চা বাগানের ছায়া বৃক্ষ বা শেড ট্রি কি কাজে লাগে ??

উম্মেহানি হাসি

পৃথিবীর ২৩ টি চা উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নবম স্থান অধিকার করে আছে। শরীরের অবসাদ কাটাতে আমরা প্রথমেই চিন্তা করি এক কাপ গরম চা এর কথা। শুধু কি শরীরের? মনের অবসাদ কাটাতেও আমরা ছুটে যাই চা বাগানে। চারদিকে সবুজের সমারোহে শরীর মন দুটিই চনমনে হয়ে উঠে। কখনো ভেবে দেখেছেন কি চা বাগানের মাঝে বিশাল বিশাল দৈত্যের মতো গাছগুলো কেন দাঁড়িয়ে আছে? তারা কি শুধুই সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য?? নাকি তাদেরও ভূমিকা রয়েছে চা গাছের সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে??

চা একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। বাগানে চা গাছ ছেঁটে ছোট রাখার কারণ হচ্ছে যেন সব সময় সজীব পাতা সংগ্রহ করা যায়। চা গাছের মাঝের বড় গাছগুলোকে বলা হয় ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ, ইংরেজিতে যাকে বলে shade tree। আমাদের দেশের চা বাগানে যেসব shade tree দেখা যায় সেগুলোর নামও বেশ চমৎকার, যেমন চাম কড়ই (Albizzia odoratissima), শিরিষ গাছ (Albizzia lebbeck), আম্লুকিয়া অথবা কালা শিরিষ (Albbizzia chinensis) ইত্যাদি।shade tree in tea garden

ছায়া প্রদানকারী গাছের প্রধান কাজ হল সূর্যের প্রখর রোদ থেকে চা গাছকে রক্ষা করা। কারণ সরাসরি সূর্যের আলো চা গাছের জন্য ক্ষতিকর। শুধু সূর্যের প্রখর রোদই নয়, ঝড় ও বাতাস থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে এই shade trees। এই shade trees গুলো leguminous গোত্রের হয়, ফলে সহজেই এরা বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। এসব গাছের শিকড় শক্ত মাটির স্তরকে ভেদ করে অনেক গভীরে যেতে পারে এবং এইভাবে চা গাছের শিকড়কে গভীর স্তরে পৌঁছে প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহে সাহায্য করে। এছাড়াও চা গাছের জন্য ক্ষতিকর পোকা Red Spider Mite থেকে রক্ষা করার দায়িত্বও পালন করে থাকে এসব গাছ।

ছায়া প্রদানকারী গাছের মধ্যে চাম কড়ই আমাদের দেশে সব থেকে বেশি দেখা যায়। চাম কড়ই লম্বায় প্রায় ১৫-২৫ মিটার এবং চওড়ায় ১২০-১৫০ সেঃমিঃ হয়ে থাকে। গাঢ় ধূসর বর্ণের ফুল আর গাঢ় বাদামি রঙের কাঠের এই গাছ দেখতেই শুধু আকর্ষণীয় নয়, রয়েছে নানা উপকারিতাও। আসবাবপত্র তৈরিতে চাম কড়ই প্রথম সারির গাছ। শুধু তাই নয়, কৃষি কাজের যন্ত্রপাতির জন্যও ব্যাবহার করা হয়ে থাকে এই গাছের কাঠ। গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে। শিরিষ গাছ গবাদি পশুপাখির খাদ্য, জ্বালানি কাঠ ছাড়াও ওষুধি গাছ হিসেবে পরিচিত। ছায়া প্রদানকারী এসব গাছ শুধু ছায়া দিয়েই থেমে নেই, নিজের সবটা যেন উজাড় করে দিয়েছে প্রকৃতিতে। বায়ুমণ্ডল থেকে ভূগর্ভস্তর পর্যন্ত তাদের অবদান ছড়িয়ে রয়েছে।

তাহলে পাঠক, এবার থেকে চা বাগানে বেড়াতে গেলে শুধু চা- গাছের ছবি তুলবেন নাকি, বন্ধু ছায়া- বৃক্ষের ও কিছু ছায়া ক্যামেরাবন্দি করবেন??!! একবার ভেবে দেখবেন কিন্তু…

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics