যদিয়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহিতকরণ ও সম্প্রসারিত করাই এই বিপণনের মূল উদ্দেশ্য ।
আগামীকাল, অর্থাৎ শুক্রবারেও কিন্তু প্রায় গত সপ্তাহের মতই একই ধরণের সব সবজি, ফলমূল ও অন্যান্য খাবার দ্রব্যাদি পাওয়া যাবে সেখানে। আপনারা চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন সরাসরি, আর সুনিশ্চিত করতে পারেন আপনার খাবারের পুষ্টিগুন ও স্বাস্থ্যকর দিকটিও! যোগাযোগের ঠিকানা নিচে দেয়া হলো।
যোগাযোগ :
ফোন # ০১৭১৮০০০২১৬
ই-মেইল : pkrishi2014@gmail.com
বিক্রয় কেন্দ্র # ২/৮,F-ব্লক, নিচতলা (লালমাটিয়া মহিলা কলেজের পশ্চিম দিকে লাইসেনিয়াম গলিতে)