প্রকৃতিতে সালফারের ঘাটতি; বিশেষজ্ঞ কী বলছেন? (শেষপর্ব)
দিব্য কান্তি দত্ত
গতপর্বে থেমেছিলাম প্রকৃতিতে সালফার কমে যাওয়ায় সালফার চক্রে সৃষ্ট ব্যাঘাত নিয়ে। এ পর্বে সেখান থেকেই শুরু করব…
শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে সালফারের নির্গমন কমাতে স্ক্রাবার ব্যবহার করা হচ্ছে নতুবা তারা কম সালফার সমৃদ্ধ পশ্চিমা কয়লার দহনে কাজ চালাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে বর্তমানে বায়ুমণ্ডলের পাশাপাশি কৃষিজমি এবং নদীতে সালফার জমা হওয়ার পরিমাণ কমে গেছে। ভূ-জৈবরসায়নবিদ মার্ক ডেভিডের মতে, “যখন থেকে বায়ু পরিষ্কার রাখার জন্য নীতিমালা এবং সংশোধনীকে গুরুত্বসহকারে নেয়া হয়েছে তখন থেকেই সালফারের মজুদ কমে যাচ্ছে। প্রতিবছর স্বাভাবিকভাবে যতটুকু সালফার মজুদ হওয়ার কথা তার মাত্র ২৫ শতাংশ জমা হচ্ছে। ফলাফলস্বরূপ, কিছু ক্ষেত্রে কৃষকদের জমিতে আলাদা সালফার যোগ করতে হচ্ছে”। তার মতে, যারা মিহি দানার গঠনবিন্যাসের মাটিতে চাষ করেন, যেখানে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি সেখানে হয়ত বর্তমানে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছেনা। তবে আনুমানিক ১০ থেকে ২০ বছর পরে তাদের কৃষিজমিতে আলাদাভাবে সালফারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে যারা দুর্বল গঠনবিন্যাসের মাটিতে ফসল উৎপাদন করছেন তাদের জন্য হয়ত এই পরিস্থিতি আসন্ন। ফসল উৎপাদন কমে গেলে তাদের মাটির সালফার পরীক্ষা অত্যাবশ্যক এবং সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের কৃষিজমিতে সালফার সার আলাদাভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হবে।
সালফার কেন গুরুত্বপূর্ণ তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডেভিড বলেন, “সালফার প্রধানত দুটি উৎস থেকে প্রকৃতিতে আসে। এক- বাতাস থেকে, যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানীর দহনের দ্বারা সালফার জমা হয় এবং দুই- ভূগর্ভস্থ পানি, যেখানে পানি কয়লা অথবা পাইরাইটের মত আকরিকের সংস্পর্শে আসে। বিভিন্ন ছিদ্রের মাধ্যমে এই সালফার প্রবাহিত হয়ে মাটি থেকে বেরিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে তা গাছ দ্বারা গৃহীত হয়। এর ফলে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং তা ফসলি জমিতে পরিণত হয়”। ইলিনয়িসের অধিকাংশ জমিই সালফার সার গ্রহন করেনা। এমব্যারাস এবং কাস্কাস্কিয়ার জলবিভাজিকায় অ্যামোনিয়াম সালফেট পাওয়া যায় যা শুধু নাইট্রোজেন না, সালফারের অভাবও পূরণ করে।
ডেভিড এবং তার দল মধ্যপূর্ব ইলিনয়িসের তিনটি নদী থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে সমীক্ষাটি চালনা করেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইলিনয়িসের সেই অংশটির উত্তরপূর্ব থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকে গেলে ভূগর্ভস্থ পানির কয়লার কিংবা পাইরাইটের স্তরের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা কমে যায়। সমীক্ষাটি দীর্ঘ হওয়ার ফলে গবেষকেরা এই অঞ্চলটির জলবিভাজিকায় সালফারের অনুপ্রবেশ এবং নির্গমন বেশ ভালভাবে লক্ষ্য করার সুযোগ পেয়েছেন।
দীর্ঘ গবেষণার ফলাফলস্বরূপ প্রাপ্ত উপাত্ত নিয়ে গবেষণাপত্রের সহলেখক লোয়েল জেনট্রি বলেন, “সাম্যবস্থা ঋণাত্মক। যে পরিমাণ সালফার ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন তা বায়ুমণ্ডল সরবরাহ করতে পারছে না। সেইসাথে ঘাটতি কৃষিজমিতেই। কৃষিজমিতে জৈব পদার্থে প্রচুর পরিমাণে সালফার রয়েছে, কিন্তু তা অত্যন্ত ধীরে বিয়োজিত হয়। ফলে তা শস্যের চাহিদার সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনা এবং এই পরিস্থিতিতেই কৃষকদের সালফার সার যোগ করার প্রয়োজন পড়বে”।
১৯৮০ সালে ডেভিড এসিড বৃষ্টির (যার প্রধান উপাদান সালফার) প্রভাব নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার মতে, তখন কেউ ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেনি যে একসময় সালফার কৃষিজমিতে মাথাব্যাথার কারণ হবে। কারণ, তখন কয়লার দহনের ফলে প্রচুর পরিমাণ বায়ুমণ্ডলীয় সালফারের মজুদ ছিল। বিগত দুই দশক ধরে সংগৃহীত ডেভিডের নমুনাগুলো প্রাথমিকভাবে কৃষিজমিতে বিভিন্ন ছিদ্র দিয়ে প্রবাহিত নাইট্রেট নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হত। তার মতে, নাইট্রেটের মত না হলেও মধ্যপশ্চিমাঞ্চলীয় অববাহিকা এবং নদীগুলোতে সালফেট তেমন একটা সমস্যার বিষয় নয়।
ডেভিড আশা করছেন যে, কৃষিক্ষেত্রে সালফারের ব্যবহার নিয়ে এবং ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি প্রথম গবেষণা এবং পদক্ষেপ। সালফার নিয়ে অধিকাংশ গবেষণাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনাঞ্চলের জলবিভাজিকায় যেখানে হ্রদ্গুলো অম্লীয় এবং যেসব এলাকায় মারাত্মক এসিড বৃষ্টি হয়ে থাকে। অতএব, তার এই গবেষণা কৃষিক্ষেত্রে সালফারের ভূমিকা ও গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা এবং সালফার ব্যবহারের প্রবণতা তৈরিতে ও উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তার আশাবাদ।