স্কটের চোখে বৈচিত্রময় পৃথিবী; আপনি আমন্ত্রিত !
ফারজানা হালিম নির্জন
পৃথিবীটা কত বড় বলুন তো? খুব ইচ্ছে করে না মাঝে মাঝে, সব ছেড়েছুড়ে একটা ট্র্যাভেল ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাইরের দুনিয়ায় পা রাখতে? রাজনীতি, ট্র্যাফিক জ্যাম, কৃত্রিম মেলা-মেশা ইত্যাদি ইত্যাদি… এই সবকিছুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পৃথিবীর দূর কোনো গহীন অরণ্যে একটু ঢু মেরে আসতে ইচ্ছে হয় না বলুন? আমার কিন্তু খুব ইচ্ছে করে! সরল-সহজ মানুষ, সবুজের সাতকাহন গল্পে কিংবা অনন্ত নক্ষত্ররাজি বিছানো আকাশের গহীনে খুব করে ইচ্ছে হয় ডুবে যাই। চোখ বন্ধ করলে টের পাওয়া যায়, সেখানে আছে অকৃত্রিম সুখের ছড়াছড়ি। জীবনের অভ্যন্তরে এক অন্য জীবন।
পৃথিবীর কোণায় কোণায় যে এত সুখের মেলা বসে আছে, এত প্রাণের উৎসব চলছে, তা কিন্তু আপাতত ঘরে বসেই কম্পিউটার কিংবা মোবাইল স্ক্রীণে দেখা যেতে পারে। হুম, আলোকচিত্রের দুনিয়ায় উষ্ণ অভ্যর্থনায় আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। বাংলাদেশ-পাগল একজন দুরন্ত আর ডানপিটে বিদেশী আলোকচিত্রীর সৃষ্টিযজ্ঞের সন্ধান দিচ্ছি। বাইরের দুনিয়ায় পা রাখার আগে মনটাকে একটু গুছিয়ে নেয়া তো প্রয়োজন! নব্য আলোকচিত্রীদের গলা পর্যন্ত আটকে থাকা দীর্ঘশ্বাস, আর আমাদের মত জন-সাধারণের জীবন সম্পর্কে এক প্রশান্তিময় উপলব্ধি…সবকিছুরইতো দরকার আছে, তাই না?
‘ন্যাচারস্টিলস’ নামক আলোকচিত্র বিষয়ক ওয়েবসাইটটির যাত্রা শুরু হলো এই তো কিছুদিন আগেই, স্কট সবাইকে খবরটি জানান খুব সম্ভবত অক্টোবরের ১৮ তারিখ। তবে মার্কিন আলোকচিত্রী স্কট ট্র্যাগেজারের স্বপ্নের পথটা কিন্তু বিশাল। স্কট-এর মনে ‘ন্যাচারস্টিলস’-এর জন্ম এরও বহু বছর আগে।
২০১৩ সালের শুরুর দিকে এই নামে ফেসবুক পেজে তার ক্যামেরায় ধারণকৃত বিভিন্ন আলোকচিত্রের নিভৃত আগমন হল। ফেসবুকে কি আর অত ভাল রেজ্যুলেশনে ছবি দেখা যায়? ছবির প্রাণটাই তো হারিয়ে যায়। ওয়েব ডেভেলপারদের প্রতি চরম বিরক্তি এবং অযথা অর্থ অপচয়ের পর অবশেষে নাছোড়বান্দা স্কট নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট নিজেই তৈরি করে ফেললেন। এবার এই পাগলাটে যুবক, স্কট সম্পর্কে কিছু কথা বলি…
প্রশ্ন আসতেই পারে, এ আর নতুন কী! আজকাল ইন্টারনেটে কী অমন আলোকচিত্র ওয়েবসাইটের অভাব আছে না কি! তাহলে স্কটের ওয়েবসাইট নিয়ে কেন আমাদের এতো মাখামাখি? কারণ আছে… স্কটের বসবাস যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা প্রদেশের টাকসন শহরে। প্রকৃতিপ্রেমী স্কট বাংলাদেশ পাইথন প্রজেক্টের কর্ণধার শাহরিয়ার সিজারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসেন ২০১১ সাল নাগাদ। বন্ধুর সাথে কাজ করতে করতে এ পর্যন্ত বহু অবদান অবশ্য রাখা হয়ে গেছে বাংলাদেশের মাটিতে। জন্ম হয়েছে বণ্যপ্রানী সংরক্ষণ ও আদিবাসীদের আলোকিত জীবনের পথ দেখানো ‘ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স’- এর! বাংলার পাহাড়, সবুজ আর মানুষেরা স্কটের হৃদয়ে কী এক ছন্দ তুলেছিল ভালোবাসার, ভালো লাগার। তাই তো বারবার ছুটে আসেন এই দেশে।
হাস্যমুখী স্কট কাদায় মাখামাখি হয়ে আদিবাসী শিশুদের সাথে খেলায় মেতে ওঠেন, কখনো বা লাউয়াছড়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচ-কানাচ থেকে ক্যামেরায় তুলে নিয়ে আসেন এক টুকরো জীবনের প্রতিচ্ছবি। এর সাথে সাথে তাঁদের নিয়মিত কাজ তো চলছেই। বাংলাদেশের প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের কাছে খুব পরিচিত একটি নাম স্কট ট্রাগেজার। আর, আমাদের স্কট তাঁর ক্যামেরায় ধারণকৃত এতো চমৎকার সব মুগ্ধতায় মেশানো ছবি দিয়ে নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করেছেন, সেটা আমাদের গর্ব করার মত বিষয় নয় কী?
এবারে তবে দেখে ফেলি, স্কটের ওয়েবসাইটে কী কী মুগ্ধতার আয়োজন আমরা পাচ্ছি!
বিভিন্ন ধরণের সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রাণী, সামুদ্রিক প্রাণী, ল্যান্ডস্কেপ, পাখ্ ফুল, মানুষ-সংস্কৃতি, কোনোকিছুই বাদ যায় নি ওয়েবসাইট টি তে। আছে প্রতিটি ছবির সাথে ছোট ছোট কিছু বার্তা, কথাগুলো পড়লে মনে হয়, ছবিটি হঠাৎ জীবন্ত হয়ে উঠলো এর আগে-পিছের সমসত কাহিনী সমেত!
বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব হয়, যখন দেখি, বাংলাদেশের আদিবাসীদের চমৎকার কর্মদক্ষতা আর মন-মাতানো হাসিময় শিশুদের ছবি চোখের সামনে অবারিত ক্যানভাসে ভেসে উঠছে। ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের বিভিন্ন মুহুর্তের গল্প আছে স্কটের ক্যামেরায়। আরো কত সব মুগ্ধতা ! আর স্কটের ছবি তোলার দক্ষতা? সে না হয় নিজ চোখেই দেখে নিবেন!
এসব তো কেবল নমুনা। বহু চমক এখনো দেখার বাকি…
‘ন্যাচারস্টিলস’ ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন!
প্রকৃতির নিকট এমন প্রানীদের দেখা মিলে যা দেখে মন জুরিয়ে যায়। এমন প্রানীদের সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের লেখা আর্টিকেল পড়ে দেখতে পারেন।