শীতে গাছের যত্ন নিচ্ছেন তো ঠিকঠাক?
সিফাত তাহজিবা
‘ইশ কি শীতরে বাবা! হাত-পা একদম জমেই গেল’- ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুতে গিয়ে মনেমনে বলছিল ফয়সাল। তড়িঘড়ি করে সোয়েটার গায়ে চাপিয়ে কাধে ব্যাগটা নিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতেই মোবাইলে সময়টা দেখে নিল সে। সকাল ৬ঃ৪০ বাজে। হাতে মাত্র ৫ মিনিট আছে নাহলে ইউনিভার্সিটির বাসটা মিস হয়ে যাবে। তখন আরেক ঝামেলা পাবলিক বাসের জন্য অপেক্ষা ছাড়া উপায় থাকবেনা। ফয়সালের ভয়টাই সত্যি হল। চোখের সামনে দিয়ে একরাশ ধোয়া ছড়িয়ে প্রিয় বাসটা চলে গেল। যেন অতি কাছের কেউ তাকে ছেড়ে চলে গেছে ঠিক সেরকমই লাগছে ফয়সালের কাছে। মন খারাপ করে আসেপাশে তাকালো। কেউ নেই। কিছুক্ষণ আগেও এখানে সবাই ছিল। কোলাহল ছিল। এখন সব শুন্য। আজ শীতটাও বেশ পড়েছে। রাস্তার পাশে বন্ধ দোকানের শাটারে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আনমনে এসব ভাবছিল ফয়সাল। হঠাৎ করেই রাস্তার ওপারে বিল্ডিংটায় চোখ গেল।
খুব সুন্দর বারান্দা গুলো, এরকম বারান্দা আজকাল দেখা যায়না। ১ম, ২য়, ৩য় তালায় দেখল টবে অনেক রকমের গাছ। কী নেই? ক্যাকটাস, পাতাবাহার, ভোগেনভিলা।কিন্তু গাছগুলোকে কেমন যেন দেখাচ্ছে। শীতেই কি এমন হল?
পকেট থেকে ফোনটা বের করেই গুগলে সার্চ করতে থাকল শীতে গাছের কী রকম যত্ন নেওয়া জরুরী?
পাঠক,আপনাদের মধ্যেও অনেকে আছেন যারা বারান্দায়, বাসার ছাদে কিংবা বসার ঘরেও টবে গাছ লাগিয়েছেন। আপনি জানেন কি শীতে গাছেরও যত্নআত্তি প্রয়োজন? কেননা,গাছেরও যে জীবন আছে! ফয়সালের সাথে আসুন আমরাও জেনে নেই বিষয়গুলো-
১। আপনার বারান্দায় বা বসার ঘরে থাকা টবের গাছগুলো যেন সূর্যের আলো থেকে কোনভাবেই বঞ্চিত না হয়। সকালের হালকা রোদে টবগুলোকে রাখুন। খেয়াল রাখবেন যেন সব গাছগুলোই রোদে থাকে।
২। খুব বেশি শীত পড়লে টব ঘরের ভেতরে রাখুন। দিনে রোদ উঠলে কেবল বাইরে রাখবেন।
৩। অতিরিক্ত পানি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ক্যাকটাস বেশি পানি দিলে মরে যায়, বিশেষ করে শীতকালে। মাটি পরীক্ষা করেই কেবল পানি দেবেন। মাটি যদি আর্দ্র থাকে তবে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
৪। গাছের পাতায় থাকা ধূলো-ময়লা পরিষ্কার-নরম কাপড় দিয়ে ঝেড়ে ফেলুন।
৫। পানি দেওয়ার জন্য স্প্রে ব্যবহার করুন।
৬। কিছু প্রজাতির গাছ আছে যেগুলো শীতকালে সুপ্ত থাকে। যেমন ভোগেনভিলা, এই গাছটি শীতে তাপমাত্রা বেশি কমে গেলে মরে যায় এবং শীতে এটির সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় না যেহেতু সুপ্ত অবস্থায় চলে যায়। ভোগেনভিলা গাছকে শীতে বাঁচাতে হলে আপনি গাছটির পাতাগুলো কেটে পরিষ্কার করে ফেলুন এবং টব সহ গাছ ঘরে নিয়ে আসুন অথবা মূলের কয়েক ইঞ্চি উপর থেকে কেটেও গাছকে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে পারবেন,ইংরেজীতে যেটাকে ‘Pruning’ বলা হয়।
৭। ঘরে বসেই তৈরি করে ফেলুন সার। চা পাতা,ফেলে দেওয়া শাক-সবজির ছিলকা,ডিমের খোসা সব একসাথে করে একটি টবে রেখে পঁচিয়ে নিন। কিছুটা দূর্গন্ধ বের হবে, তারপর সেই সার গাছের গোড়ায় দিন।
৮। গাছের গোড়ায় পড়ে থাকা ঝরে যাওয়া পাতা সরিয়ে ফেলুন।
৯। পাতার রং হালকা হতে থাকলে পানি দেওয়া বন্ধ রাখুন। মাটি শুকনো না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন স্থানে রাখুন।
এই শীতে আপনার বারান্দায় থাকা গাছগুলো কিংবা খুব শখ করে কিনে আনা টবের ক্যাকটাসটিকে টিকিয়ে রাখতে খুব বেশি কষ্ট আপনাকে করতে হচ্ছে কি?