হাঙ্গর মানেই মৃত্যুকূপ নয়, বরং ভিন্ন গল্প!
শাওন চৌধুরী
কক্সবাজার কিংবা সেইন্ট মার্টিনের কথা চিন্তা করলেই আমাদের মনের চিত্রপটে কতো সুন্দর সুন্দর ছবি ভেসে ওঠে, মনেহয় সারাজীবন এসব স্থানে কাঁটিয়ে দিতে পারলে জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকতো না। সাথে সাথে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, নানান প্রজাতির রঙ বেরঙের কোরাল, সামুদ্রিক আগাছা কিংবা আরও অনেক কিছুর কথা মনের আয়নাতে চলে আসলো… ভাবতেই কতো ভাল লাগছে, তাইনা?! এখন যদি হঠাৎ করে আমাদের হাঙ্গরের কথা মনে হয় তাহলে সবাই-ই সামুদ্রিক এলাকা থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করবো! মজার বিষয় হচ্ছে, আমরা সবাই ইংরেজি সিনেমার কল্যাণে এটা অন্তত জানি যে এরা সাধারণত উপকূল অঞ্চল এড়িয়ে চলে।
বিভিন্ন ইংরেজি সিনেমাগুলোতে কারণ ছাড়াই হাঙ্গরগুলোকে সবার চোখে ভিলেন বানিয়ে রেখেছে যার কারণে ‘হাঙ্গর’ নাম শুনেই আমাদের মনে একটা ছবি ভেসে ওঠে: নীল পানিতে সাদা একটা প্রাণী যার দাঁতগুলো অনেক বড় বড় এবং চোখা এবং এর সাহায্যে এরা মানুষ দেখলেই আক্রমণ করে বসে। আর একবার মানুষের দেখা পেলে এরা অনেক সময় নৌকা-সমেত সবাইকেই মেরে ফেলে! আমাদের মধ্যে শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষের এটাই মনে হয়। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, ইংরেজি সিনেমাতে যেই হাঙ্গর দেখানো হয় ঐ হাঙ্গরের গত ৪৩০ বছরে মানুষকে কামড়ানোর ঘটনা ঘটেছে মাত্র দু’বার! বিশ্বাস হচ্ছে না তো? ‘Dusky Shark’ লিখে গুগলে খোঁজ করলেই ফলাফল পেয়ে যাবেন।
হাঙ্গর হচ্ছে এক ধরণের তরুণাস্থি সমৃদ্ধ মাছের গ্রুপ। সমগ্র পৃথিবীতে এদের ৪০০ প্রজাতির (ডব্লিউ.ডব্লিউ.এফ. এর মতে) দেখা মেলে এবং বাংলাদেশে সংখ্যা মাত্র ৩০! সবথেকে উঁচু পর্যায়ের শিকারি হবার কারণে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার্থে এদের ভূমিকা অপরিসীম। শুনলে অবাক হবেন, এরা কখনো স্বেচ্ছায় মানুষকে আক্রমণ করে না। সামুদ্রিক পানিতে অনেক ধরণের বালুকণা থাকে যার কারণে অনেক দেশের পানি অনেক বেশি পরিষ্কার হয় আবার অনেক দেশের পানিতে একহাত দূরের বস্তুও পরিষ্কার দেখা যায় না। একারণে অনেক সময় হাঙ্গরেরা দূরের মানুষকে বুঝতে না পেরে নিজের শিকার মনে করে আঘাত করে।
সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর হাঙ্গরের আঘাতপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন কিন্তু মানুষের দ্বারা এদেরকে হত্যা করার সংখ্যা শুনলে চেয়ার থেকে পড়ে যাবার উপক্রম হবে! প্রতি বছর বিভিন্ন কারণে প্রায় ১০কোটি হাঙ্গর শিকার করা হয়। শিকারিরা এদের মাংস বিদেশে পাচার করে এবং মাঝে মাঝে শুধু পাখা কেটে বাকি অংশ ফেলে দেয়। এদের পাখা থেকে স্যুপ তৈরি হয় এবং সেটি বিভিন্ন দেশে খুবই জনপ্রিয় খাদ্য।
সময়ের সাথে এদের বৃদ্ধিপ্রাপ্তির হার খুবই কম এবং পূর্ণতা পেতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পূর্ণতা প্রাপ্তির আগেই এরা মানুষের হাতে মারা যায় যার কারণে দিনদিন এদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এরকম করে হাঙ্গর নিধন চলতে থাকলে পৃথিবী থেকে এদের অস্তিত্ব মুছে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।