প্রাধিকারের আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস-২০১৫ পালন

আজ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন প্রাধিকার এর উদ্যোগে ” আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস -২০১৫ ” পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার একডালা উচ্চ বিদ্যালয়ে সেমিনার ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

আইইউসিএন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় প্রাধিকার সেক্রেটারি আজিম অভির পরিচালনায় সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাধিকারের পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারি মনজুর কাদের চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রেমাকেলেঙ্গা বনে স্থাপিত শকুনের খাবার স্টেশনে খাবার পৌছাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেন। শকুনের প্রয়োজনীয়তা এবং রক্ষার উপায় তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবসের তাতপর্য তুলে ধরে প্রাধিকারের সভাপতি আকাশ কাশনোবিশ বলেন , ” বিশ্বের উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন , অবাধে বন উজাড় , বৃক্ষ নিধন , পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব থেকে এ প্রানী বিলুপ্ত হচ্ছে । এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে এ প্রাণী প্রকৃতি থেকে চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে।DSC_5770

শকুনকে বলা হয় প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ পাখি। উপকারী এই প্রাণীটি বিলুপ্ত প্রায়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন এর মূল কারণ ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন গবাদিপশুতে বহুল ব্যবহার। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ থেকে দিন দিন অস্বাভাবিকহারে শকুনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে এরা যে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শকুন কমে যাওয়ার কারণে অ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্ক, যক্ষ্মা, খুরা রোগসহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক সংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।

বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, এক সময় দেশে ৭ প্রজাতির শকুন থাকলেও রাজ ও সরুছুঁটি প্রজাতির শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলা শকুনও বিলুপ্তির পথে। উপমহাদেশে পাখি পরিবারের মধ্যে শকুনই একমাত্র প্রজাতি যা পৃথিবী থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। আপনিও নিশ্চয়ই শৈশবে-কৈশোরে শকুনের ওড়াউড়ি দেখেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর আগের মতো এই প্রজাতির পাখিটি দেখা যায় না। বলতে গেলে প্রায় উধাও হয়ে গেছে।

এক সময় এই অঞ্চলে পাঁচটির বেশি প্রজাতির শকুন দেখা যেত। এখন টিকে আছে মাত্র তিনটি প্রজাতি_ হোয়াইট ব্যাকড, লঙ-বিলড, স্লেন্ডার বিলড।অথচ সত্তর দশকে রাজ শকুন আর বাংলা শকুনে ছেয়ে ছিল ঢাকা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ চিত্রগুলোতে দেখা যায় দল বেধে মৃতদেহের উপর বসে আছে তারা। সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির বুদ্ধ নারিকেল গাছের সারিতে আর পলাশী ব্যারাকের কাছের উঁচু গাছগুলোতে দেখা যেত বাংলা শকুনের। এখন বাংলা শকুন ছাড়া আর কোন শকুন কারো চোখে পড়ে না।এর বৈজ্ঞানিক নাম জেপস বেঙ্গালেনসিস (Gyps bengalensis)। এদেশে বেশী দেখা যেত বলেই তাদের নামের শেষে বাংলা শব্দটি চলে এসেছে। এখন গোটা পৃথিবীতেই এর অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সংখ্যায় দশ হাজারের বেশী হবেনা। বাংলাদেশে বাংলা শকুন এখন বিরল প্রজাতি। সব মিলে এদেশেও এদের সংখ্যা ৫০০ এর বেশী হবে না। তাও আবার বেশীরভাগই দেখা যায় সুন্দরবন এলাকায়। এছাড়া বেশ বড় কয়েকটি দল এখন রয়েছে শ্রীমঙ্গলের কালাছড়া ও হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা এলাকায়।

বক্তারা জানান প্রয়োগকৃ্ত অসুস্থ প্রানী মারা যাবার পর দেহে এর কাযকারিতা জীবিত থাকে এবং ঐ মৃত পশুর মাংশ খেলে পাশ্ব প্রতিক্রিয়ায় কিডনিতে পানি জমে এবং অল্পদিনেই মারা যায় । এভাবে চলতে থাকলে দেশের প্রাণীকুল থেকে শকুন নামক পাখি প্রজাতির অবস্থান অতীত ইতিহাস হিসাবে জাদু ঘরে শোভা পাবে বলে জানান। সরকার এ ওষুধটি এখনই নিষিদ্ধ না করলে শকুন রক্ষার জন্য বড্ড দেরি হয়ে যাবে।পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে , মেলোক্সিক্যাম পশুকে একই ধরনের রোগের আরোগ্য দেয়।এতে শকুনের ও কোন ক্ষতি হয় না। এ ওষুধের প্যাটেন্ট ও হয়নি ফলে যেকোন কোম্পানি তৈরী করতে অসুবিধা নেই।”
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাধিকারের সাংগঠনিক সম্পাদক(বন্য প্রানী) বিনায়েক শর্মা ,প্রাধিকার কর্মী জুনেদ আহমদ সহ অন্যান্যরা।

আগামীকাল রবিবার প্রাধিকারের উদ্যোগে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর একটায় জনসচেতনতার জন্য বিশাল র‍্যালী করা হবে বলে জানিয়েছেন মনজুর। উল্লেখ্য যে www.vultureday.org রেজিস্ট্রেশনভূক্ত হয়ে “প্রাধিকার” এ দিবস পালন করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics