মনিবের জন্য কাঁদে যে প্রাণী ….
মোঃ সাইফুল ইসলাম
ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত অনেকগুলো বাংলা সিনেমা দেখেছি। ধনীর দুলালীর সাথে গরীব রিকশা গ্যারেজের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের সাথে প্রেম! ঘটনাক্রমে নায়িকা নায়ককে তার বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে যাবেন। এরপরের ঘটনা বাংলা সিনেমার দর্শকমাত্রই জানেন। সিনেমা চলবে… নায়িকার বাবা নায়কের প্রতি রাগান্বিত হয়ে একটা ডায়লোগ দিবেন- ‘তোকে আমি কুকুরের মতো গুলি করে মারবো’। আবার ঘটনাক্রমে দেখা যাবে নায়কের মা নায়িকার বাবার আপন বোন। কিন্তু নায়কের মা নায়ককে কি বলছে দেখুন- আজ থেকে বিশ বছর আগে তোর বাবাকে ভালবেসে বিয়ে করার অপরাধে ও সম্পত্তির লোভে ঐ চৌধুরী আমাদেরকে কুকুরের মত দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তুই ঐ মেয়েকে…
উপরের ডায়লোগটা একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বোঝার চেষ্টা করি। কুকুরের মতো গুলি মানে কি কুকুর যেভাবে গুলি করে সেই রকম ? অথবা কুকুর কাউকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় সেটা বোঝানো হচ্ছে !!?
যেভাবেই বলি না কেন কুকুর কাউকে গুলিও করেনা, আবার কাউকে তাড়িয়েও দেয়না। বরং কুকুর তার মনিবের জন্য খেয়ে না খেয়ে মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে পারে। আজ এমনই দুটি ঘটনা তুলে ধরছি।
গত ২৭ আগস্ট বুধবার দ্যা ইন্ডিয়ান টাইম্স ও ভারতের জাগরণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ঘটনাটি।
টমি নামক একটি কুকুর তার মনিব ভাস্করের কবরের পাশে খেয়ে না খেয়ে ঝড়-বৃষ্টি কিংবা রোদ উপেক্ষা করে টানা ১৫ দিনেরও বেশি সময় বসেছিল। তামিল্লাড়ু চেন্নাইয়ের ১৮ বছর বয়সী ভাস্কর ২ আগস্ট একটি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান। ব্লু ক্রস অফ ইন্ডিয়া নামক একটি এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার সংঘঠন প্রথমে এই ঘটনাটি জানান। সংঘঠনটির জেনারেল ম্যানেজার ডন উইলিয়াম বলেন, আমরা যখন কুকুরটিকে সরাতে চেষ্টা করছিলাম তখন এটি আমাদের বাঁধা দিচ্ছিল।
এরপর ১৩ আগস্ট এনজিও সংঘঠন ঘটনাস্থলে গিয়ে কুকুরটিকে বিস্কিট এবং দুধ খেতে দেন। এটি না খেয়ে ফোঁপাতে থাকে এবং সেখান থেকে একটুও নড়তে সম্মত হয়নি। তখন এনজিও ভাস্করের মাকে নিয়ে আসেন। কুকুরটি তাকে দেখা মাত্রই তার পায়ের কাছে মাথা ঠেকিয়ে দিয়ে চিৎকার করতে থাকে। ভাস্করের মা আদর করে কুকুরটিকে চুমু দেন। তখন কুকুরটি তার সাথে খুবই ভক্তির সাথে চলে যায়।
এনজিওর স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, প্রথমে মালিক ছাড়া কুকুরকে সরাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু মাকে পেয়ে সহজেই সেটা তার সাথে চলে যায়।
প্রাণিদের প্রভুভক্তির আরেকটি নিদর্শন হল আটিকা জাতের হেচিকো নামক একটি কুকুর। এটি জাপানের একটি ঘটনা। এই কুকুরটি সিবুয়া রেলস্টেশনে প্রতিদিন বিকেলে যেতো তার মালিকের খোঁজে। তার মালিক হাইডসামুরো ইউয়েনো যিনি ঐ রেলস্টেশনের দরজা থেকে কুকুরটিকে বিদায় দিয়ে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন। এরপর তিনি ১৯২৫ সালে মারা যান। কিন্তু কুকুরটি তার মনিব ফিরে আসবেন ভেবে টানা ১১ বছর সেখানে ছুটে যায়। এটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানে যেত। কুকুরটি ১৯৩৫ সালে মারা যায়।
বর্তমানে সেই সিবুয়া স্টেশনে কুকুরটির স্মরণে স্টাচু অফ ডগ নামের একটি স্তম্ভ আছে।
আজ মানুষ মানুষকে কুকুর বলে গালি দেয়। জন্তু-জানোয়ারের সাথে তুলনা করে গালিগালাজ করে। কিন্তু কুকুর সেটা কুকুর। আর মানুষ মানুষই। এই লেখাটির উদ্দেশ্য হলো দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবণতি হচ্ছে। অনেক ফসল, মানুষ, গৃহপালিত প্রাণী, পাখি, হাঁস-মুরগির ক্ষতি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে এলাকার কুকুরগুলোর। দুষ্ট ছেলের দল লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারবে। অনেকগুলো বন্যায় ভেসে যাবে। তাই আমরা যারা কিছুটা হলেও সচেতন তারা ঐ সকল ছেলেদেরকে এসব ঘটনা শোনাবো। এরকম ঘটনা থেকে প্রাণীর প্রতি অগাধ ভালবাসা জন্মাবে বলে আশা করছি।
লেখক- চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়
Email: sohelsaiful13405@gmail.com