জল ও জীবন
সুভাইতা খান
চৈত্র্য মাসের প্রথম বৃষ্টি , ভেজা মাটির সুমিষ্ট সুবাস আর বাতাসের শীতল পরশ এক মনরম পরিবেশের সৃষ্টি করেছে চারপাশে। অমার বাসার সামনের জলাশয়টিও পানিতে ভরে গেছে । বাংলাদেশ এই রকম অনেক জলাশয় ও নদী জালের মত ছরিয়ে রয়েছে। এই নদী ও জলাশয়গুলো আমাদের প্রাণ। কারণ আমাদের জীবন ও জীবিকার অনেকটাই এই নদী ও তার পানির উপর নির্ভরশীল।
আমাদের প্রাণপ্রিয় নগরী ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমানে বুড়িগঙা নদী একটি বুড়িগঙা নর্দমায় পরিনত হচ্ছে। যদিও অনেক মানুষের জীবন জীবিকা এই নদির পানির উপর নির্ভরশীল। অথচ, এই শহরে প্রতিদিন ৪৫০০ টন আবর্জনা নদীতে ফেলছে। গবেষকদের মতে প্রায় ৯ টি শিল্পাঞ্চল এই নদী দুষণের প্রাথমিক উত্স। টঙ্গী,হাজারীবাগ ,সাভার ইত্যাদি শিল্পাঞ্চল থেকে নির্গত রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ ছাড়াও বাসা বাড়ীর ময়লা আবর্জনা এই পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করছে ও নানা রকম পানিবাহিত জীবাণুর অভায়শ্রম হয়ে উঠেছে।
বুড়িগঙ্গার মতো আমাদের দেশে আর ২৩০ টির অধিক নদী রয়েছে সারা পৃথিবীতে রযেছে আরো অনেক নদী যেগুলো বুড়িগঙ্গা নদীর মতো ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে। জেলে ,কৃষক ও নানা পেশার মানুষ এই নদীর পানির উপর নির্ভশীল। এই দূষিত পানি ব্যবহার করায় নানা রকম পানি বাহিত রোগ কলেরা, টায়ফয়েড ,ডায়রিয়া ও ক্যন্সারের মতো মারাত্নক রোগ হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার মতে এই শহরের ৪০ মিলিয়ন মানুষ দূষিত পানি হতে প্রভাবিত হচ্ছে।আমাদের ফসল ও মত্স্য উত্পাদন ও মান কমে যাচ্ছে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ও পরিশুদ্ধ পানি প্রত্যেক এলাকা এবং সেখানকার মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করবে। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় কৃষক যেমন অধিক পরিমান ফসল উত্পাদন করতে পারবে; একই ভাবে জেলেরাও নদী থেকে অনেক মাছ পাবে।
বাংলাদেশের ২৮.৩৩ হেক্টর প্লাবন অঞ্চল; যার কেবল ২.১৮ হেক্টর অঞ্চল থেকে মাছ পায়। আরও সতর্ক হলে আরো ২২ হেক্টর অঞ্চলে মাছ পাওয়া সম্ভব দূষিত পানির ফলে মাছ তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আমাদের দেশে প্রতিদিন প্রায় ৩৮ জন শ্রমজীবি পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন মানুষ মারা যাচ্ছে শুধুমাত্র নিরাপদ পানির অভাবে।
আমরা যদি শুধু মাত্র নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পারি এই মৃত্যুহার অনেক কমে যাবে। পানিবাহিত রোগের পরিমাণ কমে গেলে আমাদের অনেক অর্থের শ্রাসয় হবে যা দিয়ে সমাজে অন্যান্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে। যার ফলে আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। কল কারখানায় বর্জ্য সরাসরি নদীতে না ফেলে পরিশোধন করলে পানি দূষণের মাত্রা অনেক কমে যাবে। ফলে আমাদের পরিবেশ থাকবে ভালো। পরিবেশে ভারি রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণও অনেক কমে যাবে। ক্যন্সারের মতো কঠিন রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক কমে যাবে। সর্বোপরী পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে মানুষের উপর দুষিত পানির প্রভাব কম পরবে। আমাদের সমাজে সেই বসন্তের মত স্নিগ্ধ ও মনরম একটি পরিবেশের সৃষ্টি হতে পারে।