পলিথিন খেকো শুঁয়োপোকার সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
দিব্য কান্তি দত্ত
প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অপচনশীল প্লাস্টিক বর্তমানে এক মহাগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বিজ্ঞানীরা জৈবপ্রযুক্তির বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এই সমস্যাটি থেকে মুক্তি পেতে। এর মধ্যে একটি প্রচেষ্টা ছিল বিভিন্ন অণুজীব ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে প্লাস্টিকের ক্ষয় করা। গবেষকদের এই প্রচেষ্টার পালে তবে জোর হাওয়াই লাগিয়েছে মোম মথের শুককীট। গবেষণার জন্য পলিথিন ব্যাগে করে বিভিন্ন ধরনের শুঁয়োপোকা পরিবহন করার সময়ই বিষয়টি তাদের নজরে আসে।
পলিথিন হল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্লাস্টিক যার প্রাকৃতিকভাবে পুরোপুরি নিঃশেষ হওয়াটা অত্যন্ত কঠিন একটি ব্যাপার। বিজ্ঞানীরা খেয়াল করেছেন, একটি বিশেষ প্রজাতির শুঁয়োপোকা পলিথিন পরিপাক করতে সক্ষম।
মোম শুঁয়োপোকার মথ (Galleria mellonella) মৌচাকের মধু এবং মোম খেয়ে বেঁচে থাকে। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওলো বোমবেলি ও ক্রিস্টোফার হো এবং স্পেনের ক্যান্টাব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডেরিকা বারটোকিনি লক্ষ্য করেন যে এই প্রজাতির শুঁয়োপোকা ধারণকৃত পলিথিন ব্যাগে খুব দ্রুত ফুটো তৈরি হয়। এর প্রেক্ষিতে তাঁরা পরীক্ষাগারে পলিথিনের পর্দার ওপর বেশকিছু শুঁয়োপোকা রেখে একটি পরীক্ষা চালান এবং লক্ষ্য করেন যে এদের মধ্যে প্রায় একশটি শুঁয়োপোকা ৯২ মিলিগ্রাম করে প্লাস্টিক মাত্র ১২ ঘন্টায় ক্ষয় করতে সক্ষম।
এই ক্ষয়ের হার গবেষণায় প্রাপ্ত অন্যান্য অণুজীব থেকে অনেক বেশি। পরীক্ষাগারে সমশ্রেণীভুক্ত করা অন্যান্য শুঁয়োপোকাগুলোও একই প্রভাব প্রদর্শন করে। গবেষণা থেকে এই তথ্যটি স্পষ্ট যে, তারা শুধু পলিথিন চর্বণ করেই থেমে থাকছেনা বরং সেগুলো পরিপাকও করছে।
শুঁয়োপোকাগুলোর এই ক্ষমতা মৌচাক থেকে উৎপন্ন কিছু মোম পরিপাকেও সহায়তা করবে যাদের বৈশিষ্ট্য একদম পুরোপুরি পলিথিনের মত। তবে শুঁয়োপোকা নিজের ভিতরেই পলিথিন পরিপাকে সহায়ক এনজাইম তৈরি করছে নাকি এর জন্য তারা তাদের অন্ত্রে উপস্থিত পলিথিন ক্ষয়কারক অণুজীবের ওপর নির্ভরশীল সেটি এখনও বিজ্ঞানীদের অজানা।