টেকসই উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং আমাদের যা করণীয়!
মিফতাহ জান্নাতুল ফেরদৌস
নীল সমুদ্রের বিশাল জলরাশি আর আছড়ে পরা ঢেউ যেমন অপরিমেয়, ঠিক তেমনি অফুরান এই সাগর, মহাসাগরের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকা সম্পদরাজি। প্রাণসম্পদের মধ্যে তিমির মতো বিরাট স্তন্যপায়ী প্রাণী ছাড়াও সমুদ্রসীমায় রয়েছে নানা ধরণের মূল্যবান মাছ, প্রবাল, ঝিনুক-শামুক, চিংড়ি, কাঁকড়া, কাছিম সহ আরো অনেক জানা-অজানা জীববৈচিত্র। অন্যদিকে নিষ্প্রাণ সম্পদের মধ্যে আছে সামুদ্রিক লবণ, তেল, গ্যাস ইত্যাদি।
জাতিসংঘের প্রস্তাবিত “টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি)” এর ১৪নং উদ্দেশ্যটি তাই আবর্তিত হয়েছে টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগর, সাগর আর সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রতি আলোকপাত করে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইডের শতকরা ৩০ভাগ শোষণ করে নেয় সমুদ্র, আবার এই সাগর তলের বিভিন্ন ফাইটোপ্ল্যাংক্টনই সরাবরাহ করে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের প্রায় ৫০ভাগ। এভাবে জলবায়ু ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের এক মূখ্য ভূমিকা পালন করে সাগর, মহাসাগর।
ধারণা করা হয়, সমুদ্র নির্ভর অর্থনীতির অবদান তিন থেকে ছয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম নয়। বিশ্ববাণিজ্যে সমুদ্রপথ ব্যবহার, টেলিযোগাযোগ খাতে সাবমেরিন কেবল, খাদ্য হিসেবে সামুদ্রিক মাছ, সমুদ্র তীরবর্তী পর্যটনশিল্প ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ খাত জিএনপি ও জিডিপিকে সমৃদ্ধ করে বিশ্ব অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নকে দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।
টেকসই উন্নয়নের জন্য সমুদ্র এবং সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণে এসডিজির ১৪ নম্বর উদ্দেশ্যটি সহ প্রতিটি উদ্দেশ্যের আওতায় কিছু অগ্রগতি নির্ধারণী সূচক রয়েছে।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সমুদ্র দূষণের পরিমাণ কমিয়ে আনা, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ, প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্রের এসিডিফিকেনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ, মৎস্য চাষের অপরিকল্পিত ও অবৈধ উপায়গুলো বাজেয়াপ্ত করা, ২০২০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সকল সংকট নিরসন।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার এ গোলটি অর্জনে জাতিসংঘের পাশাপাশি যেমন গুরুত্ব বহন করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বসবাসকারী জনগণ ও সমুদ্রকেন্দ্রিক জীবিকা আহরণে নিয়োজিত সকলের অবদান, ঠিক তেমনি প্রত্যেক সচেতন নাগরিকও এতে ভূমিকা পালন করতে পারেন। প্রবাল দ্বীপগুলোর খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে, প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার কমিয়ে এনে এবং সমুদ্রে তা নিক্ষেপ না করে, উপকূলীয় অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে হোটেল-রিসোর্ট জাতীয় কোনো ইমারত নির্মাণ না করে এবং সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার মানুষের জীবিকা অর্জনের প্রক্রিয়াগুলো পরিবেশবান্ধব উপায়ে পরিচালিত করার দরুণ আমরা সাধারণ মানুষেরাও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণে তথা টেকসই উন্নয়নে অসামান্য প্রভাব রাখতে পারি।
তথ্যসূত্রঃ
১) UNchronicle.org
২) Marine Conservation-Wikipedia
লেখক;
মিফতাহ জান্নাতুল ফেরদৌস
পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট (২য় বর্ষ)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়