ফিরিঙ্গীবাজার কসাইখানায় একরাত…

মো: সাদ্দাম হোসেন ও সাইফুল ইসলাম

গরু বা মহিষ কি কেউ খায়? খায়না আমিও জানি। কিন্তু হোটেল-রেস্টুরেন্টে গেলেতো দেখি অধিকাংশরাই গরু মহিষ খায়। তারাতো বলে আমাকে একটা গরু দেন অথবা খাসি দেন। যা বলার বলুক লোকে সহজ কথা পেঁচানো বাদ দেই। আসলে যা বলতে চাচ্ছিলাম তাহল আমরা প্রতিদিন হোটেল-রেস্টুরেন্ট, কিংবা ফাস্টফুডের দোকানে যা খাই তা আসলে কি খাই?

বাজারে মাংস কিনতে গেলে প্রায় সকলেই জিজ্ঞেস করি মাংস গরুর না মহিষের। আর দোকানীও সাথে সাথেই বলে দেয় গরুর মাংস। আসলে বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। তর্ক না করে মাংস কিনে নিয়ে আসলেন। গরু মনে করে খেয়ে ফেললেন। ঝামেলা শেষ। তাছাড়া গরু কিংবা মহিষের মাংস যাই খাইনা কেন মুসলমানদের তো ক্ষতি নেই। কিন্তু তারপরও গরুর দামে যদি মহিষের মাংস খেতে হয় সেটাতো তর্কের আওতায় পড়বেই। তাইনা! যা বলতে চাচ্ছি বলি-

কসাইখানা বলতে এমন একটি স্থানকে বুঝায় যেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাদ্যপোযোগী প্রাণী জবাই করা হয় । বাংলাদেশের বিভিন্ন  সিটি কর্রপোরেশনের তত্ত্বাবধানে অনেক গুলো কসাইখানা আছে । চট্রগ্রাম সিটি কর্রপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৩ টি সরকারি কসাইখানা আছে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ইং দিবাগত রাত্রে চট্রগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ কর্তৃক চট্রগ্রাম সিটি কর্রপোরেশনের একটি কসাইখানা পরিদর্শনের আয়োজন করে।পশু চিকিৎসক হিসেবে আমাদের কারিকুলাম এর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে এ কসাইখানা পরিদর্শনের জন্য ফিরিঙ্গিবাজার কসাইখানাকে নির্ধারন করা হয়। আমরা চট্রগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ১৫তম ব্যাচের ৭১ জন ছাত্র-ছাত্রী উক্ত পরিদর্শনে অংশগ্রহণ করি। রাত ৩.৩০ ঘটিকায় যাত্রা করে ঘুমন্ত চট্টগ্রামের রাতের অন্ধকার চিরে চট্রগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের যাত্রা শুরু করি। পনেরো মিনিটের রাস্তায় অনেক দিনের পরিচিত চট্টগ্রামে দেখার তেমন কিছুই নেই তবু নতুন একটি অভিজ্ঞতার দ্বারপ্রান্তে কিছুটা উত্তেজনা কাজ করছিলো। IMG_20140913_042714

অবশেষে গিয়ে পৌঁছলাম ফিরিঙ্গিবাজার কসাইখানাতে। কসাইখানায় গিয়ে অবাক করার মত দৃশ্য চোখে পড়ল আমাদের। প্রায় ৩০ টি মহিষ ও মাত্র ৩ টি গরু জবাই করল সেখানকার কসাই। চামড়া ছাড়িয়ে রিকশাযোগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাংসগুলো। জানা যায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মোট তিনটি কসাইখানাতেই একই অবস্থা। মাত্র ৩ টি গরু জবাই করে কিভাবে চট্টগ্রামের সব হোটেল-রেস্টুরেন্টে গরুর মাংস দিচ্ছে সেই প্রযুক্তি সত্যিই অবাক করেছিল !!!

সবচেয়ে অবাক হচ্ছিলাম যে বিষয়ে তাহল সেখানে প্রাণীদের অধিকার বলতে কিছু আছে বলে মনে হয়নি। প্রাণিদের সামনে প্রাণী জবাই করা হচ্ছে। খুটির সাথে গলা বাঁধা অবস্থায় ধপ করে ফেলে দেয়া হচ্ছিল মহিষগুলোকে। সিনেমার শেষ দৃশ্যে যখন নায়ক জয়ের জন্য ধুমধাম করে গুণ্ডাদের লাথিগুতা মারছে সেই দৃশ্যপট সুন্দরভাবে ফুটিয়ে উঠছিল সেখানে। স্ব-চক্ষে না দেখলে বুঝতে হয়তো অনেকের সমস্যা হবে কি বলতেছি আমি।

নির্বাক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছিলাম। দেখেছি ভয়ার্ত মহিষগুলোর চোখের চাহনি। কিছুই বলার নেই আমাদের? শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলাম শালা কসাই! অবলা এ প্রাণীগুলো আমাদের খাবার আর আমিষের যোগান দিয়ে চলেছে, আমরা কি পারি এদের সঠিক যত্ন ও সেবা দিতে?? যাইহোক, দেখলাম জবাই এর পূর্বে প্রাণীটিকে ভালো ভাবে বাঁধা হয়, যাতে সে নড়াচড়া করতে না পারে। এরপর ধারালো ছুরি দিয়ে খুব কম সময়ে প্রাণিটিকে জবাই করা হয়। IMG_20140913_041036 জবাই এর কাজটিও ২ জন মুসলিম ইমামের দ্বারা সম্পাদন করা হয় এনারা এ কাজে প্রশিক্ষিত এবং পারদর্শী। রক্ত প্রবাহ সম্পূর্ণ হওয়ার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মেঝে ধুয়ে ফেলা হয়। কসাইখানার মাঝ দিয়ে ২০ ইঞ্চি পরিমাণ একটি নালী রয়েছে যার মাধ্যমে সমস্ত বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করা হয়।সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত লোক রয়েছেন।  প্রতিটি মহিষ/গরু জবাই থেকে শুরু করে মাংস বিতরণ পর্যন্ত ৩০ মিনিট সময় লাগে। IMG_20140913_041140

সর্বোপরি পরিদর্শনটি ছিল আমাদের জন্য শিক্ষনীয়। পরিদর্শনের সঙ্গী হিসাবে প্রফেসর ড. মো: আ: আহাদ, বিভগীয় প্রধান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ডা. জহিরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ডা. মো: আবুল হাশেম, ভেটেরিনারি সার্জন,  চট্রগ্রাম সিটি কর্রপোরেশন এর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি আমাদের কসাইখানাগুলোতে আরও বৈজ্ঞানিক প্রজুক্তি ব্যবহার করে মাংশের গুনগত মান রক্ষা করবে।

লেখকদ্বয় : শিক্ষার্থী ৪র্থ বর্ষ, ডিভিএম, চট্রগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics