প্রাণ-বৈচিত্র্যে ভরপুর স্বর্গরাজ্য গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক !

তৌকির ইসলাম 

আমাদের যখন পশু-পাখি দেখতে ইচ্ছা হয় চিড়িয়াখানায় যাই, গিয়ে দেখে আসি খাঁচায় বন্দী প্রাণী। কিন্তু মাঝে মাঝে তো ইচ্ছা জাগতেই পারে এই প্রাণীগুলো বনে কিভাবে থাকে সেটা দেখার। তার জন্য রয়েছে সাফারি পার্ক। আমরা এখন প্রায় সবাই জানি সাফারি পার্ক জিনিসটা আসলে কী! সাফারি পার্ক হল প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এমন এক ধরনের পার্ক যেখানে বন্য জীবজন্তু মুক্তভাবে বিচরণ করে, আর দর্শনার্থীরা বন্দী অবস্থায় থাকে! ব্যাপারটা এমন, আমরা যারা দেখতে যাই তারা খাঁচায় বন্দী থাকি আর জীবজন্তু মুক্ত অবস্থায় থাকে।

unnamed (2)

ঢাকার অদূরে গাজীপুরে গড়ে উঠেছে এমন একটি সাফারি পার্ক, যা এখন পশুপাখি প্রেমিদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক”, এটি মূলত বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন। এটি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও সদর উপজেলায় অবস্থিত। খণ্ড খণ্ড শালবনের ৪৯০৯ একর বনভূমিতে এই পার্কটি অবস্থিত।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় প্রজাতির বিভিন্ন বন্য প্রাণী। এছাড়া সাফারি পার্কে রয়েছে নানা রকমের দর্শনীয় স্থাপনা যেমন, কোর সাফারি, সাফারি কিংডম, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, অবমুক্ত ও বেষ্টনীতে রাখা বন্যপ্রাণী, ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম। এই পার্কের মূল উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ। বাংলাদেশের বিরল ও বিলুপ্ত প্রায় বন্য প্রাণীকে নিজ আবাসস্থলে সংরক্ষণ । এছাড়া ইকো ট্যুরিজম সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

এটি একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ তথ্যবহুল পার্ক, এখানে রয়েছে কয়েকটি কৃত্রিম হ্রদ যা এই পার্কটির সৌন্দর্‍য্য  আরও কয়েকগুন বৃদ্ধি করেছে। নিরাপদ এবং সুরক্ষিত ছোট বাসে চড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণরত সেখানে অসংখ্য দেশি-বিদেশি বন্য প্রাণী দেখা যায়। এখানে মিনিবাসে চড়ে প্রথমেই ঢুকতে হয় বাঘের ডেড়ায়, সেখান থেকে চলে যেতে হবে সিংহের এলাকায়। তারপরই রয়েছে সাদা বাঘ, সাদা বাঘের পর পরই শুরু হয় ভালুকের সীমানা। প্রত্যেকটি এলাকাতেই বাস কিছুক্ষন অপেক্ষা করবে। মাঝে মাঝে এমনও হয় যে প্রাণীটি আপনার বাসের কাছে এসে আপনার সাথে হাত মেলাতে চাইছে! কিন্তু বাসটি নিরাপদ হওয়ায় সেখানে কোন ঝুঁকি নেই। ভালুকের সীমানার পর শুরু হয় সবুজের সমারোহ, সেখান থেকে দেখা যায় বিভিন্ন হরিণের দল দৌড়ে বেড়াচ্ছে। আরও পুলকিত করে লম্বা লম্বা জিরাফ।

unnamed (1)

সাফারি কিংডম এ রয়েছে পাখি, মাছ, বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি, ময়ূর, হাতি এদের বিশাল সমারোহ। এর মধ্যে সব থেকে বেশি নজর কাড়ে পাখি। অনেক সময় ম্যাকাও, গ্রে প্যারট, অন্যান্য রিং নেক বিদেশি টিয়া গুলো হাতে ঘাড়ে উড়ে এসে বসে। তখন এমন অনুভূতি হয় যেন এরা আমার কত দিনের চেনা, কত পুরনো বন্ধু! প্রজাপতি আর ময়ূর ও কম কিসে! এদের সৌন্দর্য্য দেখলেও আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। বন ছাড়া এই সাফারি পার্কই এমন জায়গা যেখানে এই সৌন্দর্‍য্য গুলো একদম কাছে থেকে উপভোগ করা সম্ভব।

unnamed (6)

আরও রয়েছে কুমির, বানর, বন রুই, জেব্রা ইত্যাদি প্রাণী। হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে আসতে পারবেন পুরো সাফারি কিংডম। এখানে রয়েছে বিশাল একটি আঁকা বাঁকা হ্রদ। সেখানে রয়েছে কয়েক প্রজাতির পরিযায়ী হাঁস। এখানে ইচ্ছা করলে আপনি প্যাডেল বোট এ করে ঘুরতে পারবেন। আর পার্কে ঢুকতেই যে কৃত্রিম হ্রদটি চোখে পড়বে তাতে স্থাপন করা আছে মাছ, কুমির, এছাড়াও য়েছে কয়েকটি ফোয়ারা!

unnamed (3)

ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউসিয়াম এ রয়েছে প্রায় দুই হাজার প্রজাতির মেরুদণ্ডী এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহাবশেষ, স্পেসিমেন ও স্টাফিং। এছাড়াও একটি ভিন্ন রকমের জাদুঘর চোখে পড়বে, যাতে সংগৃহীত রয়েছে পৃথিবীর সকল ডিম্বপ্রসবকারী প্রাণীর ডিম।

পার্কের আরেকটি আকর্ষণ হল এর খাবার রেস্টুরেন্ট দু’টি। একটি টাইগার পর্যবেক্ষণ রেস্টুরেন্ট অপরটি লায়ন পর্যবেক্ষণ রেস্টুরেন্ট। প্রথমে নামগুলো অদ্ভুদ মনে হলেও পরে রেস্টুরেন্টে গেলে আপনি সব বুঝতে পারবেন। টাইগার রেস্টুরেন্টে গেলে আপনি খাবারের পাশাপাশি সেখান থেকে বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র সরাসরি দেখতে পারবেন। সিংহের ক্ষেত্রেও তাই। পার্কে থাকাকালীন সময়ে আপনাকে অনুসরণ করতে হবে কিছু নিয়ম-কানুন ও সতর্কতা।

611

সাফারি পার্কের বন্য প্রাণীদের মাঝে গেলে আপনি দেখতে পাবেন প্রানিদের প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবনযাপন। নিজেকে মিলিয়ে ফেলতে পারবেন সেই প্রকৃতির সাথে এবং উপভোগ করতে পারবেন অনাবিল এবং অকৃত্রিম আনন্দ।

unnamed (7)

লেখক;
প্রাণিবিদ্যা বিভাগ
ঢাকা কলেজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics