ছাদে বাগান বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা করা হোক
অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী ঢাকার পরিবেশ দিন দিন বিষিয়ে উঠছে। গ্রীষ্মকালের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা এবং বাতাসে বিষাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি রোধে ছাদে বাগান হতে উত্তম সমাধান। সেইসাথে বাগান পরি”র্যার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক অপরিমেয় উপকারিতা থাকলেও এ বিষয়ে নীতিমালা, সচেতনতা ও সরঞ্জামাদির সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। শহরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা, নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং বিষমুক্ত সবজি প্রাপ্তিতে ছাদে বাগান কর্মসূচীর সকল প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জরুরীভিত্তিতে ছাদে বাগান বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা করা হোক। আজ ২৭ জানুয়ারি ২০১৬, বুধবার, সকাল ১১ টায়, পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট (বিজিআরএম) এর যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কথা সাহিত্যিক ও নিসর্গী লেখক বিপ্রদাস বড়–য়া, পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক মো: নেয়ামুল হক, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: গোলাম হায়দার, সহ-সভাপতি মো: মামুনুর রশিদ, পল্লীমা গ্রীণের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক, বাংলাদেশ নার্সারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাদিউল ইসলাম টিপু, বাংলাদেশ প্ল্যান্ট নার্সারি সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এম কে মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক মো: মেসবাহ উদ্দিন, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ।
আলোচনা সভায় ছাদে বাগানের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ছাদে বাগান বিস্তারের মাধ্যমে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। স্বাস্থ্য ও মন সুরক্ষায় রাখবে অসামান্য ভূমিকা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ ও শব্দ দূষণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা যাবে। জার্মানীতে ১২% ছাদ ‘সবুজ’ এবং টোকিও আইনে সব নতুন ছাদের অন্তত ২০% সবুজ হতে হবে। টোকিও সরকারের হিসাব মতে যদি তাদের অর্ধেক ছাদ সবুজ হয় তাহলে প্রতিদিন এয়ার কন্ডিশনে ব্যবহৃত জ্বালানী বাবদ এক মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। সিঙ্গাপুরে এক গবেষণায় দেখা যায়, যে পাঁচ তলা বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে প্রতিষ্ঠিত বাগান দ্বারা বছরে জ্বালানী খরচের ০.৬-১৪.৫% সাশ্রয় হতে পারে। অনেক উন্নত দেশে ভবন গরম ও শীতলকরণে ৩০% বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয়ে থাকে। ছাদ বাগানের মাধ্যমে কম খরচে স্থায়ীভাবে জ্বালানী ব্যবহার কমানো, ভবনের বাহ্য রুপের উন্নতি, তাপমাত্রা হ্রাস করা সম্ভব। ছাদে বাগান জীববৈচিত্র রক্ষায় ভ’মিকা রাখবে এবং বিষমুক্ত টাটকা শাক-সবজি, ফল-মূল পাওয়া যাবে। বর্ষামৌসুমে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে জলাবদ্ধতা রোধে ভ’মিকা রাখবে। ছাদের সবুজ স্তর (ঠবমবঃধঃরড়হ ষধুবৎ) বিভিন্ন ঞৎধহংসরঃঃরহম ঝঃধঃরড়হ থেকে নিঃসরিত বষবপঃৎড়সধমহবঃরপ ধিাব কে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রতিহত করে। সেইসাথে প্রতিদিন ছাদে বাগান হইতে পারে ভবনের বাসিন্দাদের জন্য একটি বোটানিক্যাল গার্টেন তথা বিনোদনের অন্যতম স্থান এবং ছাদ বাগানের উদ্ভীদরাজী হয়তো হতে পারে কোন এক মহা প্লাবন বা মহা দূর্যোগের পর আমাদেরকে পূণরায় বাঁচার জন্য উদ্ভীদ জিন ব্যাংক। সর্বোপরী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে যা সামাজিক অবক্ষয় রোধে এবং অর্থনৈতিক মুক্তিতে ভূমিকা রাখবে।
আলোচনা সভা থেকে ছাদে বাগান বিস্তারে নিন্মোক্ত সুপারিশসমূহ করা হয়-
১) ছাদে বাগান বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা করা হোক
২) সরকারি ও বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ছাদে বাগান বাধ্যতামূলক করা। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের মার্কেটসমূহকে মডেল গার্ডেন হিসেবে গড়ে তোলা।
৩) সরকারকে অনতিবিলম্বে আইনের মাধ্যমে রাজউকের বিল্ডিং কোডে ছাদে বাগান বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং রিহ্যাব ও সিটি কর্পোরেশনকে তা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
৪) ব্যাপক প্রশিক্ষণ ও ফলোআপের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) সুন্দর ও মানসম্পন্ন ছাদে বাগানকারীকে স্বচ্ছতার সাথে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা।
৬) ছাদে বাগানকে উৎসাহিত করার জন্য ছাদে বাগান বিশিষ্ট ভবনের ট্যাক্স ডিসকাউন্ট (ইকো ট্যাক্স) এবং বাগানবিহীন ভবনের ট্যাক্স সামান্য বৃদ্ধি করা।
৭) বাগানের উপকরণ সমুহের সহজ লভ্যতার জন্য উপকরণ বিপনণকারী (নার্সারী) দের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে সহজ লভ্যতা নিশ্চিত করা।
৮) ছাদে বাগানের উপকারিতার দিকসমূহ ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা।
৯) নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, কৃষিবিদ, উপকরণ সরবরাহকারীদের প্রতিনিধি, ছাদে বাগানকারী সংগঠনের প্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশন, নগর উন্নয়ন কর্পোরেশন, পরিবেশবিদ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদেরকে নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
১০) রাজউকের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ছাদে বাগান শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়া এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা।