নাইট্রজেন চক্রের কথকতা, পর্ব-২
দিব্য কান্তি দত্ত
গতপর্বে কথা শেষ হয়েছিল কৃষিক্ষেত্রে নাইট্রোজেনঘটিত দূষণ নিয়ে। বাধাধরা নিয়মের পরেও লাগাম কেন হাতছাড়া এটা ধরতেই গবেষণা করেছেন ‘কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়’র গবেষকেরা। নাইট্রেট নিয়ে গবেষণা করলেও তারা কিন্তু অ্যামোনিয়ার বিষয়টি আসলে আগে বিবেচনায় আনেননি। ঝামেলাটা ধরা পড়ল সেখানেই। কৃষিক্ষেত্র থেকে নির্গত অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে জীবাশ্ম জ্বালানীকেও! উৎস যাই হোক, বায়ুমন্ডলে মজুদ হওয়া গ্যাস চক্রাকারে সিক্ত এবং শুষ্ক প্রক্রিয়ায় স্থলজ এবং জলজ বাস্তুসংস্থানে ফিরে আসছে যা প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে শিথিল করতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে মৃত্তিকার অম্লীকরণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং হৃদ ও স্রোত প্রবাহের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
গবেষণা দলটির প্রধান ছিলেন ‘কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়’র ‘বায়ুমন্ডলীয় বিজ্ঞান’ বিভাগের প্রধান এবং অধ্যাপক জেফ্রি কোলেট। তার সাহায্যকারী হিসেবে ছিলেন ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি’, ‘ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস’ এবং ‘ন্যাশনাল অ্যাটমোস্ফেরিক ডিপোজিশন প্রোগ্রাম’ এর কর্মীরা। ৯ মে ‘প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে গবেষকেরা নাইট্রোজেনের মজুদে ধীর কিন্তু নির্ণেয় পরিবর্তনের কথা বলেন। বায়ুমন্ডল থেকে জীবমন্ডলে সক্রিয় নাইট্রোজেন চালিত হচ্ছে যা বাস্তুসংস্থানকে দূর্বল করতে শুরু করেছে। গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক হলেন ওয়াই লি যিনি ‘কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে সম্প্রতি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন।
বিংশ শতাব্দী থেকে শুরু করে মানবসৃষ্ট দুটো কারণে বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেনের মজুদ বেড়েছে। প্রথমটি, বিভিন্ন উৎস থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইডের নির্গমন যা বায়ুমন্ডলে নাইট্রেটে পরিণত হয় এবং দ্বিতীয়ত, অ্যামোনিয়া যা প্রধানত জীবসৃষ্ট বর্জ্য এবং নাইট্রোজেন সার থেকে উৎপন্ন হয়ে অ্যামোনিয়ামরূপে চক্রে প্রবাহিত হয়। বর্তমান সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানীর প্রতি অধিক দৃষ্টিপাত করা হয়েছে এবং কারিগরি ও সরকারি নীতিমালা প্রণয়নের দ্বারা প্রধান পদক্ষেপগুলোও নেয়া হয়েছে এই ধরনের উৎস থেকে নিঃসরণকে বাঁধা প্রদানের জন্য।
অপরদিকে, কৃষিসম্পর্কিত প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া নিয়ে মাথাব্যাথা তেমন একটা নেই বললেই চলে। ফলাফলস্বরূপ, এটা কোন নিয়ন্ত্রিত দূষক নয়। ‘কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়’র গবেষকেরা খেয়াল করেছেন যে, অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন মজুদের প্রধান উৎস এবং নাইট্রোজেন চক্রে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য প্রধান উপাদান হিসেবে অনেক আগেই নাইট্রেটকে অতিক্রম করেছে।
কোলেটের মতে, “আমরা নাইট্রোজেন মজুদের প্রধান উৎস হিসেবে নাইট্রেটকেই দায়ী করি। কিন্তু, কথাটা আশির দশকের জন্য সত্যি ছিল”। তিনি আরও বলেন, “আমরা নাইট্রেটকে এতই বেশি নিয়ন্ত্রণ করেছি যে এখন নাইট্রোজেন মজুদের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে অ্যামোনিয়া এবং নাইট্রেটের পরিবর্তে অ্যামোনিয়া এখন নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস হয়ে পূর্বের সাম্যতা রক্ষা করে চলেছে”।
গবেষকদের মতে, যদিও বায়ুমন্ডলে বর্তমান ঘনমাত্রায় অ্যামোনিয়া মানবজাতির জন্য বিষাক্ততার পর্যায়ে পৌঁছায়নি তবুও এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন দূষক বস্তুকণার মধ্যে অ্যামোনিয়াকে অগ্রদূত বলা চলে যার মধ্যে রয়েছে অ্যামোনিয়ার যৌগ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এবং অ্যামোনিয়াম সালফেট। গবেষণাপত্রে গবেষকেরা নাইট্রোজেন মজুদের উৎসকে নাইট্রেট থেকে অ্যামোনিয়ায় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিক্ত মজুদকে সাপেক্ষ হিসেবে বিবেচনা করেছেন যার দ্বারা নাইট্রোজেন চক্রে প্রবেশের মাধ্যমে বৃষ্টি অথবা তুষার তৈরি করে। এছাড়া নাইট্রোজেনের ক্ষেত্রে শুষ্ক মজুদও ঘটতে পারে যার মাধ্যমে গ্যাস অণু অথবা কণা বায়ুমন্ডল থেকে সরাসরি ভূপৃষ্ঠে জমা হয়। শুষ্ক মজুদের ক্ষেত্রে পরিমাণ নির্ণয় করা আরো কঠিন। কোলেটের মতে, “এই প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করার জন্য আমাদের হাতে অনেক কম তথ্য বিদ্যমান।” এই গবেষণা থেকে বাস্তুসংস্থানে অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে অ্যামোনিয়ার প্রভাব কতটা তা বোঝা যায়।
কোলেট আরও বলেন, “নীতিনির্ধারকদের অ্যামোনিয়ার ব্যাপারটা নিয়েও সমানভাবে ভাবতে হবে, শুধুমাত্র নাইট্রেট নিয়ে ভাবলে চলবেনা। আমরা নাইট্রেটের পরিমাণ কমানোর জন্য নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাসগুলোর নিঃসরণ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি, কিন্তু আমরা যদি অতিরিক্ত নাইট্রোজেন মজুদ হ্রাসের ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে চাই তবে আমাদের অ্যামোনিয়া নিয়েও চিন্তা করতে হবে”।