বৃষ্টি ব্যাঙ : নিজ চামড়া পরিবর্তনে সক্ষম প্রথম উভচর প্রাণি !
মোঃ সাইফুল ইসলাম
ব্যাঙ উভচর শ্রেণীর প্রাণি এবং এরা মেরুদণ্ডী। বর্ষাকালে কিংবা একটুখানি বৃষ্টি হলেই ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাকে কবি সাহিত্যিকদের এরা যেমন প্রাণচঞ্চল করে তোলে, তেমনি জমির ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলের সুরক্ষাও দিয়ে থাকে। ৪-৫ বছর আগে যখন চট্টগ্রাম আসি তখন বৃষ্টি হলেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে, খেলার মাঠে ব্যাঙ ডাকতো। এখন আর ব্যাঙের ডাক শোনাই যায় না। আবার ইন্টার্নশীপের জন্য গত দুই মাস আগে গ্রামে চলে যাই। বৃষ্টি হল কিন্তু ব্যাঙের ডাক শোনা হয়নি। তাই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে হয়তো আগামী ৩-৪ বছর পর জন্ম নেয়া শিশুদের বইয়ের পাতায় ব্যাঙ চেনাতে হবে, না হয় প্লাস্টিকের ব্যাঙ দেখাতে হবে, কে জানে!
যাই হোক, তেমন টা যেন না হয়, সেই প্রার্থনা করেই আজ লিখছি নতুন সন্ধান পাওয়া এক প্রজাতির ব্যাঙ নিয়ে। পাংক রকার (অন্য নাম রেইন ফ্রগ) নামক ব্যাঙটিই হচ্ছে প্রথম আবিষ্কৃত উভচর প্রাণি যা নিজের চামড়ার গঠন পরিবর্তন করতে পারে!
উত্তর-মধ্য ইকুয়াডোরের আন্দিজ ক্লাউড ফরেস্টের সংরক্ষিত গভীর রেইন ফরেস্টে (সংরক্ষিত প্রকৃতির নাম-রিসার্ভা লাস গ্রালারিয়াস) রাতের অন্ধকারে হাঁটছিলেন ক্যাথেরিন ক্রায়নাক। হঠাৎ তিনি একটি উভচরের ডোরাকাঁটা ছদ্মবেশ দেখতে পান। সেটির শরীরের চামড়া কাঁটাযুক্ত ছিল। তিনি সেটাকে নতুন প্রজাতি ভেবে সাথে করে নিয়ে আসেন। কিন্তু বাসায় আনার পর অবাক হয়ে যান। লক্ষ্য করলেন ব্যাঙটি মসৃন চামড়ার প্রাণিতে পরিণত হয়েছে, যার গায়ে কোনো কাঁটা নেই। তিনি ভাবলেন হয়ত ভুলে অন্য ব্যাঙ নিয়ে এসেছেন!
তিনি ব্যাঙটিকে একটি পাত্রে রাখার ব্যবস্থা করলেন। পাত্রে কিছু শৈবাল দিলেন যাতে আরামদায়ক বাসস্থান হয়। এরপর হঠাৎ লক্ষ্য করলেন ধীরে ধীরে আবার এর শরীরের কাঁটা দেখা যাচ্ছে! বিষয়টি ছিল অদ্ভুত! তাই তিনি এর নাম দিয়েছিলেন পাংক রকার। তখন গবেষকরা প্রতি ১০ সেকেন্ড অন্তর অন্তর ক্যামেরার সাহায্যে ছবি তুলছিলেন আর লক্ষ্য রাখছিলেন। তাঁরা দেখছিলেন কিভাবে কাঁটা হয় কিংবা হারিয়ে যায়। কিন্তু কিভাবে এই কাঁটাগুলো তৈরি হয় তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এই ব্যাঙ নিজের শরীরের কাঁটা ও রঙে পরিবর্তন করছিল মূলত শৈবালে লুকিয়ে থাকার জন্য। শিকারে পরিণত হওয়া থেকে বাঁচতেই এরা এমন করে থাকতে পারে বলে গবেষকগণ মনে করেন।
দীর্ঘদিন গবেষণার পর ২৪ মার্চ, ২০১৫ ‘জ্যুলজিক্যাল জার্নাল অব দ্যা লিন্যিয়ান সোসাইটি’- তে ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নাম Pristimantis mutabilis হিসেবে যুক্ত হয়। আর এটিই প্রথম মেরুদণ্ডী প্রাণি যারা নিজেদের চামড়ার গঠন ও আকৃতি পরিবর্তন করতে সক্ষম। Pristimantis sobetes নামক ব্যাঙ, যেটি পূর্বেই আবিষ্কার করেছিলেন তাঁর সাথে এদের অনেক মিল থাকলেও চামড়ার গঠন পরিবর্তনে সক্ষম প্রথম উভচর প্রাণি হচ্ছে এই রেইন ফ্রগ। বর্তমানে গবেষকরা এই ব্যাঙের পূর্ব পুরুষদের খোঁজার চেষ্টা করছেন!
লেখক,
ইন্টার্নশীপ শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)