রসায়নবিদদের সতর্কবাণীঃ সুইমিংপুলে মূত্রত্যাগ করবেন না !
ঝকঝকে সুইমিংপুল দেখলে সেখানে সাঁতার কাটার লোভ কার না জন্মায়! এমন টলটলে পরিষ্কার পানি দেখলে এরকম লোভ জাগাই তো স্বাভাবিক। সুইমিংপুলের পানি এতোটা পরিষ্কার হয় মূলত ক্লোরিনের কারণে। ক্লোরিন যোগ করে সুইমিংপুলের পানিকে জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার রাখা হয়। যার কারণে সুইমিংপুলের পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। এখন যদি কোন কারণে আপনি এই পানিতে মূত্র বিসর্জন করেন, তখন আপনার মূত্র বা প্রস্রাব সুইমিং পুলের পানির ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন বিপদজনক রাসায়নিক উপজাত তৈরি করে।আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, সুইমিংপুলের এতো সুন্দর পানিতে কোন বোকা মূত্র বিসর্জন করতে যাবে? আসলে এরকম ঘটনা খুব একটা অস্বাভাবিক না।
বাথিং স্যুটের কোন আলাদা অংশ থাকেনা এটি সাধারানত ওয়ান পিস হয়ে থাকে। তাই যখন এটি ভেজা থাকে তখন এটি খোলা খুবই বিরক্তিকর একটি ব্যাপার। আর যখন আপনি দিনে ৩ ঘণ্টা সুইমিং করবেন তখন প্রত্যেকবার সুইমিং পুল থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে বাথিং স্যুট খুলে বাথরুম ব্যাবহার করে আবার বাথিং স্যুট পরাটাকে দুরূহ মনে হবে। তাই হয়তো আপনি সুইমিংপুলের মধ্যেই একটু দূরে কোথাও যাবেন এবং একটু একটু করে মূত্রত্যাগ করবেন।
মূত্রে জীবাণু থাকে এবং ক্লোরিন জীবাণুমুক্ত করে বলেই আমরা জানি। এছাড়া বিখ্যাত অলিম্পিক সাঁতারু মাইকেল ফেলপস এবং রায়ান লোকটে এরকম করেছেন। কিন্তু ঘটনাটি একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয়।
আমেরিকার কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নাল ‘পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ এর একটি নতুন গবেষণায় এই প্রকাশিত হয়েছে যে, মূত্রের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় কি ঘটে। ফলাফলে যা জানা যায়, তা সুখকর কিছু নয়।
গবেষকরা ঘাম এবং মূত্র থেকে প্রাপ্ত ইউরিক এসিড ক্লোরিন এর সাথে মেশান। এক ঘণ্টার মধ্যে তারা দেখেন যে, ট্রাইক্লরামিন এবং সায়ানজেন ক্লোরাইড গঠিত হয়েছে। এই দুই কেমিক্যাল ক্লোরিনযুক্ত সুইমিং পুলে হরহামেশাই পাওয়া যায় – আরনেসট ব্লাকলেয় হলেন এই গবেষণা দলের একজন। তিনি বলেন, তার দল সুইমিং পুলের রসায়ন নিয়ে গত ১০ বছর যাবৎ গবেষণা করছেন। তারা পুল থেকে সংগ্রহকৃত সব নমুনাতেই এই দুই কেমিক্যাল পেয়েছেন।পারদু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ব্লাকলেয় জানান, “আমরা জানি যে এখানে কেমিক্যাল ও মানুষের সাস্থের প্রতিকূল ফলাফলের মাঝে কিছু সংঘটন রয়েছে। তাই আমরা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই এদের মধ্যকার গঠন ও ক্ষয় বোঝার চেষ্টা করছি”।
সিডিসি এর মতে ট্রাইক্লরামাইন উন্মুক্ত হলে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং সায়ানজেন ক্লোরাইডের কারণে ফুসফুস, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। উভয় কেমিক্যালেই নাইট্রোজেন থাকে। ব্লাকলেয় আরও বলেন, ইউরিক এসিডেও নাইট্রোজেন থাকে। এই গবেষণায় একজন গবেষক সন্দেহ করেছিলেন ক্লোরিনের সাথে এটি বিক্রিয়া করতে পারে। পরবর্তীতে তার ধারণা সঠিক প্রমাণিত হয়।
যদিও ঘামের সাথে খুব সামান্য পরিমাণে ইউরিক এসিড আছে, তাই আমাদের চিন্তা করা উচিত মূত্র নিয়ে। ব্লাকলেয় বলেন, আপনি কঠোর পরিশ্রম করে সাঁতার কাটেন তাই ঘাম বিষয়ে আপনি কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু সব সময় এটা আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, পুলে মূত্রত্যাগ করা যাবেনা। কিছু কিছু মানুষ হয়তো করে না। কিন্তু পরিক্ষায় দেখা গেছে গড়ে এক জন ব্যাক্তি প্রতিবার পুলে নামলে ৩০ থেকে ৮০ মিলিলিটার মূত্রত্যাগ করে।
ব্লাকলেয়ের মতে একটি প্রধান সমস্যা হল যখন একটি পুলে অনেক মানুষ থাকে, যেমন সাঁতার প্রতিযোগিতার সময়। ক্লোরিনের উপস্থিতিতে সায়ানজেন ক্লোরাইড শুধু তাড়াতাড়ি উৎপন্নই হয় তা নয়। গবেষণায় বলা হয়েছে তাড়াতাড়ি ক্ষয়ও হয়। তার মানে যদি অনেক মানুষ একসঙ্গে পুলে মূত্রত্যাগ করে তখন প্রচুর পরিমাণ সায়ানজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এটি যখন আবার তাড়াতাড়ি ক্ষয় হয়ে যাবে, তখন কম ক্লোরিনের কারণে এটি অনেক সময়ের জন্য আটকে যাবে এবং এর প্রভাব বেশি সময় ধরে থাকবে।
“ক্লোরিন একে ধ্বংস করে, তাই এটা খারাপ কিছু না,” বিখ্যাত সাঁতারু মাইকেল ফেল্পস ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ২০১২ তে এই কথা বলেন। কিন্তু ব্লাকলেয় এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি তার বিবৃতিতে বলেন, “এই সাঁতারু সম্প্রদায়ে অনেকে আছেন যারা তাদের [ফেল্পস এবং লোকটে] কথা শোনেন এবং মানেন। যারা রসায়নবিদ নন তাদের এরকম মিথ্যা বিবৃতি দেয়া উচিত নয়।”
তৌকির ইসলাম, ঢাকা কলেজ।
সূত্রঃ দি আটলান্টিক
http://www.theatlantic.com/health/archive/2014/03/chemists-decree-dont-pee-in-the-pool/359659/