নীরব বন্ধু মাটি; সোনার চেয়ে খাঁটি

মোঃ সাইফুল ইসলাম

মাটি বা মৃত্তিকা হচ্ছে পৃথিবীর উপরিভাগের নরম ও দানাদার আবরণ। পাথরের গুড়া ও জৈব পদার্থ মিশ্রিত হয়ে মাটি গঠিত হয়। খাদ্য উৎপাদন, ঘরবাড়ি নির্মাণসহ সর্বক্ষেত্রে সুস্থ মাটির গুরুত্ব অপরিসীম। মাটি আমাদের নির্বাক বন্ধু।

সুস্থ মাটি আমাদের বাস্তুতন্ত্রের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি খাদ্য, জ্বালানি, বস্ত্রের যোগান দেয়। তাছাড়া চিকিৎসাক্ষেত্রেও এর গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায়না। মাটি কার্বন চক্র, পানি চক্র তথা পানি সংরক্ষণ ও পরিশোধনের কাজেও সহায়তা করছে।

soil2

আন্তর্জাতিক খাদ্য বিষয়ক সংস্থা ‘ফুড এন্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন’ (FAO) থাইল্যান্ড সরকারের উদ্যোগে ২০০২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা দিবস পালিত হয়ে আসছে। মাটির পরিবেশ রক্ষায় থাই রাজা ভূমিবল আদোল ইয়াদেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাই তার জন্মদিনকেই মৃত্তিকা দিবস হিসেবে বেছে নেয়া হয়। মাটি বিষয়ে সতেচনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের ৬০ হাজারের বেশি মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে আমাদের দেশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশবাদী সংগঠন। দিনটি উপলক্ষে আমাদের দেশেও নানাবিধ কর্মসূচী হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতি সহ আরও অনেকে নানাভাবে দিবসটি উৎযাপন করে থাকে। জাতিসংঘ ২০১৫ সালকে ‘আন্তর্জাতিক মাটি বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

FAO এর বরাত দিয়ে জানা যায় ৮০৫ মিলিয়নেরও বেশি লোক ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মেলাতে হলে আনুমানিক শতকরা ৬০ ভাগ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। সুতরাং খুব সহজেই বোঝা যায় মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা রক্ষা কতটা জরুরী।

FAO এর মহাপরিচালক জোস গ্রাজিয়ানো দ্য সিলভা এর মতে বিশ্বের মৃত্তিকা সম্পদের ৩৩% ক্ষয় হয়ে গেছে। তাছাড়া মানুষের চাপে মাটির অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। বাড়ছে মাটিক্ষয়, লবণাক্ততা, পুষ্টিক্ষমতা হ্রাস, অম্লতা, অস্থিতিশীল ভূমি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। যদি কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করা না হয় তবে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট আবাদী জমির পরিমাণ ১৯৬০ সালের এক তৃতীয়াংশ থেকে কমে এক চতুর্থাংশে দাঁড়াবে। সাধারণত ১ সে.মি. মাটি গঠিত হতে ১০০০ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। সেখানে ৩৩% ক্ষয়ে যাওয়া কতটা চিন্তার বিষয় ভাবুনতো!

soil1

আমরাও মাটি বিষয়ে সচেতন হয়েছি! আমাদের দেশেও উৎযাপিত হবে মৃত্তিকা দিবস। জনগণকে সচেতন করার জন্য অনেক সভা সেমিনার হবে। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন! কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু উঁচু পাহাড়ের বিপরীত পাশে উদ্দেশ্যহীনভাবে গিয়েছিলাম। সোজা রাস্তা নেই। তাই বিভিন্ন পথ ঘুরে ঘুরে যেতে হয়েছিল। একজন পাহারাদার বাঁধা দিলেন। দেখলাম সাইনবোর্ড। ক্রয়সূত্রে এই জমির (পাহাড়কে জমি বানিয়ে ফেলছে!) মালিক অমুক গং! এর রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের অধিকার কেবল….। সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। রক্ষণাবেক্ষণ কি বুঝিনি। তবে দেখেছি পাহাড় কেটে কেটে সেখান থেকে মাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জানিনা রাস্তার পাশের সব পাহাড়ের বিপরীত পাশ থেকে একই উপায়ে কাটা হচ্ছে, নাকি শুধু আমার দেখা ঐ একটাই কাটা হচ্ছে।

কেঁচো, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সহ প্রায় এক চতুর্থাংশ জীববৈচিত্র্য মাটিতে বাস করে। এই মাটিতেই জন্ম নেয় আমাদের জীবন বাঁচানো পুষ্টিকর খাবার। মাটির স্বাস্থ্য ধ্বংস হলে আমাদের ধ্বংস নিশ্চিত। তাই সরকার ও আমাদের উচিৎ মাটির পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

লেখক – চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics