
বিরল ভেষজ- কুলঞ্জন
হুমায়রা হেদায়েত
কুলঞ্জন, একটি বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Alpinia malaccensis. এটি Zingiberaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত উদ্ভিদ। এর আদি বাসস্থান ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায়। তবে বাংলাদেশে ও এটি পাওয়া যায়। কিন্তু এটি এদেশে আজ বিলুপ্ত প্রায়। এটি মূলত ঔষধি ও অরনামেন্টাল উদ্ভিদ হিসেবে চাষ করা হয়।
কুলঞ্জন একটি চমৎকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদ। এটি ৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের দিকে ফুল আসে। এই ফুল পাতার উপর মোচাকৃতি খাপ দিয়ে ঘেরা থাকে যা গুচ্ছাকারে সাদা কুঁড়ি হিসেবে বেরিয়ে আসে। এটা দেখতে অনেকটা ক্রিসমাস ট্রি এর মতো। নিচের কুঁড়িটি প্রথম উন্মুক্ত হয়, দেখতে অনেকটা মুখের মতো যা উজ্জ্বল লাল শিরাযুক্ত। এই উদ্ভিদের পাতা জলপাই রঙের এবং এই পাতা ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই উদ্ভিদের জন্য আর্দ্র মাটি ও আবহাওয়া খুবই প্রয়োজন।
এটি প্রচুর ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। ব্রঙ্কাইটিস ,যক্ষ্মা ,শ্বাসযন্ত্রের রোগ, এজমা সহ চর্ম রোগ, স্নায়ুবিক দৌর্বল্য, বাত-ব্যাধি, পাইওরিয়া, অজীর্ণ, পেটের পীড়া ও ব্যথা -ফোলা রোগ নিরাময়ে এর জুড়ি মেলা ভার!!! কুলঞ্জনের ফুলের সাথে আদা ও এলাচি ফুলের সাদৃশ্য আছে, কারণ এরা একই গোত্রের। অনেকে কুলঞ্জনকে ‘সুগন্ধি বচ’ নামে আখ্যায়িত করলেও বচ গাছ আলাদা ।। কুলঞ্জন ছত্রাক রোধক হিসাবেও কাজ করে।
কুলঞ্জন নামক এই ভেষজ উদ্ভিদের আরেকটি কাব্যিক নাম আছে -‘ হৈমবতী ‘। আমাদের দেশেও এই উদ্ভিদটি জন্মে। রামগড়ের নটিলা পাহাড়ে কোন রকমে টিকে রয়েছে এই বিরল প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদটি। তবে কথায় আছে, ‘গেঁয়ো যোগী ভিক্ষা পায় না’। এখানে এই গাছেরও তেমন কদর নেই। অথচ, সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে এশিয়ার অনেক দেশে কুলঞ্জন মানুষের উপকার করে আসছে। নামী-দামী গানের শিল্পীরা কুলঞ্জন খেয়ে স্বরভঙ্গ ও স্বরের উন্নতি ঘটিয়ে কোকিল কন্ঠীর অধিকারী হয়েছিলেন!!! যাদের রেকর্ড করা গান গুলো আজও হারানো দিনের গান হিসাবে সমাদৃত আর আমরাও শুনে থাকি। ইদানিং জাপানে এর মূলে ফুসফুস ও শ্বাসনালির ক্যান্সার রোগের মহৌষধের অনুসন্ধানের কাজ চলছে ৷