দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল বাচ্চাসহ একটি ফ্যায়র্স লাঙ্গুর হনুমান
লিসান আসিব খান
ছবি ঃ মোহাম্মাদ এ এইচ মেহেদি
ঠিক চার বছর আগে যেমন ফ্যায়র্স লাঙ্গুর হনুমান আমাদের সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল তাদের অস্তিত্ব ঠিক তেমনি আজ তারা আবারও আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তারা কতটা অবহেলিত । যারা তাদেরকে ভালোবাসায় কোলে তুলে নিয়েছিল তারাই আজ তাদেরকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে ।
সেই ২০১১ সালের কথা , শ্রীমঙ্গলে হোসেনাবাদ এলাকার ৬ নম্বর পানপুঞ্জিতে প্রথম দেখা যায় বিরল প্রজাতির ফ্যায়র্স লাঙ্গুর হনুমানের শাবক ।দুই চোখের চারপাশ গোলাকার বৃত্তের মতো সাদা হওয়ায় এটি চশমা পরা হনুমান নামে পরিচিত ।সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির বনে এদের দেখা যায় ।পিঠের দিক বাদামি বা হালকা বাদামি , পায়ের পাতা এবং লেজের অর্ধেক কালো থাকে। এরা সাধারণত গাছেই থাকে, তবে শুধু পানি পানের জন্য মাটিতে আসে ।
সাতছড়ির ‘কনিমোচড়া’ এলাকাতে গতকাল সকালে রাস্তা অতিক্রমের সময় মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা প্রাণ হারায় বাচ্ছাসহ একটি ফ্যায়র্স লাঙ্গুর হনুমান । জানা যায় , বাচ্চা শাবকটির প্রায় আড়াই মাস বয়সের, উচ্চতা ১০ ইঞ্চি এবং লেজসহ দৈর্ঘ্য দেড় ফুট । এটি অতি বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় অন্যতম ।
ছবি ঃ মোহাম্মাদ এ এইচ মেহেদি
ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন টিম অব বাংলাদেশ সংগঠনের সভাপতি ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষক মো.কামরুজ্জামান বাবু এনভায়রনমেন্টমুভ.কমকে জানান , “সাতছরির রোড এক্সিডেন্ট দিন দিন বেড়েই চলছে ।এবার মারা পরল বাচ্চা সহ চশমা পড়া হনুমান ।এর প্রতিকার আমরা কেউই খুজে দেখি না ।বিদ্যুতের খুটি স্থাপন ও গত বছর দুটি কালভার্ট করতে গিয়ে অনেক গাছ ও গাছের ডাল কেটে ফেলা হয় । এতেই বানর,হনুমান সহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। তাই প্রাণের ঝুকি নিয়েই বাচ্চা সহ হনুমান ও বানরগুলো নিচ দিয়ে রাস্তা পারা পার হয়। আবার কনিমোচড়া জাগাটায় দ্রুত গতিতে গাড়ি আসলে অপর পাশ থেকে দেখা যায় না । একটি সংরক্ষিত বনের মাঝখান দিয়ে রাস্তা , তার উপর রাস্তার পাশের গাছ ও গাছের ঢাল কেটে ফেলা হচ্ছে ।কোন সংরক্ষিত বনে যদি কোন উন্নয়ন কার্যক্রম করতে হয় ঐখানকার পরিবেশের প্রতিটি সদস্যদের কথা চিন্তা করেই উন্নয়ন কার্যক্রম করা উচিত বলে আমরা মনে করি ।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাতছরির পরিবেশের উপর মানুষের অত্যাচার দিন দিন বাড়ছে। কয়েক বছর পর আরও করুণ অবস্থার সৃষ্টি হবে। পাহাড় ধ্বংস, বৃক্ষ নিধনের ফলে এ সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। হারিয়ে যাবে ফ্যায়র্স লাঙ্গুর হনুমানের মতও আরও অনেক বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী ।
ছবি ঃ মোহাম্মাদ এ এইচ মেহেদি
ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন টিম অব বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সেখানে দ্রুত স্পিডব্রেকার বসানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয় ।