১৩২ বছর পর বাংলাদেশে আবারো সৌর প্রজাপতি!

ফারজানা হালিম নির্জন

বৈচিত্র্যতাই সৌন্দর্য। একঘেয়ে,একইরকম রুটিনমাফিক জীবন একেবারেই ভালো লাগেনা,তাই আমাদের চোখ প্রতিনিয়ত খুঁজতে থাকে নতুন কিছু কিংবা বিচিত্র কিছু! সেকারণেই হয়তোবা পৃথিবীটা এতো বৈচিত্র্যময় এবং সেই সাথে এতো সুন্দর! এতো বিচিত্রতার মাঝেও আবার প্রকৃতিতে এমন কিছু প্রাণ আছে,যারা ঠিক সবার মত নয়। সাধারণের মাঝে অসাধারণ হয়েই তারা অনন্য করে তোলে এই পৃথিবীকে। যেমন প্রজাপতি! এমনিতেই তার বাহারি রঙের পাখার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে হতে আমরা ক্লান্ত! তার উপর বর্ণালী এই পাখাটি যদি হয় আরো একটু বিশেষ ধরণের,এই ধরুন সৌরশক্তি ধারণ করতে পারে এমন! বিচিত্র পৃথিবী যে আরো কত কি ক্ষমতার খেলা দেখানোর বাকি রেখেছে! সত্যিই এমন ধরণের এক প্রকার প্রজাপতি আছে,যারা এই অনন্য বৈশিষ্ট নিয়ে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অরণ্য থেকে অরণ্যে। এই খবরের চেয়েও আরো আকর্ষনীয় খবরটি হচ্ছে,সম্প্রতি বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মত এই প্রজাপতির সন্ধান পাওয়া গেছে বান্দরবানের থানচি’র গভীর জঙ্গলে,দীর্ঘ ১৩২ বছর পর!

Jungleglory_manually_241528115

জঙ্গলগ্লোরী থাউমেনটিস ডিওরেস (Thaumantis diores) নামের এই সৌর প্রজাপতিটি গত ৩০ শে মার্চ বাংলাদেশে পুনরায় আবিষ্কার করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন। এর আগে সর্বপ্রথম ১৮৪৫ সালে সিলেটে এই প্রজাপতিটি আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী ডাবল্ডে এবং ১৮৮২ সালে দ্বিতীয়বারের মত পুনরায় আবিষ্কার করেছিলেন ব্রিগেডিয়ার মার্শাল ও নেসেভিলে। এরপর কেটে গেছে ১৩২ বছর। ২০১৪ তে এসে আবার খোঁজ মিললো তাঁর!

এই বিশেষ প্রজাপতিটির ডানার দৈর্ঘ্য ৯৫-১১৫ মিলিমিটার। গাঢ় বাদামী রঙের প্রজাপতিটির উপরের পাখা সত্যিই বেশ রাজকীয়। পাখার উজ্জ্বল গাঢ় নীল রঙের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণ আকর্ষণ না করে পারেইনা। জঙ্গলের ছোট ছোট কান্ডের মাঝখান দিয়ে অস্থিরভাবে ছুটে চলে এই সৌর প্রজাপতিটি। আসল কথাটিই তো জানানো হয়নি। কেন একে সৌর প্রজাপতি বলে ডাকছে সবাই?

২০০৯ সালে জাপান ও চীনের একদল বিজ্ঞানী এই প্রজাতির প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা নিশ্চিত করেন, এই প্রজাপতির পাখা এমন ধরণের,যা সৌরশক্তি ধারণ করতে পারে ও সেই শক্তি কাজে লাগিয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে! এই ক্ষমতা তাদের মাংশপেশী সঞ্চালনে বেশ সহায়তা করে আর ফলস্বরূপ, দ্রুততার সাথে উড়তেও সাহায্য করে।

Jungleglory_bg_405517907

বিজ্ঞানীরা এই প্রজাপতির বিশেষ ক্ষমতা কে কাজে লাগাচ্ছেন বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রে ও সৌর শক্তি প্লান্টে। তাদের পাখার রঙের উজ্জ্বলতা কমিয়ে বাড়িয়ে সামরিক যুদ্ধবিমানে ব্যাবহারেও বিজ্ঞানীরা বেশ আশাবাদী, এবং এ নিয়ে কাজও করে যাচ্ছেন তাঁরা। ড. মনোয়ারের মতে, বাংলাদেশেও এদেরকে নিয়ে গবেষণা শুরু করা উচিত। এইসব সৌর প্রজাপতির ক্ষমতাকে দেশের কল্যাণে কাজে লাগানোর বহু উপায় যদি তৈরীই থাকে,তবে কেন তা করা হবেনা! শুধু দরকার পৃষ্ঠপোষকতা।

প্রজাপতির ক্ষমতা মানবকল্যাণে কাজে লাগুক বা না লাগুক,আপাতত এতোটুকুই কি দারুণ প্রাপ্তির খবর নয় যে,আমাদের দেশে এমন অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের একটি প্রাণি ঘুরে বেড়াচ্ছে গহীণ অরণ্যে! বাংলাদেশেরই এক সন্তান আবিষ্কার করেছে সেই প্রজাপতির অস্তিত্ব! সেটুকুইতো আমাদের গর্ব!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics