প্রাণিকে ভালোবেসে তাঁরা!
নজরুল ইসলাম তোফা
বৈচিত্র্যময় জগতে ভালোবাসার রুপরেখা, আকর্ষণীয় বস্তু বা বিষয় নিয়ে যুগে যুগে মানব জাতি কতোই না আগ্রহ, উৎসাহ, উদ্দীপনা দেখিয়ে আসছে। কারো কারো অদ্ভুত ধরণের মোহ বা ভালোবাসার জাগ্রত হয়, তা অবশ্যই সচরাচর সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা। ভালোবাসার গভীরতা কারো প্রতি কারো অনেক অংশে বেশিই ধরা দেয়। এই ভালোবাসার গভীরতা ঈশ্বরের অবদান বললে ভুল হবেনা বৈকি। প্রাণীজগতের বৈচিত্র্যের স্বরূপ তুলে ধরার প্রতি এমন ভালোবাসা কারো কারো একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু এমনও কিছু মানুষ আছে দিবানিশিদির প্রতিটি ক্ষণে পশু-পাখির পেছনে সময় কাটান, পশুপাখি তাদের মন ছুঁয়ে সদাসর্বদা ছুটে নিয়ে বেড়ায় মনুষ্য জগতের আড়ালে কিছু অপ্রয়োজনীয় স্হানে। সেসব স্হানে উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা দিয়ে পশু পাখির জীবনকে নান্দনিক রূপে তুলে ধরেন। বলা যায় তারা পশু পাখি প্রেমী সমাজে দৃষ্টান্ত মূলক আদর্শ মানুষ।
হঠাৎ করেই নজরুল ইসলাম তোফার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রাজশাহী শহরের পাশ ঘেঁষে পদ্মা নদীর মাঝ বরাবর ঠান্ডা, শীতল অল্প স্বল্প পানির নিকট শুকনো বালুচরে। অবাক করার মতোই দু’বন্ধু গভীর পানিতে নেমে ক্যামেরার লেন্স রাইফেলের মতো তাক করে মৃদু পায়ে উড়ন্ত পাখিকে টার্গেট করে। কখন পাখি মাছ ধরে বালিচরে পানি সংলগ্ন কুল ঘেঁষে দু’দন্ড অবস্থান করবে। আবার এদেশের যুদ্ধ সৈনিকে মতো হামাগুড়ি দিয়ে অসম্ভব ঠান্ডা বালুচরে ঘন্টা পর ঘন্টা শুয়ে থেকে পাখিকে ক্যামেরা বন্দি করে সৌখিন মনের মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য, অবশ্যই তারা সমাজে ও দেশের কাছে উপহার স্বরূপ হয়ে রবে। এমন কাজে কৃতিত্বপূর্ণ দু’বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের এক মুহূর্তে জানা গেলো তাদের কর্ম ও পরিবারের আদ্যোপান্ত।
একজনের নাম মোঃ রিফাত ইকবাল অপর জনের নাম শ্রী দিপু দত্ত। তারা রুয়েট ফাইনাল ইয়ারের মেধাবী ছাত্র। রাজশাহীর তালাইমারীতে দু’বন্ধু একই সঙ্গে থাকে। চমৎকার মাথায় ক্যাপ পরিহিত রিফাত ইকবালের জন্ম ঢাকায় অপর বন্ধুর খোঁচা খোঁচা সুন্দর দাড়ি দিপু দত্তের জন্ম খুলনা। তারা উন্নত প্রযুক্তির নিজস্ব ক্যামেরায় সাড়ে চার বছর ধরে ফ্রেমে বন্দী করে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখির জীবন যাত্রার নান্দনিক ছবি। প্রাণীজগতের বিচিত্র রূপ, পরিচয় নাম সংগ্রহের নেশা ছড়িয়ে দিতে চান শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে। সবাই পছন্দ করে বলেই দিনে দিনে এমন নেশা আরো গভীরে প্রবেশ করে। পশু-পাখি ছবি তোলা এমন কৌশলী আচরণ না দেখলে সত্যিই বিশ্বাস হবে না বৈকি। তারা লেখাপড়ার পাশা পাশি পশু-পাখির অদ্ভুত কাণ্ডকীর্তি নিয়ে ছবি তোলে ব্যস্ত সময় পার করে। জানা গেল তাদের নাকি এমন আগ্রহের কারণ এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি এবং চরম বিনোদন।
পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসার এমন ধরন জাগ্রত হয় তাদের এক বড় ভাই মোঃ কুদরাতী খুদার নিকট থেকে। তারা বলেন, পশু-পাখির প্রতি মমত্ব বোধ থাকাটা খুবই জরুরী। যারা ফুল-পাখি পশুর প্রতি ভালোবাসার নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের মানসিক বিকাশ সুন্দর হয়। আচরণে অনাবশ্যক রূঢ়তা প্রকাশ পায় না। কিন্তু নাগরিক জীবনে প্রাকৃতিক পরিবেশ, একটু সবুজের ছোঁয়া ক্রমশ দুর্লভ হয়ে উঠছে। কাক ছাড়া অন্য কোন পাখি চোখে পড়ার মতো খোঁজে পাওয়া দুর্লভ। আসলে তারা দেশ, মাটি, মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসে। আর প্রকৃতির মাঝে উঠাবসা করতে গিয়ে পাখির প্রতি ভালোবাসা নিবিড় ভাবে জাগ্রত হয়।
দিপু দত্ত বলেন, বাংলাদেশের অপরূপ প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার পশু-পাখি। এ দেশের মানুষ পশু-পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে আবার পশু-পাখির কলকাকলিতে জাগে। পশু-পাখি সংরক্ষণে গনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, পশু-পাখি নিয়ে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি করতে এবং বাংলাদেশের পশু-পাখি সম্পর্কে জানতে ও জানাতে আমি সহ আমার বন্ধু রিফাত ইকবাল কাজ করে যাচ্ছি।
জানা গেল, ছোট বেলা থেকেই তারা পশু-পাখি প্রেমী মেধাবী ছাত্র। এ দেশের সবুজ বৃক্ষের মাঝে হাজারো পশু-পাখির প্রতি তাদের আলাদা ভালোলাগা অজান্তেই জন্ম নেয়। তবে বর্তমানে গাছপালার সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে। সেহেতু সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পাখি। শহুরে জীবনে তো এগুলোর দেখা পাওয়া যায় না। এমন কথা জানান দিলেন মোঃ রিফাত ইকবাল। তিনি আরও জানান, একটি ভাল ছবির পেছনে থাকে অনেক অনেক হতাশা, অপেক্ষা, ভাগ্য, চেষ্টা আর সফলতা। অধিকাংশ মানুষ শুধু ছবিটাই দেখে Behind the scene ভাবার চেষ্টা করে না।
অনেকেই তাকে জিজ্ঞেশ করে কোন লেন্সে, কোন ক্যামেরায় উঠানো হয়েছে ছবি, কিন্তু খুব কম মানুষই জানার চেষ্টা করে ছবিটা কিভাবে তোলা হয়েছে। আসলে সবাই ভাল ছবি তুলতে চায় কিন্তু সময় দিতে চায় না এবং সঠিক স্থান নির্ধারণ করতে চায় না। ক্যামেরার গিয়ার এর বাইরেও যে কিছু থাকে অধিকাংশই তা আয়ত্ত করতে চায় না।
পশু-পাখি নিয়ন্ত্রণ, সংরক্ষণ এবং নান্দনিকতার বিভিন্ন সাইটের দায়িত্ববোধ নিয়ে এ দেশের মন্ত্রিসভায় একটি যুগোপযোগী আইনের খসড়া অনুমোদন হয়েছে। নীতিগতভাবে এই আইনটি ‘প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৬’। আসলে বলতে গেলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক আগেই এই আইন হয়েছে, এ দেশে অনেক দেরিতে হলেও বাস্তবায়িত হবে কতটুকু তা ভাববার বিষয়। যেহেতু আইনটি করেছে সরকার, সেহেতু আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে হলেও পশু-পাখির অনুমোদিত আইন যথাযথ ভাবে মেনে চলা উচিত।