প্রজাপতির খাবার চোখের পানি !
শাওন চৌধুরী
আমাদের এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে বিস্ময়ের এক অপরূপ ভান্ডার। সামান্য বালুকণা থেকে শুরু করে চন্দ্র-সূর্য সবকিছুতেই এমন কিছু বিস্ময় লুকিয়ে রয়েছে যা আমাদের ভাবনার জগতকে এক নতুন ধারাতে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। তেমনই এক বিস্ময়কর গল্প নিয়ে আজকের এই লেখা।
আমরা সবাই আমাদের চারপাশে হাজারো রকমের প্রজাপতি দেখি, বিচিত্র তাদের কাজকর্ম, বিচিত্র তাদের আকার-আকৃতি। আমরা সবাই জানি যে ফুলের মধু খেয়ে বেড়ানোই প্রজাপতির প্রধান কাজ। কিন্তু এর বাইরেও যে এরা কত রকমের কাজ করে যাচ্ছে এবং কত ধরণের তরল পদার্থ খাবার হিসেবে গ্রহণ করছে তা আমাদের বেশিরভাগের কাছেই অজানা।
প্রজাপতির খাবারের মধ্যে রয়েছে নানান ধরণের ফুলের মধু। এছাড়াও এরা নানান সময়ে নানান ধরণের তরল পদার্থ গ্রহণ করে। মিলনের সময়ে পুরুষ প্রজাপতির শুক্রাণু এসব তরল গ্রহণের মাধ্যমে অনেক বেশি কার্যক্ষম হয় বলেই এমনটা করে থাকে বলে ধারণা করা হয়। একারণেই একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে, অনেক সময় পুকুর কিংবা নদীর পাশে সারিবদ্ধভাবে এদেরকে কাদামাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়! আসলে তখন এরা ঐ ভেজা মাটি থেকে নানান ধরণের তরল পদার্থ ও লবণ সংগ্রহ করে থাকে।
আবার মাঝে মাঝে ঐ খনিজ পদার্থ গ্রহণের জন্য এরা এমন কিছু কাজও করে থাকে যেগুলো খুবই উদ্ভট! যেমন, কিছু হলুদ সালফার প্রজাপতি কচ্ছপের চোখের পানি গ্রহণ করার জন্য মরিয়া হয়ে যায়। বিশিষ্ট আলোকচিত্রশিল্পী জেফ ক্রেমারের ছবিতে বিষয়টি অনেক সুন্দরভাবে ফুঁটে উঠেছে।
মাঝে মাঝে দেখা যায় অসংখ্য প্রজাপতি এই ধরণের কচ্ছপের পেছন পেছন কিংবা আশ-পাশ দিয়ে উড়ছে। এই ব্যপারটি প্রথম লক্ষ্য করেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রশিল্পী জেফ ক্রেমার এবং জীববিদ ফিল টরেস। এসব হলুদ সালফার প্রজাপতি এবং কমলা জুলিয়া প্রজাপতিরা অনেক সময় ঐসব টেরাপিনদের চোখের পাশে বসে শুঁড়ের সাহায্যে লবণজাতীয় তরল পদার্থ গ্রহণ করে। এটা আসলেই অনেক বিস্ময়কর এক আচরণ।
এই দৃশ্য আমাজান জঙ্গলে প্রায়শই দেখা যায়। অনেক দূরত্ব পর্যন্ত সোডিয়ামের কোন উৎস না থাকার কারণেই বিবর্তনের মাধ্যমে এই প্রজাপতিগুলো প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য এধরণের আচরণ রপ্ত করেছে।
উপরের ছবিতে কচ্ছপগুলো নদীর তীরে বসে রোদ পোহাচ্ছে আর প্রজাপতিগুলো তাদের মাথার আশেপাশে ঘুরতে ঘুরতে চোখ থেকে ঐসব তরল পদার্থ গ্রহণ করছে। একসাথে অনেক প্রজাপতিকেও অনেক সময়ে একটা কচ্ছপের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, এসব কচ্ছপদের চোখের জলও মানুষের চোখের জলের মতোই লবণাক্ত।
কচ্ছপগুলো প্রজাপতির প্রতি অনেক সদয় আচরণ করে। যখন প্রজাপতিগুলো তাদের শুঁড়ের সাহায্যে লবণ সংগ্রহ করে তখন এরা ব্যাপারটিকে অনেক উপভোগ করে। কিন্তু ব্যাপারটি ঠিক ততোটাই উল্টো হয় যখন বিভিন্ন মৌমাছি এরকম করতে আসে! মৌমাছিগুলো এদের কাছাকাছি আসলেই এরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে যার কারণে ঐসব মৌমাছিগুলো প্রজাপতির মতো লবণ গ্রহণ করতে পারেনা। প্রকৃতিতে কিছু কিছু ব্যাপার চিরকাল রহস্যজনক হয়েই থেকে যায়, প্রজাপতির জন্য কচ্ছপের এই সদয় আচরণও হয়তো তার ব্যাতিক্রম নয়, কে জানে!