ঘুরে আসুন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত…
মোঃ সাইফুল ইসলাম
চলছে পৌষ মাস। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য শীতকালকেই উপযুক্ত সময় বলা হয়ে থাকে। শীতকালের মাঝামাঝি সময় হলেও চট্টগ্রামে শীতের প্রকোপ তেমন পড়েনি। তাই ভ্রমণপিপাসুরা যারা চট্টগ্রামে ভ্রমণ করতে আসবেন তারা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা থেকে বিরত হবেন না।
চট্টগ্রামে পড়ালেখার সুবাদে বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। সৈকতের স্মৃতি কোনদিনও ম্লান হবার নয়।
কিভাবে যাবেন?
চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এটি। পতেঙ্গা চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। বর্তমানে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের এ.কে খান কিংবা জিইসি থেকে খুব সহজে যেতে পারবেন। চট্টগ্রামে বসবাসকারীদের নতুন করে যাবার উপায় বলার দরকার নেই। তাই যদি আপনি সড়ক পথে আসেন তবে এ.কে খান হয়ে সরাসরি চলে যাবেন পতেঙ্গায়। ‘সী-বিচ’ লেখা বাসগুলোতে উঠে যাবেন। আর যদি জিইসি থেকে যেতে চান তবে ১৮০-২০০ টাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ে যেতে পারবেন।
কী দেখবেন সেখানে?
শাহ আমানত বিমান বন্দর, বিএনএস ঈশা খান (বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাটি) ও দেখবেন চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি। এগুলো সব কাছাকাছি তাই আলাদা করে যাওয়ার পথ বলতে ইচ্ছে করছেনা। সৈকতে আছে বার্মিজ মার্কেট। সেখানেও ঘুরে ফিরে পছন্দের কেনাকাটা সেরে নিতে পারবেন। এখানে সন্ধ্যার দিকে সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই মনোরম। সবচেয়ে ভাল লাগবে সন্ধ্যার পরিবেশ। সুতরাং থাকতে পারেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্রচুর লোকের সমাগম হবে সেখানে। বিকেলের দিকে মন চাইলে পানিতে নেমে আনন্দের মাত্রা আরও বাড়াতে পারবেন। পাবেন ২০ টাকায় ঘোড়ার পিঠে চড়ার সুযোগ। সেই সাথে আছে স্পীডবোড কিংবা কাঠের তৈরি নৌকায় ওঠার সুযোগ। জাহাজের চলাচল কিংবা মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানও দেখবেন।
সাধারণত বিকেল গড়াতে থাকলে জোয়ার আসতে শুরু করে। জোয়ার শুরুর আগে যেসব সিমেন্টের/পাথরের স্লাপ দেখবেন সেগুলো অনেকটা তলিয়ে যাবে।
সমুদ্র সৈকত দেখে আপনার ফিরতে ইচ্ছে করবে না হয়ত। কিন্তু শাহ আমানত বিমান বন্দরগামী রাস্তার মুখে অবস্থিত প্রজাপতি পার্ক দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন না। বিভিন্ন ধরণের প্রজাপতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন সেখানে। পার্কটিতে ৭০ প্রজাতির প্রায় ১০০০ এর বেশি প্রজাপতি রয়েছে। প্রজাপতি দেখতে চাইলে সকাল সকাল যাওয়াই ভাল হবে। কেননা বিকেলের পর থেকে এরা ঝোপের আড়ালে চলে যাবে।
সতর্কতা !!
সতর্কতা? হ্যাঁ সতর্কতার কথাই বলছি। সৈকতে ঘুরতে গিয়ে যেকোন ধরণের বিপদ কিংবা অভিযোগ সম্পর্কে জানাতে পারবেন বন্দরে থাকা ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়িতে। তবে নিজকে নিজে সতর্ক রাখাই ভাল। যেখানে অধিক লোকের সমাগম আছে সেদিকেই থাকবেন। একাকী ভ্রমণের চেয়ে কয়েকজন মিলে যাবেন। আর নিজস্ব ক্যামেরা থাকলে নিবেন। একাকী ভ্রমণে গেলে বন্দরে থাকা ক্যামেরা ম্যানদের দিয়ে ছবি না তোলানোই ভাল। স্পীডবোড, নৌকা, ঘোড়া যেখানেই যান না কেন আগেই ভাড়া শুনে নিবেন। কারণ এরা সবাই আপনাকে ঠকানোর চেষ্টা করবে। আর পতেঙ্গা সৈকতের বেশি উত্তর দিকে একা একা হাঁটতে যাবেন না যেন!
চট্টগ্রামে বেড়াতে আসলে খুবই অল্প সময়েই ঘুরে আসতে পারবেন সৈকতটি। না, এটি আকার আয়তনে কক্সবাজারের মত নয়! কিংবা এর নেই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের গৌরব! কিন্তু চট্টগ্রাম শহরের কাছে অবস্থিত হওয়ায় খুবই অল্প সময় হাতে নিয়েই যেতে পারেন এই অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
লেখক: চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।