ছড়িয়ে পরা ফার্নেস থেকে প্রাণীদের রক্ষায় যা করা যেতে পারে

মোঃ সাইফুল ইসলাম

সুন্দরবনের ভিতর বয়ে চলা শেলা নদীতে ফার্নেস তেল ভর্তি ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকীর মুখে পড়েছে। আবার বনবিভাগ সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ হিসেবে ১০০ কোটি টাকার মামলা করেছে! আবার কি কি ক্ষতি হতে পারে এসব নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন পত্রপত্রিকার পাতায় আসছে। এক টেলিভিশন সংবাদে দেখাগেছে মালিককে ভোলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে! মালিক গ্রেপ্তার আর ১০০ কোটি টাকার মামলা দেয়া সবই হাস্যকর! সবই হতাশাজনক! এসব আর এখন কাজের কথা নয়!  এখন তেল ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রাণী, পাখি মারা গেছে। ডলফিনের অভায়রণ্যে ডলফিন ভাসছেনা। সুতরাং সেখানের পরিবেশ যে হুমকীর মুখে পড়ে গেছে তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। দূর্ঘটনা ঘটে গেছে। মামলা-মোকদ্দমা পরে হবে। এখন শুরু করা উচিৎ দূর্ঘটনা পরবর্তী করণীয় জরুরী কাজগুলো।

ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। তবে, সুন্দরবনের পাখি বা অন্যান্য প্রাণী গুলোর অবস্থাও যে এ পাখিটির মতো তা বলার অপেক্ষা থাকে না।
ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। তবে, সুন্দরবনের পাখি বা অন্যান্য প্রাণী গুলোর অবস্থাও যে এ পাখিটির মতো তা বলার অপেক্ষা থাকে না।


যা করতে হবে:

১। যদি কোন নদী কিংবা সামুদ্রিক পরিবেশে তেল নিঃসৃত হয় তবে প্রথম পদক্ষেপ হবে নিঃসরণের উৎস এবং ছড়ানোকে নিয়ন্ত্রণ করা।

২। সেই সাথে সেখানে আগত পাখি, প্রাণীদের আসাকে যতদূর সম্ভব প্রতিরোধ করতে হবে/ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

৩। Propane scare cans (এক ধরনের দাহ্য হাইড্রোকার্বন গ্যাস ভর্তি পাত্র যাতে আগুন জ্বালালে প্রাণীরা ভয়ে দূরে সরে যাবে), কৃত্রিমভাবে পাখি, প্রাণী বানিয়ে ভাসিয়ে রাখা এবং হিলিয়াম গ্যাস ভর্তি বেলুন রাখতে হবে। এতে ওরা ভয়ে সেই স্থানে আসবেনা। এতে তারা অন্যত্র চলে যাবে। আবাস্থল হারাবে। তাতে কি! এটি কি মৃত্যুর চেয়ে কি শ্রেয় নয়?

৪। পাখি ও প্রাণীদের উদ্ধার করে পরিষ্কার করতে হবে। তেলের সংস্পর্শে আসলে দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার জন্য নিতে হবে। যদি কাছেই কোন প্রাণী হাসপাতাল না থাকে তবে অস্থায়ীভাবে কোন বড় গুদামঘর, বিল্ডিং ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু সেখানে বিদ্যুৎ, গরম পানি ও বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

৫। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভলান্টিয়ার নিতে হবে। যারা উদ্ধারকৃত পাখি, প্রাণীদের উপর থেকে ধকল বা চাপ কমাতে সহায়তা করবে। মনে রাখবেন ধকল কিংবা চাপ যত কমানো যাবে তত বেশি বাঁচার সম্ভাবনা বাড়বে।

৬। খুব বেশি তেলে ভিজলে চোষ কাপড় অথবা ফোম দিয়ে মুছতে হবে।

৭। পুনবাসনের জন্য কর্মরত ব্যক্তিদের প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে পাখি, প্রাণীদের হাড় ভাঙ্গা, কাটা কিংবা অন্য কোন ক্ষত আছে কিনা।

৮। পাকস্থলীতে আবরণ সৃষ্টিকারী ওষুধ (Stomach coating medicines) প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াতে হবে। যাতে তেল পাকস্থলীতে শোষিত হতে না পারে।

৯। এরপর পাখি ও প্রাণীর শরীর শুকিয়ে, উষ্ণ করে নিরিবিলি স্থানে রাখতে হবে। চিকিৎসাকেন্দ্রের আশপাশে সাধারণ/অতি উৎসাহী মানুষের চলাচল বন্ধ করতে হবে।

১০। এসময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। বন্য পাখিরা প্রথমদিকে খেতে না চাইলে হালকা জোড় করা যেতে পারে। পরবর্তীতে নিজেরাই খাবে।

১১। পাখিটি সুস্থ্য ও শক্তিশালী হতে ধরলে পালক থেকে তেল উঠানোর জন্য ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হবে। পালক সম্পূর্ণ ভিজে গেলে তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে রাখতে হবে। সে সময় কৃত্রিমভাবে তাপের ব্যবস্থাও করতে হবে।

১২। এরপর সুস্থ্য হয়ে উঠলে জলজ পাখিকে সাঁতার কাটতে দিতে হবে। তখন আবার পাখির Preen gland (এক ধরনের গ্রন্থি যা থেকে তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসৃত হয়। এই নিঃসৃত পদার্থের জন্যই এদের পালক পানিতে ভিজে না) সক্রিয় হয়ে উঠবে। পরিশেষে পাখিকে মুক্ত করার আগে এই গ্রন্থির কার্যকারিতা যাচাই করে নিতে হবে।

উদ্ধারকারী জাহাজ কান্ডারি-১০। এদের নাকি কিছু রাসায়নিক রয়েছে যা দ্বারা ৫০০-৬০০ মেট্রিক টন তেলের দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আবার জানলাম স্থানীয় লোকেরা ফোম দিয়ে তেল তুলে নিবে। আশেপাশের খাল ও নদীতে যাতে তেল যেতে না পারে তার জন্য জাল ব্যবহার করা হয়েছে। এসবই কাজের কথা ও বড় পাওয়া।

দূর্ঘটনা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। দূর্ঘটনা ঘটার পর একে ওকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এখন আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারবে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে।

শিক্ষার্থী – চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics