বিশ্ব বিড়াল দিবস; আদুরে ভালোবাসা নিরন্তর বিদ্যমান থাকুক!
লিসান আসিব খান
এক দিন বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল একটি বিড়াল । পথে তার সাথে দেখা হল একটি ইঁদুরের । বিড়ালটির মুখ ভার দেখে ইঁদুর তাকে প্রশ্ন করল, সে ঘর ছেড়ে বনে কী করছে ? বিড়ালটি তখন বলল যে , ” ইট- কাঠের শহরে আজ মানুষ যেখানে তার নিজের জীবনের দিকে তাকানোর সময় পায় না , সেখানে আমার মত একটা পোষা প্রাণী নিতান্তই বোঝা , তাই চলে যাচ্ছি অজানা কোন এক জায়গায় ।
বিড়ালটি কি সত্যি নতুন কোন এক পথের সন্ধান পাবে ? নাকি পথ খুঁজতে খুঁজতে একদিন নিজেই হারিয়ে যাবে এই পৃথিবী থেকে ? কোন দিন কি তার খবর নিবে কেও ?
না ! এত বিশাল পৃথিবীতে যেখানে মানুষ মানুষের খবর নেয় না সেখানে বিড়ালের খবর নেওয়ার কে আছে বলুন ?
ধারণা করা হয় বিড়ালের সাথে মানুষের সখ্যতা ৫৩০০ বছরের পুরনো । শত কর্ম ব্যস্ততার মধ্যে মানুষের সব থেকে আদুরে লোমশ প্রাণীটিকে কাছে পাবার জন্য , আরও একটু বেশি সময় দেওয়ার জন্য ২০০২ সালে সর্বপ্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার (আইএফএডব্লিউ)’ -এর তত্ত্বাবধানে বিশ্ব বিড়াল দিবস পালন করা হয় । সেই থেকে প্রতি বছর ৮ আগস্ট সারা বিশ্বে ” বিশ্ব বিড়াল দিবস ” হিসেবে দিনটি পালন করা হয়।
বিশ্ব বিড়াল দিবসের মূলত উদ্দেশ্য হল এই আদুরে পোষা প্রাণীটি সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতন করে তোলা । এছাড়া বিশ্বের সকল বিড়াল প্রেমীদের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্কে সেতু বন্ধন করে এই দিবসটি ।
বিড়ালের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান । ১৩ জুলাই ১৮৭১ – পৃথিবীতে প্রথম বিড়াল প্রদর্শনী হয় , প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি আজ বিশ্ব বিড়াল দিবসের ১৩ বছর পূর্তিতেও আমরা শুনতে পাচ্ছি যে ২০২০ সালের মধ্যে দুই লাখেরও বেশি বন্য বিড়ালকে হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়েছে অষ্ট্রেলিয়া প্রশাসন – যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক । (সুত্র : দ্যা গার্ডিয়ান )
‘অ্যামেরিকান পেট প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন (এপিপিএমএ)’ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে আমেরিকাতে প্রায় ৭৩ মিলিয়ন গৃহপালিত বিড়াল আছে । বাংলাদেশে বিড়ালকে বাঘের মাসী বলা হয় । দুধ, মাছ, ছোট পাখি, হাঁস মুরগির বাচ্চা, ইঁদুর ইত্যাদি এর খাদ্য । ইঁদুর মারার জন্য পোষে অনেকে। এরা ১০”-১২” উচ্চতাবিশিষ্ট এবং ১৪”-১৮” পর্যন্ত লম্বা হয়।
বিড়াল হারিয়ে গেলে সে নিজ থেকে চিনে বাড়িতে ফিরতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এ ধরণের সক্ষমতাকে সূর্যালোকের কৌণিক হিসাব, পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, এবং পিএসআই ট্র্যাভেলিং-এর সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করেন।
২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রাণী সুরক্ষায় কাজ করছে ‘বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ (অভয়ারণ্য ) নামের একটি সংগঠন। অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান রুবাইয়া আহমেদ-এর তত্ত্বাবধানে যেখানে আশ্রয় মিলছে আদুরে অনেক বিড়াল ছানার। গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সংস্থাটি ২০১২ সালে ‘এইচএসইউএস অ্যানিমেল অ্যাডভোকেট অব দ্যা ইয়ার’ পুরষ্কার ও ২০১০ এবং ২০১২ সালে ‘এইচএসআই অ্যানিমেল কেয়ার এক্সপো স্কলারশিপ’ লাভ করে।
এছাড়া ‘অ্যানিমেল কনসার্ন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ নামের একটি ক্লাব ২০১৪ সাল থেকে বিড়াল সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের সেমিনার , প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে মানুষকে বিড়াল সম্পর্কে সচেতন করে তোলার কাজ করে যাচ্ছে । এবং ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ গ্রুপটি রোগাক্রান্ত বিড়ালদের পরিচর্যার পাশাপাশি অসহায় বিড়ালদের জন্য নতুন বাসস্থানের সন্ধান করে দেওয়ার কাজ করে থাকে।