
সাপের চেয়েও বিষধর ব্যাঙ!
মোঃ সাইফুল ইসলাম
ব্রাজিলের জীববিজ্ঞানীরা বিশ্বে প্রথমবারের মতো সাপের চেয়েও বিষধর ব্যাঙের খোঁজ পেয়েছেন। এজন্য অবশ্য তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ব্রাজিলের সাও পাওলো তে অবস্থিত বুটানটান ইন্সটিটিউটের কার্লোস জেয়ার্ড একটি গেছো ব্যাঙ (Corythomantis greening) হাতে তুলে নেন। তিনি যখন গইটাকেজেস ন্যাশনাল ফরেস্ট থেকে ব্যাঙটি ধরেন তখন সেটি তার উপরের ঠোঁটে লুকানো থাকা কাঁটা বিঁধিয়ে দেয়! তিনি ব্যাঙটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং পরবর্তী পাঁচ ঘন্টা দুঃসহ যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথায় হাত ছোড়াছুড়ি করেন।
আরো অনেক বিষাক্ত (Poisonous) ব্যাঙের প্রজাতি রয়েছে কিন্তু তাদের কোনটিই বিষধর (Venomous) নয়।C. greening ব্যাঙের বিষ বিষধর পিট ভাইপার (Pit viper) থেকে দ্বিগুণ শক্তিশালী! গবেষকরা ৬ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে কারেন্ট বায়োলজিতে এই তথ্য জানান।
গবেষক দলটি ঐ একই স্থানে আরো একটি বিষধর গেছো ব্যাঙের সন্ধান পান যেটির বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে (Aparasphenodon brunoi)। এটি পিট ভাইপার থেকে প্রায় ২৫ গুণ বেশি বিষধর। জেয়ার্ড এবং তাঁর সহকর্মীরা হিসেব করে দেখেন এর ১ গ্রাম বিষ ৩ লক্ষেরও অধিক ইঁদুর অথবা ৮০ জন মানুষ মারতে সক্ষম! কিন্তু এবার গবেষকরা ব্যাঙটিকে হাতে নিয়ে ভুল করেননি।
দুইটি ব্যাঙই তাদের মাথায় থাকা কাঁটার সাহায্যে ভেনোম বা বিষ নিঃসরণ করে থাকে। এই কাঁটাগুলো চামড়ায় থাকা বিষগ্রন্থিতে (Toxic gland) লাগানো থাকে। যখন কোন প্রাণি আক্রমণ করে তখন ব্যাঙগুলি তাদের চামড়া সংকুচিত করে বিষাক্ত কাঁটাগুলি তাদের ঠোঁট থেকে চামড়ায় থাকা বিষাক্ত গ্রন্থি ছিদ্র করে বেরিয়ে আসে।
গবেষকরা কল্পনা করলেন একটি ক্ষুধার্থ শিকারী যদি ব্যাঙটিকে মুখে পুড়ে নেয় তবে কি হতে পারে! ব্যাঙগুলি তাদের সব কাঁটা উন্মোচিত করে দিবে। আর বিষক্রিয়ায় শিকারী মারা পড়বে। এই দুটি ব্যাঙ আকার, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যে কাছাকাছি নয়। তাই গবেষকরা ধারণা করছেন আরো অনেক বিষধর ব্যাঙের অস্তিত্ব থাকতে পারে। আর এই পাবার সম্ভাবনা বেশি আছে রেইন ফরেস্টে।
কোথাও কোথাও বলা হচ্ছে কাঁটাগুলো পুরো মাথার খুলি জুড়ে থাকে। আবার কোথাও বলা হচ্ছে উপরের ঠোঁটে থাকে। যাইহোক উপরের ঠোঁটে থাকলেও সেটি খুলির সাথেই লাগানো। আবার মাথা দিয়ে সাপের মত ছোবল দিয়েও কাঁটা বিঁধাতে পারে।
তথ্যসূত্র: কারেন্ট বায়োলজি, সাইন্স ম্যাগাজিন, বিবিসি।