ধলাগলা ছাতিঘুরুনি

ধলাগলা লেজনাচানি বা সাদাগলা লেজনাচানি বা ধলাগলা ছাতিঘুরুনি বা চাক দোয়েল (বৈজ্ঞানিক নাম: Rhipidura albicollis) (ইংরেজি: White-throated Fantail)  Rhipiduridae (রিপিডুরিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Rhipidura (রিপিডুরা) গণের এক প্রজাতির ছোট ছটফটে পাখি। ধলাগলা লেজনাচানির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সাদাগলার পাখা-লেজ (গ্রিক rhipis = পাখা, oura = লেজ; ল্যাটিন albus = সাদা, collis = গলার)। এরা বাংলাদেশের স্থানীয় পাখি। এদের দেশের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়।  আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত নয়।

ধলাগলা ছাতিঘুরুনি/ ধলাগলা লেজনাচানি -- ছবিঃ শাহাদাত ওমর ।
ধলাগলা ছাতিঘুরুনি/ ধলাগলা লেজনাচানি — ছবিঃ শাহাদাত ওমর ।

ধলাগলা লেজনাচানি ৯টি উপপ্রজাতি আছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশে ২ টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায় । এরা হল  ঃ R. a. albicollis ও  R. a. stanleyi

এই প্রজাতিটির ইংরেজি ও বাংলা নাম থেকেই এর শারীরিক গঠন ও স্বভাব-চরিত্র সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। ধলাগলা লেজনাচানি ছড়ানো লেজ ও ঝোলানো ডানার ছটফটে ছোট পতঙ্গ-শিকারী পাখি। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৭ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ডানা ৮ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১.৫ সেন্টিমিটার, পা ২ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০ সেন্টিমিটার মতো হয়। এদের ওজন খুবই কম মাত্র ১১ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির আকার ও চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির থুতনি ও গলা সাদা। এছাড়া দেহের সর্বত্রই স্লেট ধূসর রঙের।

ধলাগলা ছাতিঘুরুনি/ ধলাগলা লেজনাচানি -- ছবিঃ শাহাদাত ওমর ।
ধলাগলা ছাতিঘুরুনি/ ধলাগলা লেজনাচানি — ছবিঃ শাহাদাত ওমর ।

ডানা, মাথার চাঁদি, ঘাড়ের পিছনের অংশ ও কাঁধ ঢাকনি স্লেট ধূসর বর্ণের। লেজ কালচে-স্লেট রঙের। লেজ ছড়ালে এর কেন্দ্রের পালক জোড়া ছাড়া আগা স্পষ্ট সাদা রঙ দেখায়। মুখে সাদা পট্টি ও কান-ঢাকনির ওপর সরু সাদা ভ্রু-রেখা দৃশ্যমান। চোখের রঙ বাদামি। ঠোঁট কিছুটা বাদামি-কালো। পা, পায়ের পাতা ও নখ শিঙ-বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ অপেক্ষাকৃত বাদামি। আর ডানার গোড়ার পালকের আগা ও ডানার পালক-ঢাকনি লালচে। উপপ্রজাতিভেদে এদের আকার ও রঙে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

ধলাগলা ছাতিঘুরুনি/ ধলাগলা লেজনাচানি -- ছবিঃ শাহাদাত ওমর ।
ধলাগলা ছাতিঘুরুনি/ ধলাগলা লেজনাচানি — ছবিঃ শাহাদাত ওমর ।

ধলাগলা ছাতিঘুরুনি সাধারণত হালকা বন, ছায়াঘেরা ঝোপ-ঝাড়, বাঁশবন ও বাগানে বিচরণ করতে দেখা যায়। সচরাচর একা কিংবা জোড়ায়-জোড়ায় চলাফেরা করে। গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে ডাইভ দিয়ে পোকা শিকার করতে এরা ওস্তাদ। উড়ন্ত অবস্থায় এক স্থানে স্থির ভাবে অনেক্ষণ থাকতে পারে। গাছে গাছে বিরামহীন ভাবে উড়ে উড়ে শিকার খোঁজে। এরা পুরোপুরি পতঙ্গভূকপাখি খাদ্যতালিকায় রয়েছে নানা জাতের ডানাওয়ালা পতঙ্গ। খাবার খোঁজার সময় এরা অবিরাম দেহ ঘোরায়, লেজ মেলে ধরে ও ডানা নামায়।

ধলাগলা ছাতিঘুরুনি/ ধলাগলা লেজনাচানি -- ছবিঃ শাহাদাত ওমর ।
ধলাগলা ছাতিঘুরুনি/ ধলাগলা লেজনাচানি — ছবিঃ শাহাদাত ওমর ।

আগস্ট মাস এদের প্রধান প্রজনন মৌসুম।এ সময় এরা একাধিক বার বাসা তৈরি করে। উঁচু কঞ্চি বা গাছের চেরা ডালে বাসা তৈরি করে। বাসা অনেকটা পেয়ালাকৃতির হয়ে থাকে। ভূমি থেকে সাধারনত বাসার উচ্চতা ২ থেকে ৩ মিটার উঁচুতে হয়। বাসার ভিত্তি হল পত্রগুচ্ছ । বাসার অন্যান্য উপকরণ হল ঘাস, আঁশ ও শুকনো তৃণ। এছাড়া বাসায় মাকড়সার জালের আস্তর থাকে। কেবল স্ত্রী লেজনাচানি বাসা বানায়। বাসা বানানো হলে ৩টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা রঙের হয়ে থাকে। ডিমের মাঝখানে বাদামি ছিটের বলয় থাকে। ডিমের মাপ ১.৭ × ১.৩ সেন্টিমিটার। ১২-২৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। বাবা-মা উভয়ে ছানাদের খাওয়ানোর ভার নেয়। ১৩-১৫ দিনে ছানারা বাসা ছাড়ে।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া বাংলা 

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ শাহাদাত ওমর, বন্যপ্রাণী গবেষক, সৌখিন আলকচিত্রী 

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics