অসময়ের মুষলধারা
মনিজা মনজুর
কনকনে শীতের রাতে কম্বল গায়ে উষ্ণতার চাদরে মুড়ে আছেন। হঠাৎ দমকা বাতাস আর ঝড়ো হাওয়া। শুরু হলো মেঘের গর্জন। নেমে আসলো ঝুম বৃষ্টি। এই যা! এ কেমন আবহাওয়া! এ কি শীতকাল নাকি বর্ষাকাল! দিনের বেলা কখনো আবার ভ্যাপসা গরম! তাহলে কি গ্রীষ্মকাল? কিছুদিন আগে থেকেই আমরা সবাই প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণে হতভম্ব হচ্ছি। এর কারণ কী? কেনই বা প্রকৃতি মন বদলাচ্ছে বারবার?
সাধারনত মাসের শুরুতে অল্প বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু শীতকালে শিলাবৃষ্টি হওয়াটা একটু অস্বাভাবিক বটে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবেশের বিরূপ আচরণ অতিমাত্রায় লক্ষণীয়। শুধু অসময়ের বৃষ্টিপাত না, বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিচ্ছে তাপমাত্রার অসামঞ্জস্যতা। গত কিছুদিনের উষ্ণ তাপমাত্রাই মূলত এই বৃষ্টিপাতের কারণ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এর কারণ নয়। পৌষের শেষে শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। কিন্তু তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে মোটামুটি বেশ আরামদায়ক ভাবেই কেটে গেছে পৌষ মাস। বিপত্তি দেখা দিয়েছে মাঘের শুরুতে, তাও আবার বৃষ্টি দিয়ে। যে বৃষ্টি কি না নভেম্বর মাসে হওয়ার কথা! বৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনের বার্তার সাথে সাথে বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতাও।
২০১৪ সাল ইতিমধ্যেই উষ্ণতম বছর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কেন জানেন? জীবাশ্ম জ্বালানীর ফলে উৎপন্ন গ্যাস এবং নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এটি চলে আসছে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে। ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারণ করছে এবং বিরূপ আচরণের সৃষ্টি করছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতার পরিমাণ কি ১.৫ ডিগ্রী নাকি ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হবে? এর সহনীয় মাত্রাই বা কতটুকু হতে পারে? এ ব্যাপারে “ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ” (আইপিসিসি), এর ভাইস চেয়ারম্যান জ্যাঁ প্যাসকেল ভ্যান পার্সেলি বলেছেন, ১.৫ ডিগ্রীর মধ্যে একে সীমাবদ্ধ না রাখলে বাংলাদেশের মত দেশগুলো খুব শীঘ্রই পানির নিচে তলিয়ে যাবে। প্রায় ১৭% মানুষ আগামী শতাব্দীর মধ্যেই এই ভয়াবহতার শিকার হবেন।
বৈশ্বিক উষ্ণতার হার কমিয়ে আনা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। নতুবা প্রকৃতির বিরূপ আচরণ আরো ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে।