পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা- গোডাউন এবং আবাসিক ভবন থেকে কারখানা উচ্ছেদের দাবি

নিমতলীতে রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর ঢাকা জেলা প্রশাসক ও বিস্ফোরক অধিদপ্তর যৌথভাবে ১৮০টি গুদাম ও ভবন ঝুঁকিপূর্ণ  হিসেবে চিহ্নিত করে। ২০১০ সালের অক্টোবরের মধ্যে গুদামগুলো সরানোর নির্দেশ দেওযার পরও পুরান ঢাকার লালবাগ, সূত্রাপুর, শ্যামনগর, কোতোয়ালী এলাকা থেকে এখনো গুদাম সরানো হয়নি। গুদামগুলোর উপরের ভবনে ঝুঁকির মধ্যে এখনো বসবাস করছে হাজারো মানুষ। জন নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিবেচনায় পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা, গোডাউন এবং আবাসিক ভবনে কারখানা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। ২৯ আগস্ট ২০১৪, শুক্রবার সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সহ পুরান ঢাকার ১৪টি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।

বক্তারা বলেন, ২০০৪ সালের ৯ জুন পুরান ঢাকার শাখারীবাজারে ভবন ধসের পর ঢাকা সিটি করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে। এ তালিকায় ২৬ হাজার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। আরও সমীক্ষার মাধ্যমে ৫৫৮টির বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৮৫টি ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে দ্রুত এসব ভবন ভেঙ্গে ফেলা বা আধুনিক প্রযুক্তিতে ঝুঁকিমুক্তি করার পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এসব ভবনের বেশীর ভাগই পুরান ঢাকায়। চিহ্নিত ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলা বা ঝুঁকিমুক্ত করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ ধরনের ঝুকিপূর্ণ ভবন ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিক¤েপ ধসে পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার প্রধান কারণ নির্মাণের পর ভবনের চরিত্র পরিবর্তন। আবাসিক ভবনের নকশা অনুমোদন করে ভবন নির্মাণের পর সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানো হয়। বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে সেখানে স্থাপন করা হয় ভারী শিল্প। আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক ভবন ও শিল্প ভবনের চরিত্র পৃথক, ধারণক্ষমতা পৃথক এবং নির্মাণ কৌশলও পৃথক। ফলে এক ধরনের ভবন নির্মাণ করে আরেক কাজে ব্যবহার করলে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে বিলম্ব করা – দুর্ঘটনার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলছে। ভবন নকশা অনুযায়ী নির্মাণ হচ্ছে কি-না তা দেখা হয় না বললেই চলে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ইমারত বা স্থাপনা চিহ্নিতকরণে টাস্কফোর্স হলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ বন্ধ হয়নি। ভবন নির্মাণের পর নিরাপত্তার জন্য ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’ -এর বিধান থাকলেও তা পালিত হচ্ছে না।DSC_7196

আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের দোকান, গোডাউন ও কারখানা স্থাপন, বিদ্যমান ভবনের চরিত্র পরিবর্তন, নিষিদ্ধ ঘোষিত শিল্প স্থাপন, বুড়িগঙ্গা দূষণ, কার্যকর ড্রেনেজ সিস্টেমের অভাব, অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পার্ক ও মাঠ দখল, পুকুর দখল ও ভরাট-এর ফলে পুরান ঢাকার জনজীবন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ আজ বিপদাপন্ন। সম্প্রতি পুরান ঢাকায় কয়েকটি অগ্নিকান্ড ও ভবন হেলে পড়ার ঘটনা মহাবিপদের পূর্বাবাস বলে অনেক মনে করেন। পুরান ঢাকার সমস্যাদি সর্বোচ্চ গুরত্ব সহকারে সমাধান করা না হলে যেকোন সময় শাখারীবাজারে ভবন ধস, নিমতলীর রাসায়নিক গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের মতো ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে।

রাজউক, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা জেলা প্রশাসক, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসা এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তর -এর  বিদ্যমান আইনসমূহ প্রয়োগের অভাব, মাঠ পর্যায়ে যথাযথ তদারকির অভাব এবং সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে পুরান ঢাকায় ভয়াবহ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পবা’র নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবা’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান, সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো: মুসা, একাত্তর ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ড. জেবুন্নাহার, গ্রীণমাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, বাংলাদেশ পীস মুভমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান, কৃষ্টি পরিষদের সভাপতি মো: রিয়াজ উদ্দিন, পল্লীমা গ্রীণের সদস্য

সচিব আনিসুল হোসেন তারিক, বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি এডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ, বিসিএইচআরডির নির্বাহী
পরিচালক মো: মাহবুল হক, পবার নির্বাহী সদস্য মো: সেলিম, ইসলামবাগ অনির্বাণ সমাজ কল্যাণ সংস্থার আইন বিষয়ক সম্পাদক মো: রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

মানববন্ধন থেকে নিন্মোক্ত দাবিসমূহ জানানো হয়-

পুরান ঢাকা থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের কারখানা, গোডাউন ও দোকান অপসারণ করে নিরাপদস্থানে স্থানান্তর করা।
আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে স্থাপিত কারখানাসমূহের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলসহ সেগুলো স্থানান্তর করা।
নিষিদ্ধ ঘোষিত শিল্পকারখানাসমূহ বন্ধসহ সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ভবনের ধরন অনুযায়ী তা ব্যবহারে মালিককে বাধ্য করা এবং মালিক তা করতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
কার্যকর ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তোলা এবং তা নিয়মিত পরিস্কার পরিছন্ন রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এবং নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ করা।
পার্ক ও মাঠ দখলমুক্ত করা এবং সেগুলো জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা।
পুকুর দখল ও ভরাটমুক্ত করা এবং সেগুলোকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics