
কি করবেন ? যদি পড়ে যান খাঁচায় বন্দী প্রাণীটির সামনে !!!
মোঃ সাইফুল ইসলাম
গত মঙ্গলবার দেশ-বিদেশের প্রায় সবগুলো সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়ায় যে সংবাদটি প্রকাশ হয়েছিল তা হল ভারতের নয়াদিল্লিতে ‘দ্যা ন্যাশনাল জু-লজিক্যাল’ পার্কে সাত বছরের একটি সাদা বাঘের হামলায় মাকসুদ নামক এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা। একটি প্রাণী কিভাবে এমন একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা সংঘটিত করলো তা জানতে ইউটিউব ভিডিও, ভারতীয় পত্রিকাসহ দেশি-বিদেশী পত্রিকাগুলোর উপর নজর রাখছিলাম। CNN এর নিউজে লেখা হয়েছে কিলার টাইগার! অনেকে এর ইউটিউব লিঙ্ককে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। কারণ বাঘটাকে কিলার বাঘ বলা ঠিক হচ্ছে না। বিভিন্ন সংবাদ ও ভিডিও দেখে যা জানলাম তাতে বাঘের কোন দোষ আছে বলে আমারও মনে হয়নি।
অনেকেই বলছেন ছেলেটি ছবি তোলার জন্য বেড়ার ভেতর প্রবেশ করলে খাঁচার একেবারে ভেতরের অংশে পড়ে যায়। আবার অনেকে বলছে দেয়াল নিচু হওয়ার কারণে পা পিছলে পড়ে গেছে। ঝাপিয়ে পড়ার কথাও বলছেন অনেকেই। ঘটনা যাইহোক চিড়িয়াখানায় যেকোন প্রাণীর ছবি তোলা নিষিদ্ধ। তবে এসবে আমার মাথা ব্যথা নেই। আসল ভাবনা হল পড়ে যাওয়ার পর প্রায় ১৫ মিনিট বাঘটি ছেলেটিকে আক্রমণ করেনি! সেই রোমহর্ষক ১৫ মিনিটে কি করার ছিল নিরব দর্শকদের!!? বিপদ আগাম সংবাদ দিয়ে আসেনা। তাই বন্য প্রাণী থেকে সাবধান থাকাই ভালো। তারপরও যদি এরকম অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেই যায় তো কি করার আছে তাই বলার চেষ্টা করছি। মনে রাখবেন এই লেখাটা শুধুমাত্র বিপদে পড়লেই প্রয়োগ করে দেখা যেতে পারে। কোন ভাবেই মনে করবেন না যে এইসব পদ্ধতি অবলম্বন করে বাঘের সামনে ঝাপিয়ে পড়বেন।
ট্রাংকুলাজার গান বা বন্দুক: ট্রাংকুলাইজার বন্দুক হচ্ছে বাঘসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী ধরার জন্য এক ধরনের বন্দুক। এই বন্দুকে গুলির পরিবর্তে চেতনাশক রাসায়নিক পদার্থ ভর্তি সিরিঞ্জ নিক্ষেপ করা হয়। এর ফলে মিনিটের মধ্যেই বাঘ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এই বন্দুক চিড়িয়াখানাতেও থাকে। তাই তারা এই বন্দুক ব্যবহার করতে পারতো। বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে জানা যায় মাত্র ৫ মিনিটেই চিড়িয়াখানার হাসপাতাল থেকে ট্রাংকুলাইজার আনা যেতো। যাইহোক আপনার সামনে এমন ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষকে সাথে সাথেই জানাতে পারেন।
পাথর নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকুন: ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল বাঘটা ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে ধরেছিল। শিকার করার তেমন ইচ্ছা তার ছিলনা। সাধারণত ক্ষুধার সীমা অতিক্রম না করলে এরা শিকার করে না। কিন্তু হঠাৎ করে পাথর নিক্ষেপ করার পর বাঘটি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শেষে যুবকটির ঘাড় পাকরে ধরে দূরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন বাঘাটির জন্ম হয়েছিল চিড়িয়াখানাটিতেই। তাই শিকার করার ক্ষেত্রে সে তেমন পারদর্শীও ছিলনা। পরিস্থিতি দেখেই সিদ্ধান্ত নিবেন পাথর নিক্ষেপ করবেন কিনা।
আগুনের ব্যবহার: পাথর নয় যেকোন জীবজন্তুকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য আগুন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেটাও হতে হবে দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে। ভয় দেখিয়ে প্রাণীদের রাগানো মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। মনে রাখবেন আপনার নিক্ষেপ করা একটা ছোট পাথরের টুকরা বাঘ তাড়ানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।
হঠাৎ বিকট শব্দের সৃষ্টি করা: সম্ভব হলে হঠাৎ করে বিকট শব্দের সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে আকস্মিক ভয়ের কারণে প্রাণীটি পালিয়ে যেতে পারে। শুধু শুধু চিৎকার চেচামেচি করলে হিতেবিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তবে মনে রাখা দরকার চিড়িয়াখানাসহ যেকোন প্রাণী অধ্যুষিত এলাকায় আতশবাজি, উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করা, অস্ত্র-বারুদ ব্যবহার করা নিষেধ।
মাংসাশী প্রাণী কিংবা বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে শিকারের স্বভাব সহজেই বিশ্বাস করার নয়। এদের পরম যত্নে রাখলেও যেকোন মুহূর্ত্বেই আপনার ঘাড় মটকে দিতে পারে। তাই আপনার উচিৎ হবে অধিকতর সাবধানতা অবলম্বন করে এদের সাথে কাজ করা।
লেখকঃ শিক্ষার্থী- চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়