নেপালের হারানোর তালিকায় দর্শনীয় স্থানসমূহ: পর্ব-১
ফারজানা হালিম নির্জন
পাহাড়ের কোলে প্রকৃতির সাথে নিবিড়ভাবে সখ্যতা গড়ে তোলা এক কিশোরী দেশ নেপাল। উত্তরে চীন আর বাদ-বাকি তিন পার্শ্বেই ভারতের কড়া পাহাড়ায় ছিমছাম ছোট্ট দেশ নেপাল যেন লক্ষ্মী এক কিশোরীর মত বয়স আটকে রেখেছে তার চির সবুজ স্বভাবে। আকারে প্রায় বাংলাদেশের সমান (১,৪৭,১৮১ বর্গ কিলোমিটার), এই দেশটিতে দেখার কী নেই বলুন তো! পর্বতারোহীদের লোলুপ আকর্ষণ, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট সহ বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ পর্বতের ৮ টিই রয়েছে ছোট্ট এই দেশ নেপা্ল ও চীনের সীমান্তবর্তী এলাকায়। নয়নাভিরাম হ্রদ কিংবা পাহাড় ঘেরা সবুজের আতিথেয়তা দেখে মুগ্ধ হতে না হতেই শান্ত-স্নিগ্ধ হিমালয় কণ্যা হয়তো অন্যদিক থেকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকবে মায়াবী আবহে। রূপকথার বইয়ের মত প্রতি পাতাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নেপালের নির্মল পবিত্র রূপ-লাবণ্য।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু কে বলা হয় পর্যটকদের প্রবেশদ্বার। সমগ্র নেপালের একমাত্র আধুনিক শহরও এটি, যাকে বলা হয় মহানগর কিংবা মেট্রোপলিটন সিটি। নেপালের কেন্দ্রবিন্দুতে, কাঠমান্ডু উপত্যকায় জন্ম নেয়া এক শহর কাঠমান্ডু। কাঠমান্ডু উপত্যকাকে ঘিরে বিজ্ঞ অভিভাবকের মত দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ ৪ টি পর্বত; শিভাপুরি, ফুলচোকি, নগরজুন এবং চন্দ্রগিরি। কাঠমান্ডু ছাড়াও আরো দু’টি জেলা, ললিতপুর এবং ভক্তপুর রয়েছে এই উপত্যকায়। সমগ্র নেপালের প্রায় ১২ শতাংশ জনগণই বসবাস করেন এখানে এবং এখানেই জনসংখ্যার ঘণত্ব সবচেয়ে বেশি।
রাজধানী কাঠমান্ডুর নামকরণের পেছনের ইতিহাসটাও কিন্তু চমৎকার। ১৫৯৬ সালে, রাজা লক্ষ্মী নরসিংহ মাল্য নির্মিত ‘কাষ্ঠমন্ডপ’ উপাসনালয় থেকেই না-কি আজকের এই কাঠমান্ডু নামটি এসেছে। এটি বর্তমান কাঠমান্ডু দরবার ক্ষেত্রে অবস্থিত। এই প্যাগোডাকৃতি মন্দিরের কাঠামো তৈরি হয়েছিল পুরোটাই কাঠ দিয়ে। কোনো রকম ধাতুর ব্যবহার হয়নি। আবার এমন ধারণাও প্রচলিত আছে, সুপরিচিত মহামূল্যবান এই পবিত্র উপাসনালয়ের কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত সমস্ত কাঠ শুধুমাত্র একটি গাছ থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছিলো!
বছরে একবার এই কাষ্ঠমন্ডপে বহু লোকের সমাগম হয়। সেই বিশেষ দিনটিতে কাষ্ঠমন্ডপকে ঘিরে নেপালের মানুষেরা সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকে। রাত জেগে চলে কাষ্ঠমন্ডপ নিয়ে নানান মানুষের পৌরাণিক কাহিণির বর্ণনা। সবাই গভীর মনোযোগে শোনেন সেই গল্প, বিশেষ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়, উৎসবমুখর আয়োজনে মশগুল থাকেন সবাই। শুধু নেপালেই নয়, বহির্বিশ্বের যেকোনো পর্যটকদের কাছেও অন্যতম এক আকর্ষণ থাকে এই কাষ্ঠমন্ডপ। যে পবিত্র মন্দির থেকে কাঠমান্ডুর নাম এলো, তাকে একবার না দেখে গেলে কী কাঠমান্ডু-ভ্রমণ পরিপূর্ণতা পাবে?
ইতিহাসের সাক্ষী, কাঠমান্ডুর সেই তিনস্তর বিশিষ্ট রাজকীয় মন্দির কয়েক সেকেন্ডে ভেঙ্গেচূড়ে চূড়মাড় হয়ে গেছে গত ২৫শে এপ্রিলের ভয়াল ভূমিকম্পের কম্পনে। মুহুর্তেই নেপালীদের হৃদয় ভাঙ্গা ক্রন্দনে হয়তো ভারী হয়ে উঠেছিলো রাজার হালে এককালে দাঁড়িয়ে থাকা কাষ্ঠমন্ডপের টুকরো টুকরো অংশের ধূলো-বালি মিশ্রিত বাতাস।