বাঘায় উদ্ধার হওয়া অজগর সাপ অবমুক্ত
গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নের উত্তর বাঘা এলাকার ইন্দ্রজিৎ, চিত্তরঞ্জন ও পতন নম: বাঘা হাওড়ের খেটে খাওয়া জেলে। তাঁদের জালে ধরা পড়ে ছয়ফুট লম্বা ৮ কেজি ওজনের একটি সাপ। কৌতুহলবশত তারা সাপটিকে না মেরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এলাকারই সচেতন নাগরিক রাসেল আহমদ রাজু, কাওছার আহমদ ও সত্যরঞ্জন দাস সাপটি ধরার সংবাদ শুনেন রাতে। অবহিত করেন প্রাধিকারের সাবেক সভাপতি মনজুর কাদের চৌধুরীকে। আজ সকালেই জেলেদের বাড়ি নয়া টিল্লা থেকে সাপটি উদ্ধার করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি অধিকার ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন “প্রাধিকার” ও পরিবেশবাদি সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের কর্মীরা। এ সময় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তাঁদের সাথে কথা বলেন প্রাধিকারের মনজুর কাদের চৌধুরী ও ভূমিসন্তান বাংলাদেশের শোয়াইবুর রহমান। মনজুর কাদের চৌধুরী বলেন “এটি অজগর (Python) সাপ। এরা বিষহীন সাপ। সারা পৃথিবীতে এর সংখ্যা দ্রুত কমতেছে। অজগরের দাঁত অত্যন্ত শক্তিশালী, কিন্তু কোনো বিষদাঁত নেই। গ্রীবা স্পষ্ট, মস্তক প্রশস্ত এবং তুন্ড দীর্ঘ। অধিকাংশ অজগর কিছুটা বৃক্ষবাসী। বনে-জঙ্গলে এদের পাওয়া যায়। তবে নদী, হাওর কিংবা ঝিলের সন্নিকটে এদের বেশি দেখা যায়। পানিতে এরা স্থিরভাবে থাকে, প্রয়োজনে দক্ষতার সাথে সাঁতারও কাটতে পারে। তবে অজগর সাধারণত পানির কিনারায় তুন্ড বাইরে রেখে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবে ডুবে থাকে। অজগর স্তন্যপায়ী, পাখি এবং সরীসৃপজাতীয় প্রাণী নির্বিচারে খায়। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণী বেশি পছন্দ করে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর, খরগোশ, ছাগল, ভেড়া, শিয়াল এবং হরিণ শিকার করে। খাবার পূর্বে অজগর তার শিকার পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলে।”
উদ্ধার করা সাপটি আজ দুপুরে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের গহিন ছড়ায় সাপটি অবমুক্ত করা হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের আহবায়ক আশরাফুল কবির ও বনবিভাগের খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের প্রশাসন সহকারি আব্দুল কাদের।
সচেতন নাগরিক হিসেবে বাঘা এলাকার রাসেল আহমদ রাজু বলেন- “বাঘা হাওড়ের পশ্চিম পাশের অংশ সেনাবাহিনী অধিকৃত করে গভীর জলাশয় ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং বানাচ্ছে ফলে হাওড়ের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এরা জেলেদের লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। ব্যাপারটি টেকশই উন্নয়নের পরিপন্থি।”
ভূমিসন্তান বাংলাদেশের আশরাফুল কবির বলেন- “মানুষ আগের চেয়ে প্রাণিকুলের প্রতি যে সহানুভূতি দেখাচ্ছে, তাতে আমি আশাবাদী। আমাদের সংশ্লিষ্ঠ সরকারি দপ্তরগুলোকে দায়িত্বের সাথে কাজ করার জন্য আহবান জানাই। আবাসন সংকট, খাদ্য সংকটের কারনে প্রাণীকুল হুমকির মুখে। তাঁদের জন্য কি কোন জায়গা থাকবে না?”