প্রজাপতির পাডলিং রহস্য !
শাওন চৌধুরী
সাধারণত আমরা রঙবেরঙের প্রজাপতিকে ফুলে ফুলে ঘুরে মধু আহরণরত অবস্থাতে দেখেই অভ্যস্ত, কিন্তু মাঝে মাঝে অনেকেই ভেজা মাটি কিংবা ফলের ওপরে নানান ধরণের প্রজাপতি দেখে থাকি। কিন্তু বেশিরভাগের কাছেই অজানা, যেখানে প্রজাপতির ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর কথা সেখানে এরা ভেজা মাটি, ফল কিংবা অন্যান্য বস্তুর ওপরে বসে কী করে! আবার অনেক সময়ে আমাদের শরীরের ঘামের ওপরেও বসতে দেখা যায়!
শরীর গঠন এবং টিকে থাকার জন্য একটা প্রজাপতির জীবনে নানান রকমের রাসায়নিক উপাদানের প্রয়োজন পড়ে। ফুল থেকে মধু আহরণ করে এরা পানি ও স্যুগার ছাড়া তেমন কিছু পায়না। যেকারণে এদেরকে মাঝে মাঝেই অন্যান্য অনেক স্থানে বসতে দেখা যায়। এরা ভেজা মাটি থেকে বিভিন্ন খনিজ লবণ, এমাইনো এসিড এবং এরকম নানান পদার্থ সংগ্রহ করে থাকে। এখন কথা হচ্ছে, এসব উপাদান সংগ্রহ করে এদের লাভ কী?
এসব নানান ধরণের আমিষ ও খনিজ উপাদান সাধারণত এদের জনন কোষকে শক্তিশালী করার কাজে ব্যবহৃত হয়। মিলনের সময়ে পুরুষ প্রজাপতি স্ত্রীকে শুক্রাণুর পাশাপাশি এমন অনেক পদার্থ উপহার হিসেবে দেয় যেগুলো পরবর্তীতে ঐ স্ত্রী প্রজাপতিটির অনেক কাজে দিবে। সাধারণত এসব উপহার ‘ন্যুপসিয়াল গিফট’ নামে পরিচিত। পরবর্তী প্রজন্ম শক্তিশালী করার পাশাপাশি, স্ত্রী প্রজাপতিটিকে প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করার জন্যও অনেক উপাদান প্রেরণ করা হয়। এসব উপহারের পরিমাণ সাধারণত ঐ পুরুষ বা স্ত্রী প্রজাপতিটি কতবার মিলনে অংশ নিয়েছে তার ওপরে নির্ভর করে। যেকারণে অনেক সময় প্রজাপতিকে ঘন্টার পর ঘন্টা মিলনে অংশ নিতে দেখা যায় আবার অনেক সময় মাত্র কয়েক মিনিট!
মূলত পুরুষ প্রজাপতির জনন পদার্থ শক্তিশালী করার কাজে ব্যবহৃত হবার কারণে স্ত্রী প্রজাপতিকে খুব কম সময়েই মাটি বা বালি থেকে খনিজ উপাদান সংগ্রহ করতে দেখা যায়। আর এই সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে বলা হয় পাডলিং । জনন পদার্থ শক্তিশালী করার পাশাপাশি জীবনকাল বৃদ্ধি করতেও এরা এই কাজ করে থাকে। এজন্য ফুলে বসার পাশাপাশি এরা ভেজা মাটি, কাঁদা, বালু, পঁচা ফল, বিভিন্ন প্রাণীর বিষ্ঠা ইত্যাদি নানান বস্তুর ওপরে বসে এবং শুড় দিয়ে প্রয়োজনীয় তরল সংগ্রহ করে।