
ইবোলা সম্পর্কে যে ১০ টি বিষয় জেনে রাখা উচিৎ
মারাত্মক ইবোলা ভাইরাসের একটি প্রজাতি যার উৎপত্তি পশ্চিম আফ্রিকা এবং যেটি গোটা বিশ্বে ভীতি ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে তা যেকোনো সময় উপমহাদেশ কিংবা আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়বে না এমন গ্যারান্টি দেওয়া যায় না।
ডাক্তাররা কোন প্রকার সীমানা নির্ধারণ ছাড়াই ইবোলাকে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এ রোগে মৃত্যুহার ৯০% এরও বেশি। এর কোন ভ্যাক্সিন বা টিকা নেই। The world’s health agencies এই সংক্রামক রোগ নিয়ে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছেন।
এখনও মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজার নিশ্চিত হওয়া গেলেও সঠিক সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। Centers for Disease Control and Prevention নতুন একটি ভয়ানক তথ্য দিয়েছেন। তা হলো যদি নতুন কিছু আবিষ্কার না হয় এবং কমিউনিটির আচরণের পরিবর্তন না হয় তবে জানুয়ারী মাসের মধ্যে লাইবেরিয়া এবং সিয়েরালিয়নে ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫,৫০,০০০ থেকে ১.৪০ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে।
বর্তমানে গিনি, লাইবেরিয়া, সিয়েরালিয়নে এই মহামারী রোগ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া এটি অনেক বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে।
যখন এই রোগের প্রাদুর্ভাব পশ্চিম আফ্রিকায় আবদ্ধ আছে তখন রোগটি সম্পর্কে সর্বত্রই সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। আপনার কি নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ? সম্ভবত না, কারণ একটু জ্ঞান থাকলেই ইবোলা ক্ষতিসাধন করতে পারবেনা। এখানে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হল:
১। ইবোলা ভাইরাস রোগ (EVD) পূর্বে একে ইবোলা হেমোরেজিক ফিভার বলা হত। তবে প্রায়ই একে ইবোলা বলা হয়।
২। ১৯৭৬ সালে সুদান এবং কঙ্গোতে প্রথম ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কঙ্গোর ইবোলা নদীর কাছে একটি গ্রামে এই প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। তাই এর নাম হয় ইবোলা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রাথমিক উৎস হিসেবে মানুষ ও বন্য প্রাণীর সংস্পর্শকেই দায়ী করেছেন। এই সংস্পর্শ হচ্ছে মূলত শিকার, জবাই করা ও মাংস প্রস্তুতির মাধ্যমে।
৩। ধারণা করা হয় Pteropodidae গোত্রের ফলখাদক বাদুড় (Fruit bat) এই ভাইরাসের পোষক। কিন্তু ভাইরাসটি অন্যান্য আক্রান্ত প্রাণী যেমন শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বানর, বন্য এনটিলপের (হরিণবিশেষ) দেহ নিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
৪। বর্তমানের প্রাদুর্ভাব প্রথম সনাক্ত করা হয় ২০১৪ সালের মার্চে। এটি গিনিতে শুরু হয়ে ভূ-সীমান্ত দিয়ে সিয়েরালিয়ন, লাইবেরিয়া এবং আকাশ পথে নাইজেরিয়াতে যায়। সারা বছর বিচ্ছিন্নভাবে প্রাদুর্ভাব ঘটলেও এবারই সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যু ঘটিয়েছে।
৫। ইবোলার কারণ হচ্ছে Filoviridae গোত্রের Ebolavirus গণের ভাইরাস। ইবোলা ভাইরাসের পাঁচটি স্ট্রেইন আছে। এরা হচ্ছে:
Ebola virus (Zaire ebolavirus); Sudan virus (Sudan ebolavirus); Taï Forest virus (Taï Forest ebolavirus, formerly Côte d’Ivoire ebolavirus); এবং Bundibugyo virus (Bundibugyo ebolavirus).
সর্বশেষ আরেকটি আছে Reston virus (Reston ebolavirus) যেটা ননহিউম্যান প্রাইমেট বা মানুষ ছাড়া অন্য মেরুদণ্ডীদের আক্রমণ করে কিন্তু মানুষকে নয়।
৬। ইবোলা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। এটি সরাসরি কেটে যাওয়া চামড়া, মিউকাস মেমব্রেন, পায়খানা-প্রসাব, লালারস, বমি ও বীর্যের মাধ্যমে ও সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়।
এটি বাতাস, পানি ও খাদ্যের (ব্যতিক্রম: বন্য শিকারের মাংস) মাধ্যমে ছড়ায় না। মানুষ উপসর্গ না দেখানো পর্যন্ত সংক্রামক হয় না।
৭। সাধারণত ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ২-২১ দিন (গড়ে ৮-১০ দিন) পর রোগের লক্ষণ দেখা যায়। প্রাথমিক লক্ষণগুলো হল: হঠাৎ করে জ্বর শুরু হওয়া, ক্লান্তি, পেশীতে ব্যথা, মাথা ধরা এবং গলা ব্যথা। পরবর্তীতে বমি, ডায়রিয়া, র্যাশ, কিডনী ও যকৃতের কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার লক্ষণ এবং কিছু ক্ষেত্রে অভ্যন্ত্ররীণ ও বাহ্যিক রক্তপাত শুরু হয়। রোগী অঙ্গের কার্যক্ষমতা বন্ধ এবং বিষক্রিয়ার কারণে মারা যায়।
৮। এর নির্দিষ্ট কোন টিকা এখনও ফলপ্রসূতভাবে মানুষে ব্যবহৃত হয়নি। যদিও ZMapp নামক একটি ঔষধ সফলভাবে ১৮ টি আক্রান্ত বানরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়েছে এবং দুটি রোগীকে (মানুষ) পরীক্ষামূলকভাবে ইউনাইটেট এস্টেটস এ চিকিৎসা করা হচ্ছে যারা আফ্রিকায় আক্রান্ত হয়েছিল।
এটি ছিল অতীব সংক্ষিপ্ত চিকিৎসা। সহায়ক চিকিৎসা (ওরাল এবং শিরায় রিহাইড্রেশনের চিকিৎসা) এবং নির্দিষ্ট লক্ষণগুলোর চিকিৎসা করলে টিঁকে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৯। ইবোলা যখন পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে মারাত্মকভাবে ছড়াচ্ছে তখন CDC জানান ইউনাইটেট এস্টেটস এর প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি খুবই কম।
১০। হার্ভাট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ প্রকাশ করেন যে শতকরা ২৫ ভাগের অধিক আমেরিকানরা ভয়ে আছেন যে তাদের পরিবারের কেউ না কেউ হঠাৎ করে ইবোলায় আক্রান্ত হতে পারে। সম্ভাব্য কারণ হল বিমানের যাত্রীদের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভাইরাস। CDC বলেন, “যখন কোন আক্রান্ত ব্যক্তি বিমান দিয়ে ভ্রমণ করে ইউনাইটেট এস্টেটস এ আসবে তখন পাশে থাকা যাত্রীদের আক্রান্ত করবে। এভাবে এটা ছড়িয়ে যেতে পারে”।
আশার কথা হলো, বাংলাদেশে শুধুমাত্র আফ্রিকা ফেরত প্রবাসীদের মাধ্যমে এটি ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে তবে, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো তৎপর রয়েছে। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, ফল খাবার আগে ভালোভাবে দেখে নেয়া এটি বাদুড় বা পাখির কামড় দেয়া যেন না হয়।