সুন্দর চশমাপরা হনুমান
রুবাইয়া জাহান বানী
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা কাজের জন্য আমরা চারজনের একটা দল লাউয়াছড়ায় গিয়েছিলাম। রেল লাইন ধরে বনের ভেতরটায় হাঁটছিলাম। প্রত্যেক এক ঘণ্টা পর পর ট্রেন যায় এ পথে। মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। বৃক্ষরাজির বৈচিত্র্য লক্ষনীয় বনের এ জায়গায়; দেখে চোখ জুরায়। হাঁটতে হাঁটতে আমরা অনেকদূর একটা খোলা জায়গায় চলে এসেছি এমন সময় দেখি আমাদের থেকে ত্রিশ-চল্লিশ হাত দূরে একটা কদম গাছে বেশ কয়েকটা বানর। গাছের ডালে বসে লম্বা লেজটা ঝুলিয়ে কি যেন খাচ্ছে মজা করে! ওদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য আমরা বুনো কয়েকটা ডাক দিলাম, তালিয়া বাজালাম! মনযোগ দিয়ে খাচ্ছিল; কারা বিরক্ত করছে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখে আমরা কিছু মনুষ্য প্রানী! আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকাতে দেখি উনারা সব চশমাপরা হনুমানবৃন্দ! দুপুরের খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত সবাই। আমরা অনেক দূরে আছি দেখে কোন পাত্তা না দিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিল সব।
জীবনে প্রথমবারের মত প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের দেখে অসম্ভব অভিভূত হলাম সবাই! অরন্যের নির্জনতায়, মৃদুমন্দ বাতাসে কি সুন্দর মায়াবী পরিবেশ! অরন্যের সৌন্দর্য, রহস্য উপভোগ করলাম আমরা তখন পূর্নরূপে।
এই চশমাপরা হনুমান এর বৈজ্ঞানিক নাম Trachypithecus phayrei । ইংরেজীতে বলা হয় Phayre’s leaf monkey; বাংলায় কালো হনুমান নামেও ডাকা হয়।এ হনুমানটির বিশেষত্ব হল এর চোখের চারপাশে বৃত্তাকার সাদা দাগ রয়েছে যা দেখলে মনে হয় এরা চশমা পরে আছে। প্রানীটি “Endangered” তালিকায় চলে গেছে অনেক আগেই। উদ্ভিদভোজী এ পরিবেশবন্ধুটি বিভিন্ন ধরনের কড়ই( Albizzia spp.),বট (Ficus spp.), চাপালিশ, গামার ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ বৃক্ষের পাতা ও ফল খেয়ে এসকল গাছের বীজের বিস্তরণ, সংরক্ষণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এরা বাংলাদেশের একমাত্র বৃষ্টি অরন্যের(Rain Forest) অমূল্য সন্তান, প্রহরী আর সংরক্ষক। তাই এদের সংরক্ষণ করা, এদের খাদ্যের উৎস, বাসস্থান হুমকির সম্মুখীন যাতে না হয় তার জন্য যে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরী।
এরা যদি বাঁচে, বাঁচবে আমাদের বন-জঙ্গল, বাঁচবে আমাদের অরণ্য।
কৃতজ্ঞতাঃ জাকিয়া সুলতানা জুঁই, বাদশা ফয়সাল, মুনিম হাসান চৌধুরী।
লেখকঃ প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
ছবিসত্ত্বঃ লেখক